যে কারণে চুমুর প্রতিযোগিতা বন্ধ করে গিনেস রেকর্ড

ছবি: সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৩ | ০৯:২৭ | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩ | ০৯:২৭
পৃথিবীতে অদ্ভুত সব বিষয়ের জন্য সৃষ্টি হয় বিশ্ব রেকর্ড। তেমনই একটি বিষয় ছিল 'দীর্ঘকালীন চুমু' বা 'লংগেস্ট কিস'। একসময় এই প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নাম উঠতো গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। তবে এটি শেষ বার হয়েছিল ২০১৩ সালে। এরপর থেকে গিনেস কর্তৃপক্ষ 'লংগেস্ট কিস'র রেকর্ড গড়ার প্রতিযোগিতা বন্ধ করে দেয়।
জানা গিয়েছে, ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছিল এই প্রতিযোগিতা। এর পাশাপাশি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের বর্তমান আপডেট হওয়া পলিসির সঙ্গেও প্রতিযোগিতার নিয়মনীতি আর খাপ খাচ্ছিল না, তৈরি হচ্ছিল দ্বন্দ্ব। সেই কারণেই দীর্ঘক্ষণ ধরে চুম্বনের মাধ্যমে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার প্রতিযোগিতা প্রায় ১০ বছর আগেই বন্ধ করে দেয় গিনেস কর্তৃপক্ষ।
দীর্ঘতম চুম্বনের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের নিয়মগুলো-
একটানা চুম্বনরত অবস্থায় থাকতে হতো দুই প্রতিযোগীকে। শুধু তাই নয়। একে অন্যের সঙ্গে সর্বক্ষণ ঠোঁট ছুঁইয়ে রাখতে হতো। যদি একবারও ঠোঁটের স্পর্শ ছেড়ে যাওয়ার উপক্রম হতো তাহলেই প্রতিযোগিতা থেকে বাতিল হয়ে যেতেন যুগল। প্রতিযোগিতা চলাকালীন প্রতিযোগীরা স্ট্র-এর মাধ্যমে তরল কিছু পান করার অনুমতি পেতেন। কিন্তু সেই সময়েও একে অন্যের ঠোঁটের সংস্পর্শ বজায় রাখতে হতো।
দীর্ঘক্ষণ চুম্বনরত অবস্থায় যুগলকে অবশ্যই জেগে থাকতে হতো, ঘুমিয়ে পড়লে চলত না। প্রতিযোগিতার মধ্যে চুম্বনরত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে হতো যুগলকে। কোনও ভাবেই কোনও রকম সাহায্যকারী জিনিস ব্যবহারের অনুমতি ছিল না।
কোনও ভাবেই বিশ্রাম বা বিরতি নেওয়ার সুযোগ থাকত না প্রতিযোগীদের কাছে। এমনকি বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন পড়লে সেখানেও যেতে হতো চুম্বনরত অবস্থায়। ডায়পার জাতীয় কোনও প্রোডাক্ট ব্যবহারের অনুমতি ছিল না।
সুতরাং নিয়মাবলী দেখেই বুঝা যাচ্ছে, চুম্বন প্রতিযোগিতা শুনতে রোমান্টিক লাগলেও আদতে এই প্রতিযোগিতা বেশ বিপজ্জনক। কোনো বিরাম নেই। বিশ্রাম নেই। শুধু এক নাগাড়ে একে অন্যকে চুমু খেয়ে যেতে হবে।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, এতে অংশগ্রহণের ফলে প্রতিযোগীরা স্লিপ ডিপ্রাইভেশন ও সাইকোসিসের মতো রোগে আক্রান্ত হতেন। নিজের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে চুমু খাওয়ার ফলে প্রতিযোগীরা এমন অসুস্থ হতেন।
দীর্ঘক্ষণ চুমু খেয়ে মাশুল দিতে হয়েছে যাদের-
১৯৯৯ সালে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন ইজরায়েলের কারমিত জুবেরা এবং ড্রোর অরপাজ। ৩০ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট ধরে চুম্বনরত অবস্থায় ছিলেন তাঁরা। এর ফলে প্রায় অচেতন হয়ে গিয়েছিলেন এই দু'জন। প্রতিযোগিতা জিতলেও তাঁদের নিয়ে হাসপাতালে ছুটতে হয়েছিল। সেখানে চরম ক্লান্তির জন্য চিকিৎসা নিতে হয়েছিল ইজরায়েলের এই যুগলের।
২০০৪ সালে ইতালির ৩৭ বছরের যুবক আন্দ্রেয়া সার্টি নিজের বান্ধবী আনা চেনকে নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন এই প্রতিযোগিতায়। ৩১ ঘণ্টা ১৮ মিনিট ধরে একে অন্যের সঙ্গে চুম্বনরত ছিলেন তাঁরা। প্রতিযোগিতা শেষে অক্সিজেন দিতে হয়েছিল যুগলকে।
তবে সবচেয়ে মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছিল ২০১১ সালের প্রতিযোগিতায়। চুম্বন শেষ হওয়ার মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই মৃত্যু হয়েছিল এক নারীর।
দীর্ঘতম চুম্বনের সর্বশেষ বিশ্ব রেকর্ডটি হয়েছিল ২০১৩ সালে। তাদের চুম্বন ৫৮ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট স্থায়ী ছিল। থাইল্যান্ডের দম্পতি এক্কাচাই এবং লাকসানা তিরানারাত এই রেকর্ডটি গড়েন। এই দম্পতি ২০১১ সালের প্রতিযোগিতাতেও জয়লাভ করেছিলেন।