ইউক্রেন আগ্রাসন
রাশিয়ায় অস্ত্র আসে কোথা থেকে
পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অস্ত্রের উৎপাদন বেড়েছে

ছবি: সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২২:২৩
পারমাণবিক অস্ত্রধর দেশ রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র উপাদনকারীও। ভারত ও চীনের মতো অনেক দেশ তাদের কাছ থেকে অস্ত্র কিনে নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করে। বিশ্বের মোট অস্ত্রের ৪০ শতাংশ উৎপাদন করে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরই রয়েছে রাশিয়া। তারা ১৬ শতাংশ অস্ত্র উৎপাদন করে। এর পরই যথাক্রমে– ফ্রান্স ও চীনের অবস্থান। ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার করা অস্ত্র রাশিয়ায় উৎপাদিত বলে দেশটি দাবি করে আসছে। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর দাবি, রাশিয়াকে অস্ত্র দিচ্ছে ইরান। চীনও গোপনে সহযোগিতা করছে। ইরান অস্ত্র দেওয়ার কথা অস্বীকার করে আসছে।
গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার অস্ত্র কারখানার উৎপাদন বেড়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাতারাতি উৎপাদন বাড়ে। এসব অস্ত্র দিয়েই ইউক্রেনে হামলা চালানো হচ্ছে। যুদ্ধ শুরুর আগে রাশিয়ায় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের যে মজুত ছিল, তা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এ বৃদ্ধির পেছনে আন্তর্জাতিকভাবে সরঞ্জাম ও উপকরণ সরবরাহকে দায়ী করা হয়।
প্রশ্ন হলো– কারা এ উপকরণ সরবরাহ করছে। গত জুনের শেষে প্রকাশিত লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বরাত দিয়ে এনবিসি নিউজ জানায়, রাশিয়ার অস্ত্র উৎপাদন ব্যাহত করতে পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে; রাশিয়া জোরালোভাবে অস্ত্র তৈরি করে যাচ্ছে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর নাটকীয়ভাবে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের উৎপাদন বেড়েছে। আগ্রাসনের আগের বছর ২০২১ সালে রাশিয়া বছরে একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করত। অথচ কেবল ২০২৩ সালে তারা ৪৬০টি এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন করেছে।
ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন তৈরির জন্য বিদেশের ছোট ছোট সরঞ্জামের ওপর নির্ভর করে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ অবশ্য এসব সরঞ্জাম তাদের কাছে সরবরাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু এ উদ্যোগ কার্যত ব্যর্থ হয়। এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, একটি আইরিশ কোম্পানি থেকে অস্ত্রের উপকরণ কিনছে রাশিয়া।
ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ সরাসরি অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে। গত জুনে উত্তর কোরিয়া সফর করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেখান থেকে তিনি ভিয়েতনামে যান। এ সময় পুতিন বলেছিলেন, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাবিরোধী দেশগুলোকে অস্ত্র দেবে রাশিয়া। উত্তর কোরিয়া সফরকালে তিনি দেশটির নেতা কিম জং উনের সঙ্গে একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিও করেন। এ ধরনের চুক্তি থাকা দেশগুলো প্রয়োজনের সময়ে পরস্পরকে অস্ত্র সহায়তা দিতে পারে। প্রতিবেশী চীনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ভালো। তবে চীন রাশিয়াকে অস্ত্র দেওয়ার কথা কখনও স্বীকার করে না।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ায় অর্থনীতি ভেঙে পড়েনি। এর অন্যতম কারণ, দেশটির পাশে ছিল মিত্ররা। রাশিয়ার তেল ক্রয়ের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ভারত তা মানেনি। তারা অপেক্ষাকৃত অল্প দামে রাশিয়ার তেল কিনেছে। রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন ভালো ছিল ইরান, চীন, তুরস্কেরও। ইরানের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহের অভিযোগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে তারা। ভারত, চীন, আলজেরিয়া, কাজাখস্তান, মিয়ানমার ও বেলারুশে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করে রাশিয়া।
- বিষয় :
- রাশিয়া
- ইউক্রেন
- যুদ্ধজাহাজ
- যুদ্ধবিমান