ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ঝুঁকির মুখে পিএমএল-এনের রাজনীতি

ঝুঁকির মুখে পিএমএল-এনের রাজনীতি

পিএমএল-এনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন শেহবাজ শরিফ ও মরিয়ম নওয়াজের হাতে

এ কে এম ওবায়দুর রহমান

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১১:১৪ | আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১১:৫৭

পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন শেহবাজ শরিফ ও মরিয়ম নওয়াজের হাতে। পিএমএল-এন ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) আনুষ্ঠানিকভাবে জোটবন্ধ হয়ে কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। স্থিতিশীল জোট সরকার গঠনের জন্য দুই দলেরই প্রয়োজনীয় আসন রয়েছে। এমকিউএম-পি, আইপিপি, পিএমএল-কিউ এবং বিএপি’র এই জোট সরকারে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পিএমএল-এন-এর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের জাতীয় পরিষদে ২০০ জনের বেশি সদস্য থাকবে। পিএমএল-এন সভাপতি শেহবাজ শরীফকে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করা হয়েছে। পিপিপি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যোগ দেবে কিনা তা এই মুহূর্তে স্পষ্ট নয়। তবে পিএমএল-এনের জোট সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত তার রাজনীতিকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। কারণ ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর গত ১৬ মাসের জোট সরকারের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। এই সরকারে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ভালো পারমরম্যান্স দেখাতে পারেনি দলটি। এর প্রভাব পড়েছে ভোটে। পিএমএল-এন তার শক্ত ঘাঁটি পাঞ্জাবে হারিয়েছে সমর্থন। গত সরকারের আমলে দলটির রাজনৈতিক শক্তিও অনেকটা দুর্বল হয়ে গেছে। 

যদিও পিএমএল-এন জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে, এই অর্থনৈতিক সঙ্কট ও মুদ্রাস্ফীতির জন্য দায়ী ছিল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই)। কিন্তু অনেক ভোটারকে তা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে। অনেকেই এই ‘গল্প’ মানতে অস্বীকার করে এবং নির্বাচনে পিএমএল-এনকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। এতে পিএমএল-এন তার শক্ত ঘাঁটি পাঞ্জাবে অনেক আসন হারিয়েছে। সেখানকার অনেক আসনেই দলটির ভোটব্যাঙ্ক কমে যাচ্ছে। খাইবার পাখতুনখাওয়া ও হাজারার ক্ষেত্রেও একই চিত্র। এই দুটি জায়গায়ও এক সময় শক্ত ঘাঁটি ছিল পিএমএল-এনের। 

পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পাঞ্জাবে পিএমএল-এন-কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। ভোটের চিত্রে পিএমএল-এন ও পিটিআইয়ের মধ্যে আগের ব্যবধান কমে এসেছে। পিটিআই মধ্য পাঞ্জাবে বড় ধরনের সমর্থন পেয়েছে। মধ্য পাঞ্জাবের অনেক জেলায় পিএমএল-এন-এর শোচনীয় পরাজয় দলটির জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় পাঞ্জাবে পিএমএল-এনের ঘুরে দাঁড়ানোই মূল চ্যালেঞ্জ। এটি মূলত নির্ভর করবে শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন নতুন জোট সরকারের কর্মক্ষমতার ওপর। যদি সরকার এই চ্যালেঞ্জ উতরাতে না পারে তাহলে দলের জনসমর্থনের ভিত্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা আরও ক্ষয় হতে থাকবে। 

পিএমএল-এন এখানে বড় জুয়া খেলেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কর্মসূচির আওতায় সব ধরনের কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও যদি সরকার তার পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে ব্যর্থ হয় তবে তা গুরুতর রাজনৈতিক পরিণতির মুখোমুখি ফেলবে। সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে- প্রথম দুই বছর নতুন সরকারের জন্য কঠিন হতে যাচ্ছে।

