দিবস
রক্ত দিলে মানবিক অনুভূতি জেগে ওঠে

..
সঞ্জয় হরিজন মাখন
প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৫ | ০০:৩১
সৃষ্টিকর্তার সেরা প্রাণীর শরীরে বয়ে চলা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো রক্ত। এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান একজন সুস্থ ব্যক্তির শরীরের অভ্যন্তরে থাকা যতটা অপরিহার্য, তেমনি একজন অসুস্থ ব্যক্তির শরীর সুস্থ করার জন্যও জরুরি। রক্তদান ব্যক্তির নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে। বিভিন্ন কারণে গুরুত্বের দিক থেকে রক্তদানকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর জুনের ১৪ তারিখ ‘বিশ্ব রক্তদাতা দিবস’ পালিত হয়। এর উদ্দেশ্য দেশের সর্বস্তরের ব্যক্তিকে এই মহৎ কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসাহিত করা।
সহজ পরিভাষায় বললে, যারা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন, তাদেরসহ সাধারণ জনগণকে রক্তদানে উৎসাহিত করাই এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য।
রক্তদানে রক্তদাতা বিভিন্নভাবে উপকৃত হন। যেমন একজনের দান করা রক্ত আরেকজন মানুষের জীবন বাঁচায়; রক্তদানের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোনম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয় এবং রক্তদানের দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্তকণিকার জন্ম হয়ে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়।
বছরে তিনবার রক্তদান মানবদেহের লোহিত কণিকার প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে নতুন কণিকা তৈরির হার বাড়িয়ে দেয়। উল্লেখ্য, রক্তদানের মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়। নিয়মিত রক্ত দিলে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। আরেক গবেষণায় দেখা যায়, যারা বছরে দুইবার রক্ত দেন, অন্যদের তুলনায় তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। চার বছর ধরে ১২০০ লোকের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়েছিল। নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে নিজের শরীরে বড় কোনো রোগ আছে কিনা, তা বিনা খরচে জানা যায়। যেমন– হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, এইচআইভি (এইডস) ইত্যাদি। প্রতি পাইন্ট (এক গ্যালনের আট ভাগের এক ভাগ) রক্ত দিলে ৬৫০ ক্যালরি শক্তি খরচ হয়। অর্থাৎ ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া রক্তদান উচ্চ রক্তচাপ কমায়।
১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিকভাবে রক্তদান দিবস পালন শুরু হয়। ২০০০ সালে ‘নিরাপদ রক্ত’ থিম নিয়ে পালিত হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। ২০০৪ সালে প্রথম পালিত হয়েছিল ‘বিশ্ব রক্তদান দিবস’। ২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনের পর থেকে প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই দিবস পালনের জন্য তাগিদ দিয়ে আসছে।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতিবছর ৮ কোটি ইউনিট রক্ত স্বেচ্ছায় দান করা হয়। এর মাত্র ৩৮ শতাংশ সংগ্রহ হয় উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে, যেখানে বাস করে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া এখনও বিশ্বের অনেক দেশে মানুষের রক্তের চাহিদা হলে নির্ভর করতে হয় নিজ পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের রক্তদানের ওপর। আর অনেক দেশে পেশাদারি রক্তদাতা অর্থের বিনিময়ে রক্ত দান করে আসছেন রোগীদের, যা মোটেও কাম্য নয়। অথচ বিশ্বের নানা দেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে জানা যায়, ‘নিরাপদ রক্ত সরবরাহ’ করার মূল ভিত্তি স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে দান করা রক্ত।
রক্ত যেমন একদিকে জীবন রক্ষা করে, অন্যদিকে সঠিকভাবে রক্তদাতা নির্বাচিত না করে রক্ত নিলে জীবন বিপন্নও হতে পারে। নিরাপদ রক্তের প্রাপ্যতা নির্ভর করে সঠিক রক্তদাতা নির্বাচন, নির্ভরযোগ্য স্ক্রিনিং ও রক্তের উপাদানের সঠিক ব্যবহারের ওপর। রক্ত এবং রক্তজাত দ্রব্যের সঞ্চালন প্রতিবছর লাখ লাখ জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে।
সঞ্জয় হরিজন মাখন: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
[email protected]
- বিষয় :
- দিবস