ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বাগড়া দিয়েছে জাতিসংঘ, দাবি ইসরায়েলের

গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বাগড়া দিয়েছে জাতিসংঘ, দাবি ইসরায়েলের

হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতির সমঝোতা চলাকালীন গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। ছবি- এএফপি

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৪ | ১৬:৩৭

গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছিল বেশি কিছুদিন ধরে। এরমধ্যেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়। ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, জাতিসংঘের এই পদক্ষেপের কারণে ভেস্তে গেছে হামাসের সাথে তাদের যুদ্ধবিরতির আলোচনা। খবর- বিবিসি

যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিশরের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যে যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত আলোচনা চলছিল, তা প্রত্যাখ্যান করে হামাস। প্রত্যাখ্যান করার পর হামাস জানায়, তারা চায় গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ,গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ অপসারণ এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের নিজ গৃহে ফেরার পরিস্থিতি। 

হামাসের এই বিবৃতির আগেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়। এক্ষেত্রে  প্রথমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দেওয়া থেকে বিরত ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এতে প্রস্তাবটি পাস হয়ে যায়। এ নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চটেছে ইসরায়েল। প্রস্তাবনা পাসের পরপরই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, তারা আগের অবস্থান থেকে স্পষ্টতই পিছু হটে গেছে।

স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চেয়ে হামাসের বক্তব্যকেও প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অফিস থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, তারা হামাসের অবাস্তব দাবি মেনে নেবে না। এই দাবির মাধ্যমে দেখা গেছে হামাস আসলে সমঝোতায় আগ্রহী নয়। আর এ থেকে আরও বোঝা যায় জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে এ সমঝোতায় ক্ষতি হয়েছে। হামাসকে নির্মূল করা, তাদের কবজা থেকে সব জিম্মিকে উদ্ধার, এবং ভবিষ্যতে গাজা যেন ইসরায়েলের ক্ষতি না করতে পারে এসব লক্ষ্যে অটল থাকার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, ইসরায়েলের বিবৃতি প্রায় পুরোটাই ভুল। জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হওয়ার আগেই আলোচনায় হামাসের দাবি প্রস্তুত ছিল। তাই এ দুয়ের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই। এক্ষেত্রে ইসরায়েল অযথাই জাতিসংঘকে দুষছে। 

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর কর্মকর্তা বাসেম নাইম জানান, কাতারের রাজধানী দোহায় চলমান যুদ্ধবিরতির আলোচনা নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক ‘বিভ্রান্তিকর তথ্য’ প্রকাশ করা হয়েছে। ইসরায়েল শুধু জিম্মিদের মুক্তি চায়, যুদ্ধের অবসান চায় না।

কাতার জানিয়েছে, সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাবে তারা। তবে এই সমঝোতায় অংশগ্রহণ করা ইসরায়েলের কর্মকর্তারা কাতার থেকে চলে গেছেন। 
এদিকে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হওয়ার পর পরই ইরান সফরে গিয়ে হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়েহ বলেন, এই পদক্ষেপ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ইসরায়েল আসলে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে।

ফিলিস্তিনের বাসিন্দারা, বিশেষ করে গাজার বাসিন্দারা, অনেক চড়া মূল্য দিচ্ছে। কিন্তু এরপরেও জায়নবাদীরা নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারছে না। ইসরায়েল এখন কোণঠাসা পড়ছে, এমনকি গতকাল নিরাপত্তা পরিষদেও তা দেখা গেছে, ইসমাইল বলেন। 

নিরাপত্তা পরিষদের ওই প্রস্তাবটি দেরিতে এসেছে এবং এতে ফাঁকফোকর আছে, কিন্তু তারপরেও এর প্রশংসা করেন ইসমাইল। তিনি বলেন, এ থেকে বোঝা যায় ফিলিস্তিন দখলের পর থেকেই কোণঠাসা হয়ে আছে ইসরায়েল। আর এটাও বোঝা যায় যে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বের ওপর নিজের মতামত চাপিয়ে দিতে ব্যর্থ। 

এর আগে একবার সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল হামাস ও ইসরায়েল। নভেম্বরের শেষদিকে সপ্তাহখানেকের ওই যুদ্ধবিরতিতে ১০৫ জন ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, এর বদলে ২৪০ ফিলিস্তিনি কয়েদির মুক্তি দেয় ইসরায়েল।

হামাস সম্প্রতি যে চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাতে বলা হয় ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতি হবে, ৪০ জন ইসরায়েলি জিম্মির বিপরীতে ৮০০ ফিলিস্তিনি কয়েদি মুক্তি পাবে। কিন্তু এরপর গাজায় ইসরায়েলি হামলা থামবে কিনা, এমন কিছু বলা হয়নি। এমনকি সমঝোতা চলাকালীন গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।

এছাড়া হামাসের সামরিক শাখার উপনেতা মারওয়ান ইসা এক হামলায় নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। দুই সপ্তাহ আগে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের নিচে থাকা সুড়ঙ্গে হামলায় তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে, বলেছেন ইসরায়েলের রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি। 

আরও পড়ুন

×