নতুন সরকারের প্রথম কাজটি হবে ৬০০ কোটি রূপীর একটি নতুন আইএমএফ প্রোগ্রাম নিয়ে আলোচনা করা। এই আলোচনায় সরকারকে কঠোর অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে আইএমএফ। জনগণকে অতি প্রয়োজনীয় ত্রাণ দেওয়ার জন্য সরকারের সুযোগ কমে আসবে। মূল্যস্ফীতি, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বৃদ্ধি সরকারকে আরও অজনপ্রিয় করে তুলতে পারে।

স্বল্প মেয়াদেই পিটিআই আরও জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হতে পারে। গ্যাস, বিদ্যুত ও পেট্রোলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ করবে। শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সরকারের মূল চাবিকাঠি হলো- পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করা। কারণ শ্রমিক শ্রেণি ও দরিদ্রদের অর্থবহ ত্রাণ সহায়তার জন্য সরকারের পাঁচ বছর সময় প্রয়োজন। সরকার যদি পাঁচ বছর পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয় এবং প্রথম দুই বছরের মধ্যে পতন হয়, তাহলে পিএমএল-এন বড় সমস্যায় পড়বে। মনে হচ্ছে- কেন্দ্রীয় সরকার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পেট্রোলের দাম ব্যাপকভাবে কমাতে এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠীকে ভর্তুকি দেওয়ার অবস্থানে থাকবে না।

তৃতীয় বছরে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার আইএমএফ প্রোগ্রাম সফলভাবে সম্পন্ন এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার পরে জনগণকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার অবস্থানে থাকবে। প্রথম দুই বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তৃতীয় বছরে এটি গতি বাড়তে পারে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে সরকারের উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার প্রয়োজন হবে।

অন্যদিকে পিএমএল-এন পাঞ্জাবে সরকার গঠন করেছে এবং মরিয়ম নওয়াজকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেছে। তিনিই হবেন পাঞ্জাবের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। মরিয়ম নওয়াজের নেতৃত্বাধীন পাঞ্জাব সরকারের কর্মক্ষমতাও পাঞ্জাবে দলটির হারানো অবস্থান পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মরিয়ম তার সরকারের জন্য একটি উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা ঘোষণা করেছেন। যদি তিনি তার প্রতিশ্রুতি এবং প্রতিশ্রুতির অর্ধেকও পূরণ করতে সফল হন তবে এটি একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে। যদি পাঞ্জাব সরকার জনগণকে কিছুটা ত্রাণ দিতে এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে সংস্কার করতে সফল হয়, তাহলে পিএমএল-এন আবার শক্তিশালী হবে। তাই শুধু পাঞ্জাবেই নয়, কেন্দ্রেও অনেক কিছু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

শেহবাজ শরীফ ও মরিয়ম নওয়াজ উভয়ের জন্য সফলতার বিকল্প নয়। উভয়ের লক্ষ্য থাকবে- সুশাসন, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন এবং সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাদের প্রতিপক্ষ ও প্রতিযোগীদের ছাড়িয়ে যাওয়া। কারণ পিএমএল-এনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন শেহবাজ শরিফ ও মরিয়ম নওয়াজের হাতে।

যদি দুজনেই ভালো পারফরম্যান্স করতে ব্যর্থ হন তাহলে পরবর্তী নির্বাচনে দল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। সুশাসনে মনোনিবেশ করতে এবং জনগণের সমস্যা সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় ও পাঞ্জাব উভয় সরকারকেই দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দরকার হবে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা উভয় সরকারের জন্য আরও সমস্যা তৈরি করবে।

পিটিআই একটি বিরোধী দল হিসেবে সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য কেন্দ্রীয় বা পাঞ্জাব সরকারের দেওয়া প্রতিটি সুযোগ ব্যবহার করবে। উভয় সরকারের জন্য সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার জন্য এটি যেকোনো মোড় নিতে পারে। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য, পিএমএল-এনকে কেবল মিত্র ও জোটের অংশীদারদের খুশি রাখতে হবে না বরং বিরোধী দলগুলোর সঙ্গেও গঠনমূলকভাবে জড়িত থাকতে হবে। খবর-জিও টিভি

আরও পড়ুন

×