ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

শেষ ইচ্ছায় রোমের গির্জায় সমাহিত পোপ ফ্রান্সিস

শেষ ইচ্ছায় রোমের গির্জায় সমাহিত পোপ ফ্রান্সিস

ছবি: বিবিসি

অনলাইন ডেস্ক 

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | ১৯:৫৬ | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | ২৩:১১

ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিসকে গতকাল শনিবার সমাহিত করা হয়েছে। এর আগে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রায় চার লাখ মানুষের সমাগম হয়। সেখানে ছিলেন ৫০টির বেশি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান। 

আর্জেন্টিনার বংশোদ্ভূত পোপ ফ্রান্সিস (৮৮) গত সোমবার মারা যান। তিনি ১২ বছর পোপের দায়িত্বে ছিলেন।

আগের তিন দিন তাঁর কফিন রাখা হয়েছিল সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা গির্জায়। সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে। আর গতকাল অনুষ্ঠান শুরুর এক ঘণ্টা আগে ৪০ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সেন্ট পিটার্স স্কয়ার পূর্ণ হয়ে যায়। অনুষ্ঠান ঘিরে ইতালি ও ভ্যাটিকান সিটি কর্তৃপক্ষ কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়। অনুষ্ঠানস্থলে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করা হয়। প্রস্তুত রাখা হয় যুদ্ধবিমান। বিভিন্ন ভবনের ছাদে মোতায়েন করা হয় স্নাইপার।

ভ্যাটিকানের স্থানীয় সময় সকাল ১০টার পর শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে ফ্রান্সিসের কফিন নিয়ে আসা হয়। উপস্থিত জনতা নীরবতা ভেঙে করতালি দেন। প্রার্থনা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইতালির যাজক জিওভান্নি বাত্তিস্ত রে (৯১)।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতাদের অনেকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেন। যোগ দেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছিলেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেইন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, স্পেনের রাজা ফিলিপ ষষ্ঠ ও রানী লেতিজিয়া, জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার, বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, ইতালির প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাত্তারেল্লা এবং প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তাঁর স্ত্রী জিল, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা প্রমুখ। তাদের অধিকাংশের পরনে ছিল কালো পোশাক, যা অনুষ্ঠানের ভাবগাম্ভীর্যতাকে বাড়িয়ে দেয়।

এরপর ফ্রান্সিসের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সান্তা মারিয়া ম্যাগিওরের ব্যাসিলিকায়। সেখানে সমাহিত করা হয় তাঁকে। ক্যামেরলেঙ্গো (তত্ত্বাবধায়ক) কার্ডিনাল কেভিন জোসেফ ফ্যারেলের নেতৃত্বে ধর্মীয় আচার সম্পন্ন করা হয়।

সেন্ট পিটার্স থেকে কফিনবাহী শোভাযাত্রা যে পথ ধরে সান্তা মারিয়া ম্যাগিওরে পৌঁছায়, তার দু’পাশে মানুষের ঢল নামে। ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি বলেন, ‘আমাদের অনুমান সেন্ট পিটার্স স্কয়ার ও রাস্তার পাশে অবস্থান নেওয়া লোকজন মিলিয়ে মোট অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা চার লাখের কম নয়।’

এক বিবৃতিতে ভ্যাটিকান বলেছে, গত ১০০ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো পোপকে ভ্যাটিকানের বাইরে সমাহিত করা হলো। আর এ সময় কেবল পোপের নিকটতম ব্যক্তিরা অংশ নেওয়ার অনুমতি পান।
গতকাল অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভ্যাটিকানের ৯ দিনের আনুষ্ঠানিক শোক শুরু হয়েছে। এই শোক শেষে নতুন পোপ নির্বাচন করতে কার্ডিনালরা মিলিত হবেন।

ভ্যাটিকানে ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক

পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংক্ষিপ্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, দুই নেতা ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করেছেন এবং এই বৈঠকে ‘খুবই ফলপ্রসূ’ আলোচনা হয়েছে। প্রায় ১৫ মিনিটের বৈঠকের আরও বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।

বিবিসির খবরে বলা হয়, এই বৈঠকের তথ্য সামনে আসার পর আরেকটি ছবি পাওয়া গেছে, যা শেষকৃত্যের আগে ধারণ করা। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ একে অন্যকে আলিঙ্গন করছেন।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ড. ইউনূস

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ভ্যাটিকান সিটিতে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়েছেন। বাসস জানায়, অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং বিশিষ্টজনের মধ্যে আসন গ্রহণ করেন। শেষকৃত্যের আগে ও পরে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, ইইউ প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাবসহ কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

আরও পড়ুন

×