আইসিসির পরোয়ানা
নেতানিয়াহুর ওপর কী প্রভাব পড়বে
অস্ট্রেলিয়া, জাপান, জার্মানিসহ ১২৪ দেশে পা রাখতেই গ্রেপ্তার হতে পারেন

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ২১:১৫
গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসি। বৃহস্পতিবার নজিরবিহীন এ সিদ্ধান্তকে অধিকাংশ দেশ স্বাগত জানালেও ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রিয়া বিরোধিতা ও সমালোচনা করেছে। পরোয়ানা জারি হওয়ায় নেতানিয়াহু আইসিসিভুক্ত ১২৪ দেশে যাওয়া মাত্রই গ্রেপ্তার হতে পারেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ আইসিসির অন্তর্ভুক্ত না হওয়া সেসব দেশে অনায়াসে যেতে পারবেন নেতানিয়াহু।
এর মাধ্যমে নেতানিয়াহু প্রথম কোনো পশ্চিমা ধাঁচের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নেতা হলেন, যাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। একই সঙ্গে তাঁর সরকারের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ও হামাস নেতা মোহাম্মদ দাইফের বিরুদ্ধেও পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আইসিসির তিন সদস্যের বিচারক প্যানেল বলেন, তাদের কাছে বিশ্বাস করার মতো কারণ আছে, নেতানিয়াহু ও গ্যালান্ট গাজায় অনাহারকে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধ করেছেন। সেই সঙ্গে হত্যা, নির্যাতন ও অন্যান্য অমানবিক মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছেন। প্যানেল আরও বলেন, গাজায় বেসামরিক মানুষের ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্যে পরিণত করা হয়েছে। হামাস নেতা দাইফের বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতন ও জিম্মি করার অভিযোগ আনা হয়।
এর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আইসিসি। গ্রেপ্তারের গুঞ্জনের মধ্যে গত বছর পুতিন মিত্র দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে বিরত থাকেন। দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, নিয়ম অনুযায়ী, আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে সংস্থাটির অন্তর্ভুক্ত বিশ্বের ১২৪ দেশে পা রাখা মাত্রই ওই ব্যক্তি গ্রেপ্তার হবেন। এর অর্থ হচ্ছে, নেতানিয়াহু অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোতে যেতে পারবেন না। তবে ইসরায়েল ও তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য দেশ নয়। আরব দেশগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিন ছাড়া কেবল জর্ডান ও তিউনিসিয়ার সদস্যপদ রয়েছে। জার্মানিসহ ইউরোপের সব দেশ আইসিসির সদস্য। এশিয়ার জাপানও আইসিসির সদস্য। এ ছাড়া আফ্রিকার অন্তত ৩৩টি দেশে যেতে পারবেন না নেতানিয়াহু।
আলজাজিরা জানায়, ছয় মাস আগে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি আবেদনটি করেছিলেন। পরোয়ানা জারির পর ইসরায়েলের পরিবহনমন্ত্রী মিরি রেগেভ এটাকে ‘বিচারের আদলে আধুনিক ইহুদিবিদ্বেষ’ বলে বর্ণনা করেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নেতানিয়াহুর অফিসও। এক বিবৃতিতে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ‘অবান্তর’ ও ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। তারা এটাকে ‘বিচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করেছে। আইসিসির এ আদেশ বিষয়ে গাজার সাধারণ মানুষ দ্বিধা প্রকাশ করে বলেছেন, তারা মনে করেন, এমন আদেশের তেমন কোনো ফল আসবে না। এ আদেশকে চ্যালেঞ্জ করবে যুক্তরাষ্ট্র। অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনের কর্তৃপক্ষ বলছে, আইসিসির এ সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি আশা ও বিশ্বাস জাগিয়েছে। বেলজিয়াম বলেছে, অপরাধের সঙ্গে যারাই জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, সবার উচিত আন্তর্জাতিক আইন মান্য করা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বলেছেন, এটা কোনো রাজনৈতিক পরোয়ানা নয়। তাই সবার উচিত এর প্রতি সম্মান দেখানো ও মান্য করা। সমর্থন জানিয়েছে ফ্রান্সও।
আইসিসির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন খোদ জো বাইডেন। তিনি এটাকে ‘আপত্তিকর’ বলে বর্ণনা করেছেন। সমালোচনা করেছে আর্জেন্টিনা। দেশটির প্রেসিডেন্ট জাভিয়ার মিলেই বলেন, তাঁর দেশ এ সিদ্ধান্তের প্রতি গভীর অমত প্রকাশ করছে। অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেক্সান্দার স্টেকেলেনবার্গ এটাকে ‘হাস্যকর’ সিদ্ধান্ত বলে বর্ণনা করেছেন। বিরোধিতা করেছে হাঙ্গেরিও।
- বিষয় :
- গাজা
- যুদ্ধ
- ইসরায়েলে
- বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু