কুবিতে বিবাহিত ছাত্রীকে সভাপতি করে ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার অভিযোগ

ইসরাত জাহান জেরিন- সংগৃহীত ছবি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২২ | ০০:৪১ | আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২২ | ০০:৪১
বিবাহিত ছাত্রীকে সভাপতি করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের নতুন কমিটি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি-সেক্রেটারির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হলে সিনিয়রদের মারধর, সিট দখলের রাজনীতি, হলের ডাইনিংয়ে অনিয়ম, হলে মাদক সেবনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ফয়জুন্নেসা হল শাখার কমিটি দেওয়ার বিষয়টি জানা যায়।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বিবাহিত কেউ ছাত্রলীগের কর্মী থাকতে পারবে না বলা হলেও কমিটিতে সভাপতি পদ পাওয়া ইসরাত জাহান জেরিন বিবাহিত বলে অভিযোগ রয়েছে। আর সাধারণ সম্পাদক অপর্ণা দেবির বিরুদ্ধে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদৌসকে লাঞ্চিত করার অভিযোগ রয়েছে। একই ঘটনায় অভিযুক্ত কমিটিতে সহ-সভাপতি পদ পাওয়া জিনাত সুলতানা ইভা ও সিসিলি জামানও।
এর আগে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ইসরাত জাহান জেরিন, অর্পণা দেবিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ডাইনিং ম্যানেজার লিপি আক্তারকে রুমে ডেকে নিয়ে সাউন্ড বক্সে উচ্চ স্বরে গান বাজিয়ে মারধর করার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে সমকালে ‘কুবিতে নির্যাতনের সময় বাজানো হয় উচ্চ স্বরে গান’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
এছাড়া নতুন কমিটির কয়েকজন নেত্রীর বিরুদ্ধে হলের সিট নিয়ন্ত্রণ, সাধারণ শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক লাঞ্চনা করা, আবাসিক হলের নিয়ম অমান্য করা, ডিজে পার্টি করে সিনিয়রকে মারধর, নেত্রীদের নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি, টিভি রুম ও নিজেদের রুমে নিয়ে শাসানো, মাদকের আসর বসানো, নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে ফেসবুকে জোরপূর্বক পোস্ট করানো, হলের ডাইনিং নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যখন তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিল বন্ধ করাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘হল কমিটি দেওয়ার আগেই আমাদের হলে প্রশাসন থেকে বেশি শক্তিশালী ছিলো ছাত্রলীগের নেত্রীরা। তারা এখন পদ পাওয়ায় আগামীতে দিকে হলের শৃঙ্খলা আরও অনেক খারাপ হবে।’
ওই হলের এক ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, ‘হলে যারা অরাজকতা করে আসছে, তারাই পদ-পদবি পেয়েছে। এখন তাদের নৈরাজ্য আরও বেড়ে যাবে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখন তাদের ভয়ে সর্বদা তটস্থ থাকবে।’
নতুন কমিটিতে প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া এক নেত্রী বলেন, ‘বিয়ে করেও যদি সভাপতি হওয়া যায়, তাহলে রাজনীতি করার কী দরকার। নতুন কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করে বরং অযোগ্য ও বিভিন্ন অপকর্মে অভিযুক্তদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। এদের কারণেই ছাত্রলীগের দুর্নাম হয়।’
তবে বিবাহিত ব্যক্তিকে সভাপতি মনোনয়নের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘ঘটনার সত্যতা ক্ষতিয়ে দেখা হবে। বিষয়টি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে অভিযুক্তদের পদ দেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি বলেন, ‘একসঙ্গে চলাফেরা করতে গেলে দু-একটি অঘটন ঘটে। তবে সবার সঙ্গে কথা বলেই কমিটি দেওয়া হয়েছে।’