যুক্তরাষ্ট্রে ঘুষের অভিযোগ
আদানি সাম্রাজ্য ঝড়ের কবলে

গৌতম আদানি
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:৪৭ | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ১৭:৩১
মাত্র দুই সপ্তাহ আগে বিশ্বের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি গৌতম আদানি মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় উদযাপন করেছেন। সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আগ্রহের কথাও জানান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ৬২ বছরের এ ধনকুবের এখন যুক্তরাষ্ট্রেই মোকাবিলা করছেন দুর্নীতির অভিযোগ। এতে দেশ-বিদেশে তাঁর বন্দর ও জ্বালানি খাতের ১৬৯ বিলিয়ন ডলার সম্পদের সাম্রাজ্য বড় ধরনের ঝড়ের কবলে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল প্রসিকিউটরদের অভিযোগ, আদানি ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঘুষের পরিকল্পনা করছিলেন এবং গোপনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছিলেন। তাদের অভিযোগ, আদানি ও তাঁর কর্মকর্তারা ২০ বছরে লাভের দুই বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি নিশ্চিত করতে ভারতের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে চেয়েছেন। আদানি গ্রুপ এ অভিযোগ অস্বীকার করে ‘ভিত্তিহীন’ বলে বর্ণনা করেছে।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলছে, কাজ পাওয়ার জন্য ভারত সরকারকে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন আদানির ভাতিজা সাগর আদানিসহ আটজন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠায় এরই মধ্যে গোষ্ঠীটি এবং ভারতীয় অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লেগেছে। এরই মধ্যে আদানি গ্রুপ ৩৪ বিলিয়ন ডলার বাজার মূল্যে হারিয়েছে। শিল্পগোষ্ঠীর ১০টি কোম্পানির সম্মিলিত বাজার মূলধন কমে ১৪৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা আদানি গ্রিন এনার্জি বলছে, তারা ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বন্ড অফার আর এগিয়ে নেবে না। এ ছাড়া এই অভিযোগের প্রভাব পড়বে ভারতের ব্যবসা ও রাজনীতিতেও।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের অভিযোগে কার্যত বড় ধরনের সংকটে পড়েছে আদানি গ্রুপ। গত বছরের ২৪ জানুয়ারি আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রথমবার শেয়ারে জালিয়াতির অভিযোগ আনে মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। এ নিয়ে তারা একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেখানে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারদর ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর অভিযোগ তোলা হয়। ওই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই দ্রুত পড়তে থাকে আদানির কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম। মুহূর্তে বাজার থেকে হারিয়ে যায় ১০ হাজার কোটি রুপি। এতে বিশ্বের ধনকুবেরদের তালিকায় আকস্মিক কয়েক ধাপ নিচে নেমে যান আদানি।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, নতুন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র আদানির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। সেখানে তাঁর সাজা হওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে। এর প্রভাবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি তৈরি হতে পারে। সেইসঙ্গে বিদেশে ভারতের করপোরেট সুনামও ক্ষুণ্ন হবে। বিশ্লেষক নিমিশ মহেশ্বরী রয়টার্সকে বলেন, এ বিতর্কের কারণে বৈশ্বিক জলবায়ু লক্ষ্যের অন্যতম জটিল খুঁটি ভারতের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ কমে যেতে পারে। বিনিয়োগকারীরা এখন অধিকতর স্বচ্ছতা দাবি করতে পারেন, যা প্রকল্পের অর্থায়নকে ধীরগতি করবে।
আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এ অভিযোগের প্রেক্ষাপটে কেনিয়া সরকার দেশটিতে আদানি গ্রুপের একটি মেগা প্রকল্প বাতিল করেছে। বৃহস্পতিবার কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো এ ঘোষণা দেন। ২ বিলিয়ন ডলারের ওই চুক্তিটি বাতিলের ঘটনা গ্রুপটির জন্য বড় ধাক্কা। উইলিয়াম রুটো বলেন, তিনি এ চুক্তি বাতিলের আদেশ দিয়েছেন। এটা ছিল দেশটির প্রধান বিমানবন্দর আদানি গ্রুপের হাতে হস্তান্তরের চুক্তি।
যুক্তরাষ্ট্রের এ অভিযোগের জেরে দেশেও চাপের মুখে পড়েছেন গৌতম আদানি। বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী তাঁর গ্রেপ্তার দাবি করেছেন। জি নিউজ জানায়, গতকাল শুক্রবার তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আদানির ঢাল হওয়ার অভিযোগও তোলেন। তবে এটা পরিষ্কার নয় যে, গৌতম আদানি ও তাঁর ভাতিজা সাগর যুক্তরাষ্ট্রে আদালতে হাজির হবে কিনা। তারা অনুপস্থিত থেকেই মামলাটি শেষ করার চেষ্টা করতে পারেন।
ভারতের অর্থনীতি দেশটির শীর্ষ অবকাঠামো টাইকন আদানির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। তিনি দেশগুলোর ১৩টি বন্দর পরিচালনা করেন (৩০ শতাংশ বাজার শেয়ার); সাতটি বিমানবন্দর (২৩ শতাংশ যাত্রী পরিবহন) ও ভারতের বৃহত্তম সিমেন্ট ব্যবসার (২০ শতাংশ বাজার) নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর রয়েছে ছয়টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ ছাড়া আরও অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে দেশটিতে নানা গুঞ্জন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ প্রসঙ্গে ভারতীয় সাংবাদিক প্রাণঞ্জয় গুহ ঠাকুর বলেন, ‘এটা বড় অভিযোগ। আদানি ও মোদি দীর্ঘকাল ধরেই অবিচ্ছেদ্য। এটা ভারতের রাজনৈতিক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে যাচ্ছে।’
- বিষয় :
- গৌতম আদানি