নতুন আগমনী কলরেট
সময়োচিত হলেও সুবিবেচিত নয়

--
প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ১৩:১৮
আগমনী আন্তর্জাতিক কলরেটের সর্বনিম্ন মূল্য পুনর্নির্ধারণে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে যে নির্দেশনা জারি করেছে, তা সময়োচিত হলেও কতখানি সুবিবেচনাপ্রসূত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমাদের মনে আছে, এর আগে কলরেট পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। দুই বছর পর নতুন কলরেট নির্ধারণ করা যেতেই পারে। বস্তুত দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির এই যুগে যে আরও ঘন ঘন কলরেট পরিবর্তন করা দরকার, অন্তত বছরে একবার, সেই প্রয়োজনীয়তা সমকালের পক্ষে আমরা আগেও ব্যক্ত করেছি। এ ক্ষেত্রে যেভাবে সর্বনিম্ন দেড় টাকা আগমনী কলরেট থেকে দুই বছরের মাথায় ৫১ পয়সায় নামিয়ে আনা হয়েছে, তাও অস্বাভাবিক হতে পারে না। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর এই পর্যবেক্ষণ যথার্থ যে, দিন দিন সরাসরি চ্যানেলে ভয়েস কল কমছে। আন্তর্জাতিক ভয়েস কলের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের অস্তিত্বের সংকট তৈরি হচ্ছে। ব্যবসা গুটিয়েও নিয়েছেন অনেকে।
সঙ্গত কারণেই কমছে সরকারের রাজস্বও। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ও নমনীয় কলরেট নির্ধারণ নিশ্চয়ই সময়োচিত। এতে করে বৈধ পথে সরাসরি আগমনী ফোনকলের সংখ্যাও হয়তো প্রত্যাশামতো বাড়বে। কিন্তু এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে এ খাতের সঙ্গে জড়িত সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা জরুরি ছিল। দুর্ভাগ্যবশত আমরা সেটা দেখছি না। আমরা বরং দেখছি, এই খাতের বড় অংশীজন মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব থেকে রীতিমতো চিঠি দিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয়েছে। তারা বলছে, সর্বনিম্ন কলরেট থেকে রাজস্ব হিসাব করায় তাদের ভাগ কমে যাবে। একই সঙ্গে কমবে সরকারের রাজস্বও। আমরা জানি, বেসরকারি অংশীজনের রাজস্ব কমে যাওয়ার ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরও কম আয়কর পাবে।
অস্বীকার করা যাবে না যে, এতে করে আগমনী ফোনকলের আন্তর্জাতিক প্রবেশপথ সংস্থাগুলো বা আইডব্লিউজিগুলোর আয় খানিকটা বাড়বে। কারণ সর্বোচ্চ কল নির্ধারণের এখতিয়ার যেমন তাদের হাতে থাকছে, তেমনই রাজস্ব প্রদান করতে হবে কেবল সর্বনিম্ন কলরেট ধরে। আমরা মনে করি, একটি পক্ষকে সুবিধা দিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত টেকসই হতে পারে না। সরাসরি আগমনী ফোনকল কমে যাওয়ার ফলে ওই সংস্থাগুলোর ব্যবসায়িক দিক দেখার দায়িত্ব নিশ্চয়ই কর্তৃপক্ষের রয়েছে। কিন্তু সরকারের রাজস্ব কমার ঝুঁকি তৈরি করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার নীতি কতটা সঙ্গত? সব পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠাই বরং কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হওয়া উচিত। সবচেয়ে বড় কথা, গ্রাহক স্বার্থ দেখতে হবে সবার আগে। সর্বনিম্ন কলরেট অনুযায়ী রাজস্ব প্রদান করে সর্বোচ্চ কলরেট নির্ধারণের এখতিয়ার উন্মুক্ত করে দিলে গ্রাহকদের লাভ কী? আমরা মনে করি, এখনও নতুন আগমনী কলরেট পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। বিটিআরসির উচিত হবে সব পক্ষের সঙ্গে বসে নতুন, ভারসাম্যপূর্ণ এবং সর্বোপরি গ্রাহকবান্ধব কলরেট নির্ধারণ করা। এটাও মনে রাখতে হবে, শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো গেলে অবৈধ পথে আগমনী কল যেমন কমানো যাবে, তেমনই বাড়ানো যাবে অংশীজনের আয় ও সরকারের রাজস্ব।
- বিষয় :
- কলরেট