ইসলাম ও সমাজ
বৃষ্টিতে ঝরে পড়ে আল্লাহর নিয়ামত

প্রতীকি ছবি
মো. শাহজাহান কবীর
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৫ | ০০:১৫
বৃষ্টি মহান আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। আর আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণের সঙ্গে আল্লাহ অনেক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকেন। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের রিজিক উৎপন্ন হয়ে থাকে। আল্লাহতায়ালা সুরা শুরার ২৮ আয়াতে এরশাদ করেন, মানুষ নিরাশ হয়ে যাওয়ার পর তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তাঁর রহমত ছড়িয়ে দেন। তিনিই সব গুণে প্রশংসিত প্রকৃত অভিভাবক।
বৃষ্টির পানি আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত ও রিজিক নিয়ে আসে। বৃষ্টির পানিতে মৃত ভূমি সজীব হয়। ফল-ফসল উদ্গত হয়।
আল্লাহতায়ালা সুরা কাফের-এর ৯ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘আমি আকাশ থেকে বর্ষণ করি কল্যাণকর বৃষ্টি, আর তা দিয়ে সৃষ্টি করি বাগবাগিচা ও কর্তনযোগ্য শস্যদানা।’
সুরা নাহলের ৬৫ আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন এবং তা দিয়ে তিনি ভূমিকে তাঁর মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে এমন সম্প্রদায়ের জন্য, যারা কথা শোনে।’
হাদিস শরিফে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) বৃষ্টির সময় এই দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা সায়্যিবান নাফিআহ।’ ‘হে আল্লাহ! তুমি এ বৃষ্টিকে প্রবহমান ও উপকারী করে দাও।’ (সহিহ বুখারি)
বৃষ্টি আল্লাহর রহমত ও করুণা বর্ষণের সময়। তাই এটি দোয়া কবুলেরও উপযুক্ত সময়।
অপর হাদিসে বর্ণিত, হজরত সাহল বিন সাদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দুটি সময়ে দোয়া প্রত্যাখ্যান করা হয় না। আজানের সময়ের দোয়া এবং বৃষ্টির সময়ের দোয়া।’ (মুস্তাদরাক, তাবারানি, সহিহুল জামে)
বৃষ্টি শেষ হয়ে এলে রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে এ দোয়া পড়ার তাগিদ দিয়েছেন, ‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রাহমাতিহ।’ ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে।’ (সহিহ বুখারি)
হজরত আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত– তিনি বলেন, ‘আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম; তখন বৃষ্টি এলো। রাসুল (সা.) তখন তাঁর গায়ের পোশাকের কিছু অংশ সরিয়ে নিলেন, যাতে গায়ে বৃষ্টির ছাঁট লাগে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কেন এমনটি করলেন?’ তিনি বললেন, ‘কারণ বৃষ্টি তাঁর প্রতিপালকের কাছ থেকে মাত্রই এসেছে।’ (সহিহ মুসলিম)
দমকা হাওয়া বইতে দেখলে মহানবী (সা.) উদ্বিগ্ন হতেন। বৃষ্টি শুরু হলে তিনি খুশি হয়ে উঠতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘আমার আশঙ্কা হয়, আমার উম্মতের ওপর কোনো গজব আসে কিনা।’ বৃষ্টি দেখলেই তিনি বলতেন, ‘এটি আল্লাহর রহমত।’ (সহিহ মুসলিম)
হজরত আয়েশার (রা.) বরাতে আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) আকাশে মেঘ দেখলে নফল ইবাদত ছেড়ে দিতেন। তিনি এই বলে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে বৃষ্টির উপকারী দিক কামনা করছি। আর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইছি।’ (সুনানে আবু দাউদ)
অতিরিক্ত বৃষ্টিতে নবীজি (সা.) এই দোয়া করতেন– ‘আল্লাহুম্মা হাওয়া-লাইনা, ওয়ালা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আ-কাম ওয়াজ জিরাব ওয়া বুতুনিল আওদিয়া; ওয়া মানাবিতিস শাজার।’ (বুখারি)
অর্থ ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে বৃষ্টি দিন, আমাদের ওপরে নয়। হে আল্লাহ! পাহাড়-টিলা, খাল-নালা এবং উদ্ভিদ গজানোর স্থানগুলোয় বৃষ্টি দিন।’
ড. মো. শাহজাহান কবীর: চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
- বিষয় :
- ইসলাম প্রচার