অতীতকে পুনর্লিখন করতে পারবেন না, ওয়াক্ফ আইনের শুনানিতে ভারতের প্রধান বিচারপতি

সঞ্জীব খান্না
কলকাতা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫ | ০১:২৪ | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫ | ০১:২৫
ভারতে ওয়াক্ফ সংশোধিত আইন নিয়ে শুনানিতে ওয়াক্ফ বোর্ডে অমুসলিমদের প্রবেশাধিকার স্থগিত রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। একই সঙ্গে তিনি পাবলিক ট্রাস্টকে ওয়াক্ফ বোর্ডের মাধ্যমে অধিগ্রহণের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। গতকাল বুধবার ওই আইনে করা আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে মামলার পরবর্তী শুনানি আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। অন্যদিকে, বিরোধীদের পক্ষ থেকে কপিল সিব্বাল ও অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান বিচারপতি শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘১০০ বা ২০০ বছর আগের পাবলিক ট্রাস্টকে আপনি ওয়াক্ফ বোর্ডের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করতে পারেন না। অতীতকে এভাবে পুনর্লিখন করতে পারবেন না।’
ওয়াক্ফ সংশোধিত আইনের বিধানগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক আবেদনের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট আবেদনকারী ও কেন্দ্র উভয়ের কাছেই একাধিক প্রশ্ন উত্থাপন করেন প্রধান বিচারপতি।
প্রথম দিনের শুনানিতে সংশোধিত ওয়াক্ফ আইনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিধানের ওপর স্থগিতাদেশও জারি করেছেন শীর্ষ আদালত। এর মধ্যে অন্যতম হলো, কেন্দ্রীয় ওয়াক্ফ সংসদ ও ওয়াক্ফ পর্ষদগুলোতে অমুসলিম সদস্যের অন্তর্ভুক্তি। এ বিষয়ে শীর্ষ আদালত সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশ্ন করেছেন, হিন্দুদের কোনো ধর্মীয় পরিষদ বা ট্রাস্টে কেন্দ্রীয় সরকার কি কোনো মুসলমানকে সদস্য হওয়ার অনুমতি দেবে? এক্ষেত্রে আদালতের বার্তা খুবই স্পষ্ট। যদি কোনো মুসলিম হিন্দু ধর্মীয় ট্রাস্টের সদস্য হতে পারেন, তাহলে ওয়াক্ফ বোর্ডেও অমুসলিম সদস্য হতে পারবেন। কোনো মুসলিমকে হিন্দু ট্রাস্টের সদস্য হওয়ার অনুমতি না থাকলে কোনো অমুসলিমও ওয়াক্ফ বোর্ডের সদস্য হতে পারবেন না।
এছাড়াও শুনানিতে ওয়াক্ফ সম্পত্তিতে গলদ রয়েছে কিনা, সংশোধিত আইনে জেলা প্রশাসকদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার এবং আদালত কর্তৃক ওয়াক্ফ সম্পত্তিকে বাতিল ঘোষণা করার বিধানের ওপরেও স্থগিতাদেশ জারি করেন সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি খান্না উল্লেখ করেন, আইন সংশোধনী নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভ-সহিংসতা হয়েছে তা খুবই গর্হিত কাজ। এদিকে সংশোধিত ওয়াক্ফ আইন নিয়ে পাকিস্তানের মন্তব্যকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন হিসেবে উল্লেখ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করার অধিকার পাকিস্তানের নেই। ইসলামাবাদের উচিত সংখ্যালঘুর অধিকার রক্ষায় নিজের নিকৃষ্টতর রেকর্ড খতিয়ে দেখা। সম্প্রতি পাকিস্তানে পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র অভিযোগ তোলেন, ওয়াক্ফ আইন সংশোধনের মাধ্যমে মুসলিমদের সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ভারত।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, ওয়াক্ফ সংশোধনী আইন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে পড়া অশান্তি পূর্বপরিকল্পিত। গতকাল কলকাতার নেতাজি ইনডোরে ইমাম-মুয়াজ্জেম-বুদ্ধিজীবীদের সভায় তিনি এ কথা বলেন।
পশ্চিমবঙ্গে অশান্তির জন্য সরাসরি বিজেপি তথা কেন্দ্রের সরকারকে দায়ী করে মমতা বলেন, মুর্শিদাবাদে সম্প্রতি যে ধর্মীয় অসন্তোষ ও অশান্তির ঘটনা ঘটেছে তা পরিকল্পিত ঘটনা। এ সময় তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে নরেন্দ্র মোদি ও ড. ইউনূসের বৈঠক নিয়ে মন্তব্য করেন। তাঁর প্রশ্ন, অন্য দেশ থেকে লোক এনে দাঙ্গা করাই কি আপনাদের উদ্দেশ্য। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর নাম না উল্লেখ করে মমতা কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন।
গত ৩ এপ্রিল মধ্যরাতে ভারতের সংসদ বিতর্কিত ওয়াক্ফ আইনের সংশোধনী বিলটি পাস করে। এর মাধ্যমে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মুসলমানদের দান করা কোটি কোটি ডলার মূল্যের সম্পত্তি পরিচালনার পদ্ধতি পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয়।
মুসলিম নেতা ও বিরোধী দলগুলো এই সংশোধনীকে অসাংবিধানিক এবং ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার লঙ্ঘনের চেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করে। ভারত সরকারের দাবি, বিলটির লক্ষ্য ওয়াক্ফ (মুসলিম সম্পত্তি) ব্যবস্থাপনা আরও স্বচ্ছ করা।
- বিষয় :
- ভারত
- প্রধান বিচারপতি