উদ্ভাবন
বায়ু পরিশোধনে অভিনব টাওয়ার

ভারতের দিল্লিতে বায়ুদূষণ রোধে বিশেষ স্থাপনা -সিএনএন
তুহিন তৌহিদ
প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৩ | ১৮:০০
আমরা আপাদমস্তক ডুবে আছি বাতাসের অদৃশ্য মহাসমুদ্রে। এ বাতাস ভালো থাকলে আমরা সুস্থ থাকি। দূষিত হলে তা নানা রোগের কারণ হয়। বিশেষ করে শ্বাসতন্ত্রের রোগের অন্যতম কারণ বায়ুদূষণ। পশ্চিমের দেশগুলোর তুলনায় ঘনবসতিপূর্ণ এশিয়ার দেশগুলোতে এ দূষণ বেশি। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের মতো জনবহুল দেশে বায়ুদূষণ বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসছে।
বায়ুদূষণ ঠেকাতে ভারত নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে গত বছর নয়াদিল্লির সিটি পার্কে স্থাপন করা হয়েছে বায়ু পরিশোধন টাওয়ার। সুদৃশ্য এ স্থাপনার ইট-পাথরের জালির ভেতরে পরিশোধন যন্ত্র বসানো। সাদা রঙের জালি ভেদ করে টাওয়ারের ভেতরে প্রবেশ করে বাতাস। এর উচ্চতা ১৮ ফুট। এর নির্মাণকারীরা বলছেন, টাওয়ারটি বাতাসের নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড এবং ভয়ানক কণা শোষণ করতে সক্ষম। এটি প্রতিদিন ৬ লাখ কিউবিক মিটার বাতাস পরিশোধন করতে পারে।
ব্যতিক্রমী টাওয়ারটি প্রতিষ্ঠা ও নকশা করেছে স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান স্টুডিও সিম্বিওসিস। ভারত ছাড়াও জার্মানিতে তাদের কার্যালয় আছে। প্রতিষ্ঠানের সহপ্রতিষ্ঠাতা অমিত গুপ্ত ও বৃত্ত গুপ্ত দম্পতি বলেন, বদ্ধ এলাকায় আন্তঃপাখাচালিত তাঁদের এ যন্ত্র ৬৫৬ থেকে ১ হাজার ৬৪০ ফুটের বাতাসের তেজস্ক্রিয় ও দূষিত উপাদান শোষণ করতে পারে। তবে খোলা স্থানে এটি ৩২৮ থেকে ১ হাজার ১৪৮ ফুটের বাতাস পরিশোধনের সক্ষমতা রাখে।
অমিত গুপ্ত এ পরিশোধন যন্ত্রের যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখছেন। তিনি জানান, তাঁরা যন্ত্রটি সম্পর্কে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এরই মধ্যে তাঁরা উজবেকিস্তান, ফ্রান্স ও নিউজিল্যান্ডের ক্রেতাদের সঙ্গে যন্ত্রটি বিক্রির বিষয়ে কথা বলেছেন। স্টুডিও সিম্বিওসিস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি নির্মাণ কোম্পানি ভবন নির্মাণের
এলাকায় ধুলা ও ক্ষতিকর বস্তুকণা ঠেকাতে ৪০টি টাওয়ারের ক্রয়াদেশ দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে।
বৃত্ত গুপ্ত বলেন, ‘আমি মনে করি, তারা এগুলো পার্ক এবং জনবহুল এলাকায় স্থাপন করতে পারে, যেখানে অবসর সময় কাটানোর জন্য লোকজন জড়ো হন।’ তিনি জানান, যেসব স্থানে গৃহহীন লোকজন ঘুমান, সেসব স্থানে এসব টাওয়ার স্থাপন অত্যন্ত ফলপ্রসূ হতে পারে।
চিকিৎসাবিষয়ক জার্নাল দ্য ল্যানসেটের গবেষণায় দেখা গেছে, কেবল ২০১৯ সালে ভারতে বায়ুদূষণের কারণে ১৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নয়াদিল্লি প্রতিদিনই যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। শস্য পোড়ানো ও কয়লাভিত্তিক প্রকল্প থেকেও অনেক ধোঁয়া নির্গত হয়। এগুলো বাতাসের মানকে খারাপ করে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হেলথ এফেক্ট ইনস্টিটিউট জানায়, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২.৫) রয়েছে ভারতের রাজধানী শহরে।
অমিত ও বৃত্ত দম্পতি জানান, লন্ডন থেকে নয়াদিল্লিতে স্থানান্তরিত হওয়ার পর তাঁরা যে বিরূপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন, সেটাই তাঁদের এ আবিষ্কারে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাঁরা বলেন, তাঁদের মূল উদ্দেশ্য বায়ু পরিশোধন ছিল না। তাঁরা স্থাপত্য নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু নয়াদিল্লির বাতাসের অবস্থা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এ কারণে তাঁদের মাথায় এ ধরনের টাওয়ার স্থাপনের চিন্তা আসে।
টাওয়ারটির ভেতরে বাতাস পরিশোধনের জন্য বসানো হয়েছে বৈদ্যুতিক পাখা। এটি বাতাস পরিশোধন করলেও কিছুটা দূষণও করছে। টাওয়ারের ভেতরে রয়েছে পরিশোধন ফিল্টার। এটি প্রতি ৩ থেকে ৯ মাসের মধ্যে পরিবর্তন করতে হয়। টাওয়ার থেকে ৭৫ ডেসিবেল শব্দ বের হয়। অমিত গুপ্ত মনে করেন, পুরো দিল্লিতে বাতাস পরিশোধনের জন্য কমপক্ষে ১০০টি পরিশোধন টাওয়ার প্রয়োজন হবে। সূত্র: সিএনএন।
- বিষয় :
- উদ্ভাবন
- বায়ু পরিশোধনে অভিনব টাওয়ার