ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

নাগরিকত্ব আইন: ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নতুন করে উত্তেজনা

নাগরিকত্ব আইন: ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নতুন করে উত্তেজনা

নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে দক্ষিণ মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানে জড়ো হন শিক্ষার্থী ও সমাজকর্মীরা- এনডিটিভি

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ | ০৯:৫৫ | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ | ১০:০৬

বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন ঘিরে শুক্রবার আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। এদিন প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে দিল্লির জামা মসজিদসহ বহু জায়গায় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অনেকে আটক হন। মহারাষ্ট্রের মুম্বাই শহরে চার কিলোমিটারের ব্যবধানে নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ হয়। এ আইন নিয়ে সবচেয়ে বেশি সরব থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গেও মিছিল হয়েছে। তবে এই প্রথম কলকাতার রাস্তায় মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট জোটবদ্ধভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

আইনটির প্রতিবাদে রাস্তায় বিক্ষোভ করতে এসে এরই মধ্যে উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর আবারও বড় সহিংসতার শঙ্কায় নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় এই রাজ্য। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে রাজ্যের ৭৫ জেলার মধ্যে বর্তমানে ২১টিতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। খবর এনডিটিভি ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।

শুক্রবারও মোদি সরকারের কড়া সমালোচনা করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'যতদিন জীবিত আছি, বাংলায় নাগরিকত্ব আইন করতে দেব না। কাউকে এই রাজ্য বা দেশ ছেড়ে বাইরে যেতে হবে না। এমনকি বাংলায় আটক ব্যক্তিদের জন্য কোনো ক্যাম্পও হবে না।'

এদিকে, ভারতীয়দের 'হিন্দুত্ব' নিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবতের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএর একটি শরিক দলের মন্ত্রী রামদাস অটওয়ালে। তিনি বলেন, ভারতীয় মানেই হিন্দু- এ কথা ঠিক নয়। এক সময় এ দেশে প্রচুর বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ছিলেন। এখনও রয়েছেন। আছেন শিখ, খ্রিস্ট্রান, পার্সি, জৈন ধর্মাবলম্বীরাও।

নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ করতে জামা মসজিদের বাইরে জমায়েত হয় বিপুল সংখ্যক মানুষ- এনডিটিভি

শুক্রবার দিল্লির জামা মসজিদের সামনে বিক্ষোভে যোগ দেয় কয়েক হাজার মানুষ। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রাজ্যজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে পুলিশের টহল অব্যাহত আছে।

জামা মসজিদের সামনে বিক্ষোভে যোগ দেন কংগ্রেস নেতা অলকা লাম্বা এবং দিল্লির সাবেক বিধায়ক শোয়েব ইকবাল। দিল্লি পুলিশ সূত্র জানায়, নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি সংগঠন এদিন মিছিলের ডাক দেয়। ফলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়। তার মধ্যে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ ভবন, সিলামপুর ও জাফরাবাদ। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই এদিন শত শত বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসেন। উত্তরপ্রদেশ ভবনের সামনে জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে উত্তরপ্রদেশ ভবন। আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে। ড্রোনের সাহায্যেও নজরদারি চালানো হচ্ছে। পুলিশ আরও জানায়, বিক্ষোভকারীরা এগোনোর চেষ্টা করলে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়।

এদিকে, দলিতদের সংগঠন ভিম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদের মুক্তি দাবিতে কয়েকশ' বিক্ষোভকারী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করেন। তবে সেখানে আগে থেকেই বহু পুলিশ মোতায়েন থাকায় তারা আর এগোতে পারেননি। আরও কয়েক স্থানে আজাদের মুক্তি দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে।

নতুন নাগরিকত্ব আইন ও প্রস্তাবিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন তালিকা (এনআরসি) নিয়ে শুক্রবার মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ হয়েছে। দুটি মিছিলের ঘটনাস্থলও ছিল কাছাকাছি। দক্ষিণ মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে যোগ দেন শিক্ষার্থী ও সমাজকর্মীরা। এর চার কিলোমিটার দূরে আগস্ট ক্রান্তি ময়দানে এই আইনের সমর্থনে বিপুল জনসমাগম হয়। নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় মিছিলে যোগ দেওয়া এক ব্যক্তি বলেন, 'নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, এনআরসি ও এনপিআর কেবল ধর্মীয় ইস্যুই নয়, এটা সকলকে প্রভাবিত করবে। আমরা এগুলো চাই না।'

এদিকে আগস্ট ক্রান্তি ময়দানে নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে মিছিল বের হয় মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশের নেতৃত্বে।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির প্রতিবাদে অশান্ত বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ। বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি ধরপাকড় চলছে। এরই মধ্যে ১৯ জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্নপ্রান্তে প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ করছে মানুষ। শুক্রবারও প্রবল বিক্ষোভের আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার রাত থেকেই রাজ্যের অধিকাংশ জেলায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

×