ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

কাবুলের রাস্তা প্রায় নারীশূন্য, বিক্রি বাড়ছে বোরকার

কাবুলের রাস্তা প্রায় নারীশূন্য, বিক্রি বাড়ছে বোরকার

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২১ | ২২:৫৯

আফগানিস্তান তালেবানের হাতে যাওয়ার পর পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্বের রাষ্ট্রনেতাদের কাছে একাধিক আর্জি জানিয়েছেন আফগানিস্তানের মানবাধিকার কর্মীসহ অনেকেই। বিশেষ করে তালেবান রাজত্বে নারীদের অবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন তারা। কিন্তু দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যমে গত ৪৮ ঘণ্টায় যত ছবি সামনে এসেছে কাবুলের, তাতে রাস্তাঘাটে নারীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। একমাত্র ব্যতিক্রম অলিগলির বোরকার দোকান। 

তালেবানের শাসনে নারীদের কী কী শিষ্ঠাচার মেনে চলতে হবে, আগেই তার লিখিত বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিয়েছে তারা। মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত আবৃত রাখতে বলা হয়েছে নারীদের। তাই খোলা বাতাস ছেড়ে ঘরের কোণে ঢুকে গেলেও, বোরকার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছেন আফগান নারীরা।

কাবুল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়নরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-কে বলেছেন, ‘রোববার সকালে ইউনিভার্সিটি যাচ্ছিলাম। গেটের কাছে পৌঁছতেই দেখলাম ডর্মিটরি থেকে ছুটে বেরিয়ে আসছে আমার সহপাঠীরা। জিজ্ঞেস করে জানলাম, পুলিশ কলেজ খালি করে দিচ্ছে। তালেবান এসে গিয়েছে। বোরকা না পরে থাকলে নারীদের মারধর করবে বলে হুমকি দিয়েছে। কিন্তু পালাব কোথায়? রিকশাচালকরাও মেয়েদের দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছিল না। কাবুলের বাইরে থেকে যারা পড়তে এসেছিল, তারা তো আতঙ্কে। কোনও রকমে হোস্টেলে গেছে সবাই। এত বছর ধরে অর্জিত স্কুল-কলেজের সনদ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।’

২০ বছর আগের তালেবানের সঙ্গে আজকের তালেবানের ফারাক রয়েছে বলে যদিও ইতিমধ্যেই নিজেদের জাহির করতে দেখা গিয়েছে সংগঠনের নেতৃত্বকে। কিন্তু তার পরেও তালেবান পুনরুত্থান-পর্বে মহিলাদের নিয়ে যে সব বিধিনিষেধ সামনে এসেছে, তাতে অশনিসঙ্কেত দেখছেন তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের নাগরিকরাও।

তবে ফতোয়া জারি করেই থেমে নেই তালেবান। সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির বৈধ সরকার থাকাকালীনই গায়ে সেঁটে থাকা পোশাক পরার জন্য বালখ প্রদেশে এক মহিলাকে তালেবান গুলি করে খুন করে বলে অভিযোগ। ২০ বছর আগের তালেবান সরকার নারীশিক্ষা নিষিদ্ধ করেছিল। তার পর আমেরিকার পদার্পণের পর আফগানিস্তানের স্কুলগুলোতে মেয়েদের সংখ্যা বেড়ে ৯০ লাখে পৌঁছেছিল। কাবুলের দখল নেওয়ার আগেই তাদের মধ্যে ২০ লাখ মেয়েকে স্কুল থেকে নাম কাটিয়ে নিতে তালেবান বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে তালেবান মসনদের দখল নেওয়ার পর কাবুলের রাস্তাঘাট প্রায় নারীশূন্য। এদিক ওদিক গুটিকয়েক বোরকায় ঢাকা অবয়ব যা-ও বা চোখে পড়ছে, শেষ সম্বলটুকু নিয়ে সীমান্ত পেরোতে স্বামীর পিছু নিয়েছেন তারা। এক হাতে ব্যাগপত্র, অন্য হাতে শক্ত করে ধরা ছেলেমেয়ের হাত। অর্থনৈতিক দিক থেকে একটু সম্পন্ন পরিবারের মহিলারা স্বামী-সন্তানের সঙ্গে রওনা দিচ্ছেন হামিদ কারজাই বিমানবন্দরের দিকে। বাকিরা দৌড়চ্ছেন চমন সীমান্তের দিকে। কারণ পেশোয়ার যাওয়ার একমাত্র সড়ক পথটির দখল নিয়েছে তালেবান। তাই পাকিস্তানে ঢোকার একমাত্র রাস্তা এই চমন সীমান্ত।

তবে সেখানেও দুর্ভোগের শেষ নেই। হাজার হাজার লোকের প্রবেশ আটকাতে দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। উপায় না দেখে অযত্নে বসানো কংক্রিটের দেওয়াল এবং তার উপর বসানো পাকানো লোহার কাঁটাতার পেরিয়ে বিমানবন্দরে ঢোকার চেষ্টা করছেন স্থানীয় মানুষ। একই দৃশ্য চমন সীমান্তেও। সেখানে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে প্রথমে উঠছেন পুরুষরা। তার পর কোলের সন্তানকে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন নারীরা। সূত্র: আনন্দবাজার।

আরও পড়ুন

×