ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

পর্যটন ও চিকিৎসা খাত

ভারতে বাংলাদেশি পর্যটক বয়কটের নেপথ্যে

ভারতে বাংলাদেশি পর্যটক বয়কটের নেপথ্যে

ত্রিপুরার একটি প্রতীকী ছবি

শুভজিৎ পুততুন্ড, কলকাতা

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:০৮ | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:০৮

বাংলাদেশীদের বয়কট খেলায় মেতে উঠেছে ভারতের চিকিৎসা খাত থেকে হোটেল সেক্টর। বাংলাদেশী পর্যটকদের বয়কট করেছে ত্রিপুরার হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বয়কট করেছে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। তারা বলছে বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্য তাদের হোটেলের রুম বরাদ্দ বন্ধ করেছে তারা।

বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, বাংলাদেশের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের থেকে কম জনসংখ্যার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বাংলাদেশি পর্যটকদের আনাগোনাই যথেষ্ট কম। একইভাবে সোনামসজিদ স্থলবন্দর সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলাতেও বাংলাদেশি পর্যটকদের পা পড়ে হাতে গোনা। হাতেগোনা যে কয়েকজন বাংলাদেশি পর্যটক এই সব এলাকায় ঘুরতে আসে তাদের অধিকাংশের ঠাঁই হয় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। গত আগস্ট মাসের পর থেকে ভারত ভিসা দেওয়া বন্ধ করায় সেই সংখ্যাও ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। তাই বিন্দুমাত্র ক্ষতির সম্মুখীন হবে না জেনেই বয়কটের আগুনে হাত সেকেছে ভারতের কতিপয় ব্যবসায়ী।

বাংলাদেশিদের বয়কটের খাতায় নাম লিখিয়েছেন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও একজন চিকিৎসক। সম্প্রতি এমন সংবাদও যথেষ্ট প্রচার পেয়েছে। এক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে যে বেসরকারি হাসপাতালের তরফ থেকে বাংলাদেশি চিকিৎসা প্রত্যাশীদের বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে সেই হাসপাতালে আদৌ বাংলাদেশের রোগীরা চিকিৎসা নেন না। এমনকি যে চিকিৎসকের তরফ থেকেও বয়কটের ডাক এসেছে সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে সেই চিকিৎসকের চেম্বারেও বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা শূন্য। জানা গিয়েছে বাংলাদেশি আইভিএফ পেশেন্টের মাধ্যমে ব্যবসা জমিয়ে তোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে ওই চিকিৎসকের পক্ষ থেকে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

কলকাতার ভারতীয় ট্যুরিজম ব্যবসায়ী দীপক চতুর্বেদী বলেন, বাংলাদেশি টুরিস্ট নির্দিষ্ট কিছু এলাকার ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেই লাভজনক অবস্থান তৈরি করে। বাকিদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি টুরিস্টরা হয়তো ভরসা করতে পারে না। তাই সেই সব ব্যবসায়ীদের তাদের ব্যবসায় বাংলাদেশ প্রভাবও ফেলে না। যারা বয়কটের ডাক দিচ্ছেন আমার মনে হয় তাদের রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে যেহেতু তারা বাংলাদেশিদের থেকে ব্যবসা পায় না।

একই পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে কলকাতা নিউ মার্কেট এলাকায়। নিউমার্কেটের হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশি ক্রেতাদের ওপরেই টিকে রয়েছে এই এলাকার অর্থনীতি। দুইশোর বেশি আবাসিক হোটেল। শতাধিক মানি এক্সচেঞ্জার। রেস্তোরা ব্যবসা থেকে পরিবহন, ট্যুরিজম সবটাই বাংলাদেশি পর্যটকনির্ভর। এই পুরো এলাকায় বাংলাদেশিদের অতিথির মতো আপ্যায়ন করা হয়, বয়কটের কোনো প্রশ্নই আসে না।

নিউমার্কেট এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী মনোজিৎ দে অভিযোগের সুরে বলেন, কিছু মানুষ হিংসার বশবর্তী হয়ে ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তার দাবি, বাংলাদেশের নিশ্চিন্তে কলকাতায় ভ্রমণ করুক। তাদের নিরাপত্তার কোনো রকম সমস্যা হবে না। প্রয়োজনে বাংলাদেশি পর্যটনদের সুবিধার জন্য কলকাতায় হেল্প লাইন চালুর সুবিধার কথা ভাবছে তারা।

এদিকে ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কে এমন শীতলতা চাপে ফেলেছে ভারতীয় এক্সপোর্টারদের। বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবসা করছেন ভারতীয় এক্সপোর্টার বঙ্কিম প্রধান। তিনি বলছেন ব্যবসায়িকভাবে অসফল মানুষেরাই বয়কটের খেলায় মেতে উঠেছেন। ভারতীয় চেম্বার কমার্সের সিনিয়র সদস্য এই ব্যবসায়ী বলেন বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি ব্যবসায়িক সম্পর্কের জেরে ভারতের হাজার হাজার পরিবারের অন্নের সংস্থান হয়। এছাড়াও সরাসরি দেখতে গেলে বাংলাদেশ ভারতের অন্যতম রেমিটেন্সের সোর্স। অন্তত ৫ বিলিয়ন ডলার বছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রেমিটেন্স আসে। এখানেই বোঝা যায় ঠিক কত স্কিল্ড ভারতীয় বাংলাদেশি অর্থনীতিতে অবদান রাখছে এবং বাংলাদেশ থেকে অর্থ উপার্জন করে ভারতের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে। 

ভারতের মেডিকেল ট্যুরিজমে বাংলাদেশের অবদান প্রায় দুই শতাংশের বেশি। কলকাতা এবং চেন্নাইয়ের বড় হাসপাতালগুলোর পাবলিক রিলেশন অফিসারদের সঙ্গে সমকালের তরফে যোগাযোগ করা হলে তারা বয়কট শব্দ শুনেই রীতিমতো চমকে উঠেন। নাম বলতে না চাওয়ার শর্তে চেন্নাই অ্যাপোলো হাসপাতালের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ভারতীয় চিকিৎসা ক্ষেত্রে এমন বয়কটের কোনরকম সিদ্ধান্তই কখনো নেওয়া হয়নি। ভারতে পাকিস্তানী নাগরিকরাও যেখানে নির্দ্বিধায় চিকিৎসা করাতে আসতে পারেন সেখানে বাংলাদেশি চিকিৎসা প্রত্যাশীরা আমাদের বন্ধু। চেন্নাইয়ের আর এক হাসপাতালের সিনিয়র সিএফও বেশ মজার সুরে বলেন ভারতীয় রোগীরা হয় প্রাইভেট নয় গভমেন্ট ইন্সুরেন্স এর মাধ্যমে চিকিৎসা করে সেখানে বাংলাদেশি পেশেন্টরা ক্যাশ পেমেন্ট করে চিকিৎসা পরিষেবা নেন। বাংলাদেশি রোগীদের কারণে আমাদের হাসপাতাল গুলির ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্ট যথেষ্ট ভালো থাকে।

আরও পড়ুন

×