ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

অন্যদৃষ্টি

বেকারত্বের বাধা ডিঙাতে প্রয়োজন...

বেকারত্বের বাধা ডিঙাতে প্রয়োজন...

প্রতীকী ছবি

ফাহিমা আক্তার

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫ | ০০:৪১

বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু দেশের অন্ধকারাচ্ছন্ন দিক বেকারত্ব। হাজার হাজার তরুণ-তরুণী প্রতিদিন চাকরির সন্ধানে হতাশ হয়ে ঘুরছেন। তাই বেকারত্বের প্রকৃত কারণ বিশ্লেষণ ও কার্যকর সমাধানের পথ খোঁজা জরুরি।

বেকারত্ব জটিল সমস্যার নাম, যার মূল কারণ– ১. শিক্ষার মানের দুর্বলতা: দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিক বাজারের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। বহু গ্র্যাজুয়েট আজও হাতে শুধু সার্টিফিকেট নিয়ে বের হন, বাস্তবে যার মূল্য সামান্য। ২. কারিগরি শিক্ষার অবহেলা: কারিগরি ও মেকানিক্যাল শিক্ষা প্রথাগত শিক্ষার চেয়ে পিছিয়ে থাকায় তরুণরা প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন থেকে বঞ্চিত। ৩. অপ্রতুল কর্মসংস্থান: শিল্প ও সেবা খাতের পর্যাপ্ত প্রসার না হওয়া, ব্যবসায় খাতের অব্যবস্থা, বিনিয়োগের সংকট– এসব কারণে চাকরির সুযোগ সীমিত। ৪. অপ্রতুল উদ্যোক্তা মনোভাব: ব্যবসা ও উদ্যোক্তাদের যথাযথ সহায়তা না পাওয়া ও ঝুঁকি থেকে বিরত থাকায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি কম। ৫. রাষ্ট্রীয় নীতির ঘাটতি ও অবহেলা: দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থান নীতিমালা ও বাস্তবায়নে অসামঞ্জস্য ও দুর্বলতা।
বেকারত্ব শুধু ব্যক্তিগত নয়, রাষ্ট্রের জন্যও গভীর নিরাপত্তা ও সামাজিক সংকট তৈরি করে। উচ্চ বেকারত্ব বাড়িয়ে দেয় সামাজিক অস্থিরতা, অপরাধপ্রবণতা ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি। আর্থিকভাবে দেশের সামগ্রিক উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হয়।

বেকারত্বের হার কমাতে রাষ্ট্রকে অবশ্যই কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। সম্ভাব্য পদক্ষেপ হতে পারে, শিক্ষার মান উন্নয়ন: শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাজারমুখী করে গড়ে তুলতে হবে। ন্যূনতম দক্ষতা অর্জন ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আধুনিক প্রযুক্তি ও গবেষণার সমন্বয় বাড়াতে হবে। কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষার প্রসার: কারিগরি শিক্ষার মান ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীদের হাতেকলমে দক্ষতা ও বাস্তব কর্মপরিবেশে অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে হবে। উদ্যোক্তা ও ক্ষুদ্র ব্যবসার সহায়তা: সরকারি প্যাকেজ ও নীতিমালা উদ্যোক্তাদের ঝুঁকি কমাবে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। কর্মসংস্থানবান্ধব পরিবেশ: শ্রমবাজারের প্রয়োজন অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সার্বিক রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা: দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মসংস্থাননীতি গ্রহণ ও যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। জনসংখ্যা, শিক্ষা, শিল্প ও সেবা খাতের সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়নে নজর দিতে হবে।
বেকারত্বের হার বেশি হওয়ার বড় কারণ নারীদের পিছিয়ে পড়া। কিন্তু ২০২৫ সালের বাংলাদেশেও নারীদের কর্মসংস্থানে বড় প্রতিবন্ধকতা নিরাপত্তার অভাব। নিরাপদ পরিবেশ ছাড়া নারীদের পক্ষে দক্ষতা ও সৃজনশীলতা প্রকাশ করা কঠিন। তাই নারীদের জন্য কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মানসিক ও সামাজিকভাবে উৎসাহিত করা এবং কাজের প্রতি আগ্রহ ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের চ্যালেঞ্জ। নারীরা যখন সুরক্ষিত ও প্রেরণা পাবেন, তখনই তারা শ্রমবাজারে বেশি হারে অংশগ্রহণের ব্যাপারে উৎসুক হবেন এবং দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে। রাষ্ট্র ও সমাজকে একযোগে কাজ করতে হবে নারীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পথে বাধা দূর এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে।

বেকারত্ব শুধু নির্দিষ্ট একটি বিভাগ বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা সমাধান করা যাবে না। এ জন্য প্রয়োজন ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং রাষ্ট্রীয় সঠিক নীতি। ২০২৫ সালের বাংলাদেশে বেকারত্ব কমাতে হলে এখনই সময় কর্তৃপক্ষের আন্তরিক ভূমিকা ও সমগ্র সমাজের সচেতনতা গড়ে তোলার। শিক্ষা যদি মানসম্মত হয়, কারিগরি দক্ষতা এবং উদ্যোক্তাদের প্রেরণা বৃদ্ধি পায়, তবেই আমরা বেকারত্বের ভয়াল আঁধার কাটিয়ে সত্যিকার অর্থে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারব।

ফাহিমা আক্তার: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

আরও পড়ুন

×