ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

ভূরাজনীতি

সাইপ্রাসে গড়ে উঠছে ‘মিনি ইসরায়েল’

সাইপ্রাসে গড়ে উঠছে ‘মিনি ইসরায়েল’

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পূর্ণ দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাস সংগৃহীত

 সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫ | ০১:১৬

ভূমধ্যসাগরের পূর্বাংশে দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাস। এর একাংশ ‘গ্রিক সাইপ্রাস’ ও অন্য অংশ ‘উত্তর সাইপ্রাস’ নামে পরিচিত। প্রতিবেশী দেশের মধ্যে আছে– উত্তরে তুরস্ক, পূর্বে লেবানন ও ইসরায়েল এবং দক্ষিণে গ্রিস। সম্প্রতি সুন্দর দেশটি ভিন্ন এক কারণে আলোচনায় আসছে। গ্রিক সাইপ্রাসের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ– সবাই এ নিয়ে কথা বলছেন। প্রতিবেশীদের সঙ্গে যুদ্ধ-সংঘাতে থাকা ইসরায়েলের বাসিন্দারা গ্রিক সাইপ্রাসে গিয়ে জমি কিনে বাড়িঘর করছেন। তারা জনগণের সঙ্গে না মিশে পৃথক এলাকা গড়ে তুলছেন, যেটাকে অনেকে বলছেন ‘মিনি ইসরায়েল’।
কার্যত গ্রিক সাইপ্রাসে ইসরায়েলি বিনিয়োগকারীদের বাড়ি-জমি কেনার হার নিয়ে এ উদ্বেগ। বিশেষ করে উপকূলীয় শহর লারনাকা ও লিমাসলে ইসরায়েলিদের জমি কেনার প্রবণতা বেশি। এ অবস্থায় দেশটির বিরোধী দলের নেতারা বলছেন, ইসরায়েল যেন ধীরে ধীরে সাইপ্রাসে তাদের একধরনের ‘অঘোষিত উপস্থিতি’ তৈরি করে ফেলছে। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে সাইপ্রাসে গড়ে উঠেছিল ইহুদি আশ্রয়শিবির। সর্বশেষ ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের সময়ও হাজার ইসরায়েলি সাইপ্রাসে আশ্রয় নেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে কোনো দেশ সাইপ্রাসে সহজেই জমি কিনতে পারে। তবে ইসরায়েল ইইউর দেশ না হয়েও সম্প্রতি সেখানে ব্যাপক জমিজমা কিনছে। বর্তমানে গ্রিক সাইপ্রাসে ইসরায়েলের নাগরিকের সংখ্যা কমবেশি ১৫ হাজার। এতে জনসংখ্যাগত ভারসাম্য ও ভূরাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। তুরস্ক ও উত্তর সাইপ্রাসের স্বঘোষিত তুর্কি প্রজাতন্ত্র (টিআরএনসি) এটিকে হুমকি হিসেবে দেখছে।
সম্প্রতি গ্রিক সাইপ্রাসে ‘মিনি ইসরায়েল’ কথাটি জোরেশোরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। প্রধান বিরোধী দল আকেলের নেতা স্টেফানোস স্টেফানো পরিস্থিতিকে ‘পরিকল্পিত বসতি স্থাপন কৌশল’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি গ্রিস সাইপ্রাস হাতছাড়া হওয়ার সতর্কতাও দিয়েছেন। সভা-সমাবেশেও রাজনৈতিক নেতারা প্রসঙ্গটি তুলছেন।

সম্প্রতি এক পার্টি কংগ্রেসে স্টেফানো বলেন, এ প্রবণতা ফিলিস্তিন অঞ্চলে ব্যবহৃত বসতি স্থাপনের কৌশলের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। তিনি সতর্ক করে বলেন, এটা ‘ঘেটো’ গঠন ও বিদেশি প্রভাব বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করতে পারে। ‘ঘেটো’ গঠন বলতে একটি আবাসিক এলাকায় নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর বাস ও সংস্কৃতির চর্চাকে বোঝায়। স্টেফানো গ্রিক সাইপ্রাসে ইসরায়েলের সম্প্রসারণ কৌশলের অংশ হিসেবে ‘ইহুদিবাদী স্কুল’ ও সিনাগগ (ইহুদি উপাসনালয়) প্রতিষ্ঠার দিকে ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, ‘তারা (ইসরায়েলিরা) আমাদের কাছ থেকে দেশ কেড়ে নিচ্ছে।’  
স্থানীয় কিছু বিশ্লেষক তার উদ্বেগের প্রতিধ্বনি করে সতর্ক করে বলেন, ইসরায়েলিদের কাছে অনিয়ন্ত্রিত সম্পত্তি বিক্রয় অবশেষে গ্রিক সাইপ্রাসের সার্বভৌমত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে; অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।

গ্রিস সাইপ্রাসে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ওরেন আনোলিক এসব বক্তব্যকে ইহুদি-বিদ্বেষী বলে বর্ণনা করেছেন।
যেসব এলাকায় ইসরায়েলিরা জমি কিনছে, সেগুলোতে খাবার ও নিরাপত্তায় তারা স্বতন্ত্রতা আনছে। স্থানীয় সমাজের সঙ্গে মেলামেশার পরিবর্তে তারা নিজেদের আলাদা করে রাখার মতো জায়গা বানাচ্ছে। এ বসতি স্থাপনের পেছনে সক্রিয় সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘ছাবাদ’। এটি একটি আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় অতিরক্ষণশীল ইহুদি ধর্মীয় আন্দোলন। ছাবাদ ইতোমধ্যে গ্রিক সাইপ্রাসে সিনাগগ, কিন্ডারগার্টেন, কোশার খাবারের দোকান ও কবরস্থানের মতো কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছে। সূত্র: হারিয়াৎ ডেইলি নিউজ, তুর্ক টুডে।  

আরও পড়ুন

×