পেনশন সমর্পণকারীদের আবেদন

ফাইল ছবি
মো. নজরুল ইসলাম
প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০৮:৫৯
জুলাই ১৯৯৪ থেকে জুন ২০১৭ পর্যন্ত সময়ে সরকারি কর্মচারীরা শতভাগ পেনশন সমর্পণ করতে পারতেন। বিনিময়ে তারা পেনশনের টাকা একসঙ্গে তুলে নিতে পারতেন। সে বিধান মেনেই আমরা শতভাগ পেনশন সমর্পণ করেছিলাম প্রধানত ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, মেয়ের বিয়ে ও অ্যাকাউন্টস অফিসের হয়রানি থেকে বাঁচতে। চলমান বাজারমূল্য ও ব্যাংকে রক্ষিত এফডিআর থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ বিবেচনায় তখনকার প্রেক্ষাপটে তা সম্পূর্ণ সঠিক ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি ও সরকারের ব্যবসাবান্ধব সুদের হার হ্রাস পলিসি আমাদের কপর্দকহীন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে রূপান্তর করেছে। সংসার চালাতে গিয়ে আমাদের এফডিআর ভেঙে খেতে হয়েছে। গত সরকার ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর সমর্পিত পেনশন অবসরের ১৫ বছর পরে প্রত্যর্পণের বিধান চালু করেছিল। কিন্তু তা বাস্তবসম্মত কিংবা আমাদের জন্য প্রকৃত কল্যাণকর ছিল না। কারণ অবসরের পরে ১৫ বছর পূর্তির আগেই আমাদের অনেকে মৃত্যুবরণ করেন। ফলে উক্ত পুনর্বহাল আদেশ তাদের কোনো কাজে লাগে না।
আমরা ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সরকারের কাছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আবেদন জমা দিয়েছি। কিন্তু তখনকার সরকার আমাদের বাস্তবসম্মত ও মানবিক আবেদনে সাড়া দেয়নি। আজ আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। কারণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গঠিত হয়েছে জনগণের এ সরকার। আমরা বিশ্বাস করি, ন্যায়ভিত্তিক জনকল্যাণ নিশ্চিত করাই এ সরকারের একমাত্র বিবেচ্য। আমরা আমাদের আবেদনের মানবিক দিক-সংবলিত বিস্তারিত যৌক্তিকতা সদয় বিবেচনার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। ১০ বছর পরে আমাদের সমর্পিত পেনশন পুনর্বহালের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। এতে ব্যয় হবে আনুমানিক মাত্র ১৯২ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে কর্মচারীদের বেতন ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু আমরা কোনো পেনশন পাই না; বছরে মাত্র দুটি বোনাস পাই। আমাদের বোনাস ৫ শতাংশ বৃদ্ধি সরকার করেনি। অবসর সময়ের তুলনায় আমাদের আয় ৫৪ শতাংশ কমেছে। তখনকার ১০০ টাকার আয় কমে ৪৬ টাকা হয়েছে। তার কারণ সরকার ব্যাংক/সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ হ্রাস করেছে। মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১০০ টাকার পণ্যের মূল্য এখন ২৬০ টাকায় পৌঁছেছে।
আমাদের বিপন্নতার কারণ বিগত সরকারের নীতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা। আমাদের অপরাধ শুধু, আমরা বিএনপি সরকারের ১০০ শতাংশ পেনশন সমর্পণের সুযোগ নিয়েছি। সে সুযোগ আমরা লাভবান হতে নিইনি। নিয়েছি জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমাদের কোনো সঞ্চয় ছিল না। সঞ্চয় না থাকার কারণও আমাদের সাবসিস্ট্যান্স অ্যালাউন্সের চেয়েও কম বেতন, যা ভারতের বেতনের তিন ভাগের এক ভাগ। অথচ ভারতের মাথাপিছু আয় আমাদের চেয়ে কম।
ভারতে ৬০ শতাংশ পেনশন সবাইকে নিতে হয়। সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ সমর্পণ করা যায়। সেই ৪০ শতাংশ পেনশনও ১৫ বছর পরে পুনর্বহাল করা হয়। তারা ৬০ শতাংশ পেনশন পেতে থাকেন। ফলে তাদের অবস্থা আমাদের মতো সংকটাপন্ন নয়। শতভাগ সমর্পণের বিনিময়ে আমাদের উত্তোলিত টাকা (এককালীন) গড়ে ৬ বছর ৪ মাসে সমন্বয় হয়ে গেছে। সেখানে আমরা ১০ বছর পরে পুনর্বহাল চেয়েছি। শতভাগ সমর্পণ না করে অবসরের সময় যদি আমরা পেনশন নিতাম, তাহলে আমাদের জন্য সরকারকে যা ব্যয় করতে হতো, ১০ বছর পর পুনর্বহাল করলে সরকারকে তার চেয়ে অনেক কম ব্যয় করতে হবে। অনেকে এটি আমাদের অপরাধ বলে মনে করেন, যা খুবই অন্যায্য এবং অমানবিক। আমাদের দাবি মেনে নিয়ে ১০ বছর পরে পুনর্বহাল করলে লাগবে আনুমানিক ১৯২ কোটি টাকা, যা ৭ লক্ষাধিক কোটি টাকার বাজেটের অতি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ। আশা করি, বর্তমান সরকার তা বিবেচনা করবে।
মো. নজরুল ইসলাম: পরিচালক (অব.) ডিই ও সভাপতি, শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী গ্রুপ
- বিষয় :
- পেনশনের টাকা
- সরকারি কর্মচারী