উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন কেন মোদির জন্য পরীক্ষা

সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২৩:৫৫
ভারতের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য উত্তরপ্রদেশ। দেশটির সবচেয়ে বড় এ রাজ্য জয় মানে দিল্লির মসনদ দখলের পথে কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকা। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য লোকসভা নির্বাচনের আগে এই রাজ্যে বৃহস্পতিবার বিধানসভার ভোট শুরু হয়েছে। এ ভোটকে দিল্লি দখলের 'সেমিফাইনাল' হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মিনি ইন্ডিয়াখ্যাত রাজ্যের নির্বাচনকে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির জন্য পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার বিবিসির বিশ্নেষণে এসব তথ্য উঠে আসে।
চলতি ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ভারতের পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হবে। তবে সবার নজর উত্তর প্রদেশের দিকে। এটি ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য, সেখানে প্রায় ২৪ কোটি মানুষের বাস। বলা হয়ে থাকে, এটি পৃথক দেশ হলে জনসংখ্যায় বিশ্বে পঞ্চম দেশ হতো। এ রাজ্যে বিধানসভা আসন ৪০৩টি, যা ভারতের অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে অনেক বেশি। লোকসভায় আসন ৮০টি- এসব কারণে বলা হয়, যে দল উত্তরপ্রদেশে জয়ী হয়, তারাই দেশ শাসন করে। এ রাজ্য থেকে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুসহ বেশ কয়েকজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। উত্তরপ্রদেশে বর্তমানে ক্ষমতায় বিজেপি। তারা বহুল বিতর্কিত মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে এবারের নির্বাচনে জয় পেতে মরিয়া। বিজিপিকে হটাতে কোমর বেঁধে নেমেছে একদিকে কংগ্রেস, অন্যদিকে সমাজবাদী পার্টি (এসপি)।
নরেন্দ্র মোদি
এর আগে ২০১৭ সালে 'মোদি ম্যাজিকে' ভূমিধস জয় পায় বিজেপি। প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩১২টি আসনে জেতে তারা। সে সময়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ন্যাসী থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া যোগী আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেয় গেরুয়া শিবির। আগামী ১০ মার্চ এ রাজ্যের ফলাফল ঘোষণাতে তারই নেতৃত্বে বড় জয়ের প্রত্যাশা করছে বিজেপি। এ নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে কয়েক মাসে প্রায় ১২ বার রাজ্য সফর করেছেন মোদি। বিভিন্ন জনসভা ও সমাবেশ করে বিজেপিকে আরেকবার সুযোগ দেওয়ার জন্য ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানে কৃষক আন্দোলন, করোনা অব্যবস্থাপনা ও মহামারিকালে গঙ্গা নদীতে বহু মানুষের মরদেহ উদ্ধারসহ বিভিন্ন কারণে মোদির দলের জনপ্রিয়তা কমেছে। তা সত্ত্বেও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, অর্থনীতির উন্নয়ন এবং ধর্মীয় বিভেদ উস্কে দিয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজেপির নেতারা।
এবারে নির্বাচনে যোগীর প্রধান প্রতিপক্ষ অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বাধীন এসপি। সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি বিজেপির ডজনখানেক মন্ত্রী ও বিধায়ক বাগিয়ে নিয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন। আঞ্চলিক গোত্রপতিদের নিয়ে বৃহৎ জোট গঠন করেছেন তিনি। এ ছাড়া দলিতদের নেতৃত্বাধীন বিএসপির আইকন মায়াবতীও পুনরায় লক্ষেষ্টৗ দখলের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। কয়েক দশক ধরে সেখানে ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এই নির্বাচনে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নেতৃত্বে সবার নজর কেড়েছে। বিশেষ করে নারী ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন এই নেত্রী।
লোকসভা ও বিধানসভায় উত্তরপ্রদেশ বড় আকার ও বেশি ভোটারের প্রদেশ হওয়ায় নির্বাচনী মাঠ 'যুদ্ধক্ষেত্রে' পরিণত হয়েছে। ১৯৮৯ সাল থেকে এ রাজ্যে টানা দ্বিতীয়বার কোনো দল ক্ষমতায় আসেনি। বিজেপি সেই প্রথা ভাঙতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা এ নির্বাচনকে হিন্দু জাতীয়তাবাদের রাজনীতির গণভোট হিসেবে দেখছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে উত্তরপ্রদেশের ভোট মোদির জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তারা সেখানে পরাজিত হলে বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী মোদিকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করছে- এমন ইঙ্গিত হিসেবে সাত ধাপের ওই ভোটকে বিবেচনায় নেওয়া হবে।
- বিষয় :
- নরেন্দ্র মোদি
- ভারত
- উত্তর প্রদেশ