দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ধাক্কা খেলেন ট্রাম্প
পাস হয়নি শাটডাউন এড়ানোর বিল

ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১১:৪৫ | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২:০৫
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যয়-সংক্রান্ত বিলটি পাস হয়নি। ট্রাম্প বিলটিতে সমর্থন এবং এটি পাসের জন্য নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির সদস্যদের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে দলের কয়েক সদস্য তাঁর আহ্বানে সাড়া দেননি। এতে আগামী ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ধাক্কা খেলেন ট্রাম্প।
ব্যয়-সংক্রান্ত বিলটি পাস না হওয়ায় দেশটির সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এটির প্রভাবে আসন্ন বড়দিন উৎসব বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এর মধ্য দিয়ে নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে থাকা ফাটলও স্পষ্ট হলো। আগামী বছর সংসদের উচ্চ ও নিম্নকক্ষ উভয়ই রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে আসবে। সে সময় এ পরিস্থিতি আরও জটিল করে দেখা দিতে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
বিলটি পাসের জন্য ট্রাম্প তাঁর দলের সদস্যদের রীতিমতো চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। কিন্তু দলটির ডানপন্থি রাজনীতিবিদরা চাপ উপেক্ষা করে বিলটির বিরুদ্ধে গেছেন। কারণ এটি পাস হলে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি পেত এবং সরকারি যে ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ রয়েছে, সেটি আরও কয়েক ট্রিলিয়ন বৃদ্ধি পেত। এর আগে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টি মিলে একটি বিল উত্থাপনের প্রস্তুতি নিয়েছিল। তবে ট্রাম্প এবং তাঁর বন্ধু বিশ্বের সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের বিরোধিতার কারণে এটি সফল হয়নি। এর পরই তাঁর চাহিদা অনুযায়ী নতুন বিল উত্থাপন করা হয়। কিন্তু ১৭৪-২৩৫ ভোটের ব্যবধানে এটি ব্যর্থ হয়।
সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া আটকাতে পরবর্তী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এ ব্যাপারে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসনকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, আমরা আরেকটি সমাধান নিয়ে হাজির হব।
গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মধ্যরাতে দেশটির সরকারি অর্থায়নের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় ছিল। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সীমান্ত নিরাপত্তা থেকে শুরু করে জাতীয় পার্কসহ সবকিছুর কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়া শুরু করবে। এ ছাড়া ২০ লাখ সরকারি কর্মচারীর বেতনও বন্ধ হবে।
ট্রাম্প মূলত দেশটির সরকারের যে ‘ঋণ সীমা’ আছে সেটির বিলুপ্তি চান। কারণ নির্বাচনের আগে তিনি ট্যাক্স কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আর ট্যাক্স কমালে সরকারকে বেশি ঋণ নিতে হবে। যদি ঋণ সীমা বিলুপ্তি অথবা সীমা বৃদ্ধি না করা হয়, তাহলে তিনি ট্যাক্স কমানোর বিষয়টি কার্যকর করতে পারবেন না। ট্রাম্প বলেছেন, যদি তাঁর এই দাবি না মানা হয়, তাহলে কোনো বিল পাস হতে দেবেন না। ডেমোক্র্যাটরা বলেছেন, ট্রাম্প মূলত ইলন মাস্কের মতো ধনকুবেরদের সুবিধা দিতে ট্যাক্স কমানোর চেষ্টা করছেন।
অবশ্য প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি পাস হলেও এটি উচ্চকক্ষ সিনেটে গিয়ে বাধার মুখে পড়ত। কারণ সেটির নিয়ন্ত্রণ এখনও ডেমোক্র্যাটদের হাতে আছে। হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ট্রাম্পের সমর্থিত এই বিলকে সমর্থন জানাননি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আগামী ১০ বছরে সরকারের আয় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার কমবে।
এদিকে এই ঋণ সীমা নিয়ে আগেও দুই দলের মধ্যে লড়াই হয়েছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছিল অর্থনৈতিক বাজারে। নিজেরা চুক্তি করে ঋণ সীমাটি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে, যা আগামী ১ জানুয়ারি শেষ হয়ে যাবে।
এর আগে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে মার্কিন সরকারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওই সময় ক্ষমতায় ছিলেন ট্রাম্প। নতুন করে এ নিয়ে ফের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সেটির কারণে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার জনসনের অবস্থান নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।