ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ
মার্কিন শেয়ারবাজার থেকে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার উধাও
সম্পদ কমেছে মাস্ক, জাকারবার্গ, বেজোসদের

প্রতীকী ছবি।
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৫ | ০৭:৫৬
বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করায় গত দুই দিনে মার্কিন শেয়ারবাজার ৫ ট্রিলিয়ন ডলার বাজার মূলধন হারিয়েছে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। মার্কিন অন্যতম স্টক মার্কেট নাসডাক সূচকের বড় পতন গত কয়েক দশকের মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করার ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে গত শুক্রবার চীন ঘোষণা দেয়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসাবে। এর ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্র হয়েছে।
ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সুদের হার কমানোর জন্য ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের ওপর চাপ তৈরির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এতে বিনিয়োগকারীদের আশা জেগেছিল, পাওয়েল সুদের হার কমাতে প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিয়ে বাজারকে কিছুটা স্বস্তি দেবেন। কিন্তু সেই আশা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায়। এ ঘটনা ওয়াল স্ট্রিটে আরও হতাশা ডেকে আনে। মাত্র দুই দিনে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের মূল্যমান ৬ শতাংশ কমেছে, শেয়ারবাজার থেকে উধাও হয়েছে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার।
এদিকে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ এখন এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। মন্দার ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে ও মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। শেয়ারবাজারে বড় ধস, আত্মবিশ্বাসের পতন ও অতি অনিশ্চিত পরিস্থিতি দেখে ফেডারেল রিজার্ভ যদি ৬-৭ মে বৈঠকে সুদের হার কমায়, তা খুব একটা চমকপ্রদ হবে না। শেয়ারবাজারের এই পতন পরবর্তী সপ্তাহেও চলতে থাকলে বড় পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
মার্কিন শেয়ারবাজারের এ পতন ২০২০ সালের কভিড মহামারি-পরবর্তী সময়ের চেয়ে বড় পতন। জেপি মর্গান বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৬৮ সালের পর সবচেয়ে বড় মার্কিন কর বৃদ্ধি ও এর প্রভাবে একটি বৈশ্বিক মন্দার অনেক বেশি আশঙ্কা রয়েছে। বারক্লেইসের অর্থনীতিবিদরা এখন বলছেন, এই বছর মার্কিন মুদ্রাস্ফীতি ৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে এবং চতুর্থ প্রান্তিকে জিডিপি সংকুচিত হবে, যা মন্দার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
এদিকে সব মার্কিন সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ও শুল্ক গুদামে ভিত্তি শুল্ক ১০ শতাংশ কার্যকর করা হয়েছে। শনিবার প্রথম প্রহর থেকেই মার্কিন কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকা পণ্য থেকে নতুন শুল্ক নেওয়া শুরু করেন। শুক্রবার লেনদেন শেষ হওয়া পর্যন্ত টানা দুই দিনে এসঅ্যান্ডপি ৫০০তে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলো ৫ লাখ কোটি ডলার হারিয়েছে। ১০ শতাংশ শুল্কের শিকার হওয়া দেশগুলো হলো– অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কলম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, মিসর ও সৌদি আরব।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভের প্রস্তুতি
অন্যদিকে, স্থানীয় সময় শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিসহ সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পবিরোধী বিশাল বিক্ষোভ হওয়ার কথা রয়েছে। বিক্ষোভে অংশ নিতে ইচ্ছুকরা ট্রাম্পের শুল্ক পদক্ষেপকে ‘সরকার, অর্থনীতি এবং মৌলিক অধিকারের ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সম্পদ খোয়ালেন মার্কিন ধনকুবেররা
শুল্ক আরোপের পর বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ ধনী এক দিনে মোট ২০ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের সম্পদ খুইয়েছেন। ব্লুমবার্গের সম্পদ সূচক অনুসারে, ব্যবসায়ীদের গড়ে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ সম্পদ হ্রাস পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি সম্পদ হারিয়েছেন মার্কিন ধনকুবেররা। মেটার শেয়ারের দাম ৯ শতাংশ কমে গেছে। ফলে প্রধান নির্বাহী জাকারবার্গ ১ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার খোয়ান, যা তাঁর মোট সম্পদের ৯ শতাংশ। অ্যামাজনের শেয়ারের দাম ৯ শতাংশ পড়ে যায়। এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা বেজোস ব্যক্তিগত মোট সম্পদ থেকে ১ হাজার ৫৯০ কোটি ডলার খোয়ান। টেসলা সিইও ইলন মাস্ক ১১ হাজার কোটি ডলারের সম্পদ খুইয়েছেন। তাঁর সম্পদ কমেছে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার। বিবিসি, রয়টার্স ও গার্ডিয়ান।