ব্রেক্সিট থেকে বিশৃঙ্খলা

সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২২ | ২১:১৭
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যেতে ২০১৬ সালের ২৩ জুন ব্রিটেনে অনুষ্ঠিত গণভোটের (ব্রেক্সিট) পর থেকেই দেশটিতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা চলছে। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সেই সময় অভিবাসী ঠেকাতে এই উদ্যোগ নিলেও পরবর্তী সময়ে যত সরকারই ক্ষমতায় এসেছে, তাঁদের স্থায়িত্ব ছিল ভঙ্গুর। অল্প সময়ের ব্যবধানেই তাঁদের পদ ছাড়তে হয়েছে রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থায়। এমনকি ক্যামেরনকেও পদত্যাগ করতে হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার মাত্র দেড় মাসের মাথায় ক্ষমতা ছাড়তে হলো লিজ ট্রাসকে। অবশ্য শুরু থেকেই ব্রেক্সিটের কারণে দেশটিতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা করেছিলেন বিশ্লেষকরা।
যুক্তরাজ্যে গত ৬ বছরে চারজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। বিদায়ও নিয়েছেন স্বল্প সময়ে। কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ডেভিড ক্যামেরন ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর পদত্যাগের পর ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন পার্টির আরেক নেতা তেরেসা মে। এর আগে তিনি ক্যামেরন সরকারে ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বিদায়ের পর বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন। কনজারভেটিভ পার্টির এই নেতা দলীয় বিদ্রোহের মুখে সরে দাঁড়ান। এরপর গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন কনজারভেটিভ নেতা লিজ ট্রাস। কিন্তু দেড় মাসের মাথায় তাঁকেও বিদায় নিতে হলো অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতায়।
ব্রিটেনের এই অস্থিতিশীলতা নিয়ে অনেকে বিদ্রুপ করছেন। যুক্তরাজ্যে যখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক টালমাটাল অবস্থা, চলছে প্রভাবশালী মন্ত্রীদের পদত্যাগ আর বরখাস্ত- তখন 'কেমন চলছে ব্রেক্সিট?' এমন প্রশ্ন তুলেছেন বেলজিয়ামের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ইউরোপপন্থি গাই ভারহফস্ট্যাড। গত শনিবার টুইটে তিনি বলেছেন, এই বিশৃঙ্খলা ২০২২ সালে শুরু হয়নি, হয়েছে ২০১৬ সালে। এর মাধ্যমে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ব্রিটেনের গণভোটের প্রসঙ্গও টানেন তিনি।
এদিকে, অপর ইউরোপীয় দেশ স্পেনের সমাজতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের মন্তব্যেও একই ইঙ্গিত ছিল। তিনি গত সপ্তাহে ব্রিটেনের সংকট উন্মোচিত হওয়ার পর ট্রাসের কর প্রস্তাবের নিন্দা করেছিলেন। স্পেনের পার্লামেন্টে তিনি বলেন, আমরা যুক্তরাজ্যে চরম অস্থিরতা দেখছি। কেউ কেউ যুক্তরাজ্যের এই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতাকে বিশৃঙ্খল ইতালির মতোই মনে করছেন।
এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন ইউরোপের বাইরের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। তিনি ব্রিটেনের ৪৫% শীর্ষ আয়কর হার বাতিল করার পরিকল্পনাকে 'ভুল' বলে অভিহিত করেন। এমনকি ব্রিটেনের কট্টর রক্ষণশীল সংবাদপত্র টেলিগ্রাফ যা ব্রেক্সিট গণভোটকে সমর্থন করেছিল, গত রোববার এক কলামে স্বীকার করেছে, অর্থনৈতিক লক্ষ্য ব্যর্থ হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের আধিক্য দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় এ নিয়ে ব্রিটিশ নাগরিকদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিয়ম অনুযায়ী ইইউভুক্ত ২৮টি দেশের নাগরিক ভিসা ছাড়াই এক দেশ থেকে আরেক দেশে প্রবেশ করার অধিকার রাখে। সে কারণেই প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ সরকার তার প্রথম মেয়াদে ইইউর বাইরের দেশ থেকে আসা অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে সক্ষম হলেও ইইউভুক্ত নাগরিকদের প্রবেশ ঠেকাতে পারেনি।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দ্বিতীয় মেয়াদে ইইউভুক্ত দেশের নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশ নিরুৎসাহিত করতে চার বছরের জন্য সুবিধা ভাতা বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেন ক্যামেরন। এতে খুশি হতে পারেননি ইইউভুক্ত দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা।
গণভোটে ইইউতে ছাড়ার পক্ষে ৫২ শতাংশ ব্রিটিশ ও বিপক্ষে ৪৮ শতাংশ নাগরিক ভোট দেন। গণভোটে ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের রায় পাওয়ার পর ২০১৬ সালের ২৪ জুন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ক্যামেরন। সূত্র: রয়টার্স ও গার্ডিয়ান।
- বিষয় :
- ব্রেক্সিট
- বিশৃঙ্খলা
- ইউরোপীয় ইউনিয়ন
- লিজ ট্রাস
- পদত্যাগ