ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ভারত

ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলিত হওয়ার যত ঘটনা

ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলিত হওয়ার যত ঘটনা

ছবি: সংগৃহীত

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪ | ১৮:৫৭ | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪ | ১৯:১২

ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরসে ‍ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে গত মঙ্গলবার অন্তত ১২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি কয়েক বছরের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ প্রাণহানির ঘটনা।

ভারতের পুলিশ বিভাগের তথ্য বলছে, রাজধানী দিল্লির দক্ষিণে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরের হাথরাসের হিন্দু ধর্মের ওই অনুষ্ঠানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ অংশ নেন, যা ধারণক্ষমতার তিন গুণের চেয়ে বেশি। খবর রয়টার্সের

কে এই ধর্মীয় গুরু?

এই স্বঘোষিত বাবার আসল নাম সূরয পাল। তিনি সাকার বিশ্ব হরি ভোলে বাবা নামেও পরিচিত। তার আশ্রম মৈনপুরীতে। তিনি ফুলওয়ারিতে এসেছিলেন সৎসঙ্গ অনুষ্ঠানের জন্য। সাকার নারায়ণ বাবা অতীতে অনেকবার তার ভক্তদের বলেছেন, তিনি আগে গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করতেন। পরে আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েন।

তিনি উত্তরপ্রদেশের এটার কৃষক পরিবারের সন্তান। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের স্থানীয় গোয়েন্দা শাখার হেড কনস্টেবল ছিলেন। ১৯৯৯ সালে চাকরি ছেড়ে দেন এবং আধ্যাত্মিক পথে চলতে শুরু করেন বলে তিনি দাবি করেছেন।

দুর্ঘটনার কারণ

স্থানীয়রা জানিয়েছে, ছোট জায়গায় এই অনুষ্ঠান ছিল। প্রচুর মানুষ সেখানে গিয়েছিলেন। যখন অনুষ্ঠানের পর তারা বেরোতে যান, তখনই এই ঘটনা ঘটে। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোলে বাবার গাড়ি যাতে আগে চলে যেতে পারে, সেজন্য ভক্তদের প্রথমে বের হতে দেওয়া হয়নি। সেই জায়গাতে প্রচুর মানুষ জড়ো হয়। পরে সেখানে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। তখনই পদপিষ্ট হয়ে অনেকে মারা যান।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্যান্ডেল করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে ফ্যানের ব্যবস্থা ছিল না। আবহাওয়া প্রচণ্ড আদ্র থাকায় উপস্থিত অনেকেই দ্রুত বেরোতে চাইছিলেন। কিন্তু বাইরে যাওয়ার গেট ছোট ছিল। ফলে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। তাতেই পদপিষ্ট হয়ে এতজন মারা গেলেন।

এফআইআরে বলা হয়েছে, ৮০ হাজার মানুষের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। আর এসেছিলেন প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। এতো মানুষ আসবেন তা উদ্যোক্তারা বলেন নি। তাই পুলিশি ব্যবস্থা ও ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট ঠিকভাবে করা যায়নি। শুধু হথরাস বা আশপাশের এলাকা বা জেলাগুলি থেকে নয়, প্রতিবেশী রাজ্য থেকেও প্রচুর মানুষ সেখানে গিয়েছিলেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মাত্র ৪০ জন পুলিশ ছিলেন সেখানে, যা এতোবড় জমায়েতের জন্য খুবই কম। 

এদিকে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য একটি কমিটি করেছেন। সেই কমিটিতে আছেন পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি এবং দুই মন্ত্রী লক্ষ্মীনারায়ণ চৌধুরী ও সন্দীপ সিং।

গত কয়েক বছরে ভারতে ঘটে যাওয়া কয়েকটি বড় ধরনের পদদলনের ঘটনা হলো-

জানুয়ারি ২০০৫: দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের ওয়াই শহরের মান্ধারদেবী মন্দিরে পদদলিত হয়ে ২৬৫ জনেরও বেশি হিন্দু ভক্তের প্রাণহানি ঘটে। এতে আহত হন আরও শতাধিক। মন্দিরের দিকে যাওয়ার পিচ্ছিল সিঁড়িতে পদদলনের ঘটনা ঘটে বলে সেই সময় দেশটির সংবাদমাধ্যম জানায়।

আগস্ট ২০০৮: ভারতের উত্তরের রাজ্য হিমাচল প্রদেশের পাহাড়ের চূড়ায় নয়না দেবী মন্দিরে পদদলনে প্রায় ১৪৫ জন হিন্দু তীর্থযাত্রী মারা যান। ভূমিধসের গুজব ছড়িয়ে পড়ায় ছোটাছুটি করে মন্দির থেকে বেরিয়ে আসার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

সেপ্টেম্বর ২০০৮: দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় মরুভূমির রাজ্য রাজস্থানের চামুন্দাগর মন্দিরে নবরাত্রি উদযাপন উপলক্ষ্যে হাজার হাজার পূণ্যার্থী জড়ো হয়েছিলেন। সেই সময় পদদলনে অন্তত ২৫০ পূণ্যার্থী নিহত হন।

মার্চ ২০১০: ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তর প্রদেশের একটি মন্দিরে বিনামূল্যে খাবার ও পোশাক বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেই সময় খাবার ও পোশাক সংগ্রহের সময় লোকজনের মাঝে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। এতে পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ৬৩ জন নিহত হন; যাদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু।

ফেব্রুয়ারি ২০১৩: উত্তর প্রদেশে কুম্ভ মেলার ব্যস্ততম দিনে পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ৩৬ জন পূণ্যার্থী নিহত হন। উত্তর প্রদেশে দুই মাস ধরে চলা এই মেলায় ১০ কোটিরও বেশি মানুষের সমাগম হয়। পদদলনে নিহতদের মধ্যে অন্তত ২৭ জনই নারী ছিলেন। তাদের মধ্যে ৮ বছর বয়সী এক কন্যা শিশুও ছিল।

নভেম্বর ২০১৩: ভারতের মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্য মধ্যপ্রদেশের রতনগড় মন্দিরে নবরাত্রি উদযাপনে দেড় লাখের বেশি মানুষের সমাগম হয়। সেই সময় পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ১১৩ জন নিহত ও আরও শতাধিক মানুষ আহত হন।

জানুয়ারি ২০২২: অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মিরের বৈষ্ণ দেবী মন্দিরে পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ১২ জন নিহত ও কয়েক ডজন পূণ্যার্থী নিহত হন। হাজার হাজার পূণ্যার্থী সংকীর্ণ ফটক দিয়ে মন্দিরে প্রবেশের চেষ্টার সময় পদদলনের ওই ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন

×