ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

টিভি দেখার দিনগুলো

প্রথম টিভি কিনেছিলাম ঋণ করে

প্রথম টিভি কিনেছিলাম ঋণ করে

দিলারা জামান

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২১ | ১২:০০

একটা সময় বিনোদনের প্রধান মাধ্যম ছিল টেলিভিশন। প্রযুক্তির নিত্যনতুন উদ্ভাবনে এই টেলিভিশন এখন সবার ঘরে শোভা পেলেও দেখার সময় কই! মোবাইল আর ইন্টারনেটের কল্যাণে আঙুলের স্পর্শে চোখের পলকেই দৃশ্যমান বিনোদনের হাজারো উপাদান। ২১ নভেম্বর বিশ্ব টেলিভিশন দিবস। এ দিনটি সামনে রেখে বরেণ্যদের টেলিভিশন দেখার স্মৃতি নিয়ে আয়োজন...

বিস্ময় জাগানিয়া টেলিভিশনই বিশ্বকে প্রথম ঘরের মধ্যে এনেছে। এদেশে প্রথম টেলিভিশনের কার্যক্রম চালু হয় ১৯৬৪ সালে। ওই বছর ২৫ ডিসেম্বর সাদা-কালো সম্প্রচার শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এর এক বছর পরই আমি টেলিভিশনে অভিনয় শুরু করি। তখন রাজউক ভবন ছিল টিভি ভবন। টেলিভিশনের শহীদ কাদরী ও জাকারিয়া ভাই বাসায় এসে ছোট একটি নাটিকায় অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে আমাদের গোপীবাগের বাসায় এসেছিলেন। এর আগে অবশ্য নিজেকে ঝালাই করতে মঞ্চেও কিছু কাজ করেছি। এভাবেই অভিনয়ের শুরু। বিটিভিতে তখন সরাসরি টেলিকাস্ট হতো। একেবারে মঞ্চের মতো। মঞ্চের অভিজ্ঞতা থাকায় টেলিভিশনে কাজ করা আমার জন্য অনেক সহজ হয়েছিল।

সন্ধ্যায় টিভি অন হলেও বেলা ২টায় উপস্থিত থাকতে হতো। লম্বা সময় ধরে রিহার্সাল করতাম। ক্যামেরা ফিক্সড থাকত। যেখানে যেখানে দাঁড়াতে বলা হতো সেখানেই দাঁড়াতাম। সব সময় সতর্ক থাকতে হতো। একটু এদিক-ওদিক হলেই ফ্রেমের বাইরে চলে যাওয়ার ভয় ছিল। যখন নাটক করতে যেতাম অন্য রকম পরীক্ষার মতো মনে হতো। ৫০ বছর আগের কথা। আলাউদ্দিন আল আজাদের লেখা 'মায়াবী প্রহর' নামে ওই নাটিকায় বেবী জামান, সৈয়দ আলী আহসান সিডনী, লিলি চৌধুরী ছিলেন আমার সহশিল্পী। সরাসরি সম্প্রচার হতো বলে নিজের অভিনয় দেখার সুযোগ পেতাম না। ফলে শোধরানোর সুযোগ কম ছিল। তবে বাইরে বেরুলেই অনেকে অভিনয়ের প্রশংসা করতেন। তখন তো সবার বাসায় টিভি ছিল না। একটি মহল্লায় দু'একজনের বাসায় টিভি দেখা যেত। সন্ধ্যার পর অল্প সময়ের জন্য সেটা চালু হতো। যে বাসায় টেলিভিশন থাকত, সে বাসায় বসার ঘরের আশপাশে সবাই গিয়ে ভিড় করত।

এক অন্যরকম উৎসবমুখর পরিবেশ। টিভি দেখাকে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যে নানা রকম খাওয়া-দাওয়াও হতো। বাসায় টিভি ছিল না বলে মন খারাপ হতো মাঝেমধ্যে। নিজের বাসায় আমি টিভি দেখার সুযোগ পেয়েছি বিয়ের পর। ঋণ করে বাসায় টিভি কিনেছিলাম। ছোট্ট সাদা-কালো টেলিভিশন সেটটি অনেক যত্ন করে বাসায় এনেছিলাম। মাসে মাসে অল্প অল্প টাকা জমিয়ে ঋণ শোধ করেছি। ঝকঝকে টিভি দেখার সুযোগ ছিল না। বাসার বাইরে বাঁশের মাথায় সিলভার রঙের অ্যান্টেনা বাঁধা। ছবি অস্পষ্ট হলে অ্যান্টেনা ঘুরিয়ে নিতাম। টিভি দেখার চেয়ে অ্যান্টেনা ঘোরানো নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন অনেকে। বড় পর্দায় যাদের সিনেমা দেখতে দেখতে বড় হয়েছি, সেসব মানুষকে দেখেছি ছোট্ট একটা বাক্সের মধ্যে। অদ্ভুত অনুভূতি। এখনও সবকিছু চোখের সামনে ভাসে। এক সময় সাদা-কালো টিভির অবসান হলো।

এলো রঙিন টিভির যুগ। এটা ৮০ সালের পরের কথা। প্রথম দিন যখন রঙিন টিভি দেখলাম, তখন অন্যরকম ভালো লাগা ছুঁয়ে যেত। সবকিছুই যেন জীবন্ত। গাছগুলো সবুজ। যার যে রং, সেটাই দেখা যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দৃশ্য কত চমৎকার! মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। এখন তো বিনোদনের অনেক কিছু হয়েছে। সবকিছুই হাতের মুঠোয়। সারা পৃথিবীর দরজা খোলা। যখন ইচ্ছা হয় তখন তারা দেখতে পাচ্ছেন। সবকিছুতে বৈচিত্র্য। যে জন্য দর্শকদের পছন্দ অন্যরকম হয়েছে। আমাদের সময় বিনোদনে মাধ্যম ছিল সিনেমা ও টেলিভিশন। মাঝেমধ্যে সেই অতীতে ফিরে যেতে মন চায়। তরুণ প্রজন্ম টেলিভিশন দেখা কমিয়ে দিয়েছে। তারা এখন আকাশ সংস্কৃতির দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েছে।

আরও পড়ুন

×