ইসরায়েলি আগ্রাসনের শেষ কোথায়?

ইসরায়েলি আগ্রাসন - (ফাইল ছবি)
রাজা শাহাদেহ
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪ | ০৮:৫৮
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের শুরুতে যখন বেসামরিক নাগরিকদের ওপর একের পর এক বোমাবর্ষণ শুরু হয়েছিল, তখন মনে কিছু প্রশ্নের উদয় হয়; এর পর আমরা ফিলিস্তিনিরা কীভাবে ইসরায়েলিদের সঙ্গে বাস করব? ১২ মাস পর গাজা ধ্বংস ও হত্যাকাণ্ডে কোনো রকম ছাড় না দিয়ে ইসরায়েল এই সংঘাতকে পশ্চিম তীরে ছড়িয়ে দিয়েছে। এখানে সাত শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং লেবানন ও ইরানে তাদের ক্রমবর্ধমান আক্রমণে প্রশ্নটি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
গত ১২ মাসে অনেক নৃশংস ঘটনা ঘটেছে। ফিলিস্তিনিরা ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করলেও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ৪২ সহস্রাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। তাদের মধ্যে ১৭ সহস্রাধিক নারী ও শিশু, অন্তত ২৮৭ সাহায্যকর্মী এবং ১৩৮ সংবাদকর্মী। এতে গাজার দুই-তৃতীয়াংশ ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে যারা রয়ে গেছে তাদের হিসাবে ধরা হয়নি। ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা ধ্বংসপ্রাপ্ত। এই ১২ মাসের যুদ্ধ থেকে এখানে শুধু একটি হিসাব দিচ্ছি, ২৫ সেপ্টেম্বর ইসরায়েল একটি ট্রাকে বেনামি ৮৮টি মৃতদেহ গাজায় পাঠায়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছে। তারা একক বিমান হামলায় বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যা বা বন্দি করাকে যুদ্ধের একটি প্রধান উদ্দেশ্য করে তুলেছেন, যার জন্য কোনো মূল্য অতিরিক্ত বলে মনে করা হয়নি। সিনওয়ারের অবস্থান সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেলে সুনির্দিষ্ট নিশানায় বোমা নিক্ষেপের পরিবর্তে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ২ হাজার পাউন্ড (৯০০ কেজি) বোমা বর্ষণ করে শত শত নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা ও আহত করেছে। গত এক বছরে এ ধরনের ঘটনা বহুবার ঘটেছে এবং বেসামরিক এলাকায় বোমা বর্ষণের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে এ ধরনের বোমা সরবরাহ বন্ধ করার পরেও তা অব্যাহত রয়েছে।
ইসরায়েলি জনগণ অবশেষে জেগে উঠবে এবং ফিলিস্তিনিদের অতীত ও বর্তমানের ক্ষতি স্বীকার করবে– এমন সম্ভাবনা খুব কম। মে মাসে পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৩৯ শতাংশ ইসরায়েলি গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক প্রতিক্রিয়া প্রায় সঠিক বলে সম্মতি দিয়েছে। ৩৪ শতাংশ এটি যথেষ্ট সীমা পেরিয়ে যায়নি এবং মাত্র ১৯ শতাংশ এটি খুব বেশি এগিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে। এমন চিন্তাভাবনা জনসাধারণের মাথায় আসার সম্ভাবনা দূরবর্তী বলে মনে হচ্ছে।
এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলের প্রতি প্রশ্নাতীত সমর্থনের জোয়ার খুব শিগগির কমে যাবে– এমন আশাও নেই। অথবা মার্কিন সরকার ভাবতে শুরু করবে, দেশটির প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন ইসরায়েলের জন্য আত্মপরাজিত ও ক্ষতিকর এবং সেই সঙ্গে খুবই ব্যয়বহুল। উপরোক্ত সব কিছুর পরও মর্মান্তিক সত্যটি হলো, ফিলিস্তিনিরাই এখানে মূল ইস্যু। ১৯৬৭ সালে সামরিক সাফল্যের পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে দায়ান ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমরা বর্তমানে একটি সাম্রাজ্য।’ ৫৭ বছর পরও ইসরাইল শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। কারণ তারা বারবার ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছে। হিজবুল্লাহর ডানা কাটা নিয়ে ইসরায়েলের অনুভূত সাফল্য ইতোমধ্যে তাদের উচ্ছ্বসিত করেছে। তারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করেছে, এটি গাজায় ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করে এগিয়ে যেতে পারে এবং বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার জন্য পুরো ফিলিস্তিন নির্বিচারে দখল করবে।
তবুও বিভিন্ন এলাকায় লড়াই করার পরও এর অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর মার্কিন সমর্থনের ওপর নির্ভরশীলতা নিয়ে বারবার অপমানিত হওয়ার পরও তা অপরিবর্তিত। শিগগির এটা স্পষ্ট হবে– ইসরায়েলকে একের পর এক যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। এই পথে চলতে থাকলে তারা জাতি হিসেবে চিরকাল অবরোধের মধ্যে থাকবে। ইসরায়েল যখন উপলব্ধি করবে, ফিলিস্তিনিদের নির্মূলের খরচ অনেক বেশি, তখনই দুই জাতি আমাদের ভাগাভাগি করা মাতৃভূমিতে শান্তিতে একসঙ্গে বসবাসের পথ খুঁজে পাবে।
রাজা শেহাদেহ: ফিলিস্তিনি আইনজীবী ও লেখক; দ্য গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
- বিষয় :
- ইসরায়েলি আগ্রাসন
- ইসরায়েলি বর্বরতা