শিক্ষক ও কোটাবিরোধী আন্দোলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমর্থন

সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়কারী গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান জোনায়েদ সাকি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪ | ১৯:৫৪ | আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪ | ১৯:৫৭
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি ‘প্রত্যয়’ চালু বিষয়ে সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের এবং সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল নিয়ে শিক্ষার্থীদের চলমান দুই আন্দোলনেই সমর্থন জানিয়েছে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চ।
শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে মঞ্চের সমন্বয়কারী গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, সরকার এক মরণ খেলায় নেমেছে। মানুষকে বন্দি করার জন্য হত্যা করছে, গুম করছে, দেশ ধ্বংস করছে। তারা ক্ষমতা ছাড়বে না। শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছে কোটা সংস্কারের জন্য, শিক্ষকরা আন্দোলন নেমেছেন দাবি আদায়ের জন্য। এসব আন্দোলন ফুঁসে উঠছে বলে এখন আবার ছাত্রলীগের গুণ্ডা বাহিনী, হেলমেট বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে পাহারাদার বসিয়েছে এবং আন্দোলনটাকে দমন-পীড়ন করে ধ্বংস করতে চাইছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সম্পাদিত দেশের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন সমঝোতা স্মারকের প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল পুরানা পল্টন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
এই সরকারের সঙ্গে কোনো আপস নয়: মান্না
সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকারকে বৈধতার কোনো অনুমোদন দেব না। সরকারের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই চলবে। মাঝে মাঝে অনেকেই বলেন, অনেক বছর ধরে তো লড়াই করছেন, পারলেন না তো। কিন্তু কাল পারিনি, আজ পারব। আজ পারিনি, কাল পারব- লড়াইটা চলবে। যতদিন পর্যন্ত তাদের পরাজিত করতে না পারি। এখানে কোনো থামাথামি নেই, আপস নেই।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজদের, চরিত্রহীনদের এবং জবর দখলকারীদের সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চ কোনো আপস করবে না। সুনির্দিষ্ট একটা কর্মসূচির ভিত্তিতে মত-পথ নির্ধারণ করে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এই পথ থেকে বিচ্যুত হয়নি। আর লড়াই ছাড়া মুক্তি পাবেন না। তাই বাঁচার জন্য এই লড়াই আপনাদের সবাইকে করতে হবে।
ভারতের সঙ্গে ট্রানজিটে কোনো আয় নেই উল্লেখ করে মান্না বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ট্রানজিট দিয়ে কি অন্যায় করলাম? যদি পাল্টা প্রশ্ন করি- ট্রানজিট দিয়ে কী পেলেন? আগে বলা হয়েছিল- ট্রানজিট দিলে অনেক টাকা-পয়সা পাওয়া যাবে, ওরা (ভারত) মাশুল দেবে, ট্রানজিট ফি দেবে। সেই টাকায় সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক অন্যান্য উন্নত দেশ হয়ে যাবে। বহুবার আমরা জানতে চেয়েছি, এই পর্যন্ত ট্রানজিট খাতে আয় কত? জবাব নেই। বাজেটটা পুরো পড়ে দেখেন আমাদের সরকার কত আয় করছে, তার মধ্যে ট্রানজিটের মাশুলের কথা নেই। এবার যেটা করল সেটা আপনি আপনার নিজের দেশকে বিপদে ফেললেন। সরকার তো স্বীকার করে না, বলে না। বিদেশের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের নিয়ম আছে। সেটা কখনো করেননি।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ট্রানজিট বা করিডোর দিয়ে তাতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে কীভাবে লাভবান হয়েছে, বাণিজ্যিকভাবে কীভাবে লাভবান হয়েছে, নিরাপত্তার দিক থেকে কীভাবে লাভবান হয়েছে? কোনোভাবেই বাংলাদেশ লাভবান হয়নি। বরঞ্চ আপনার অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমান বলেছেন, ট্রানজিট বা করিডোরের জন্য যদি টাকা চাই সেটা নাকি অসভ্যতা হবে। এই হচ্ছে সরকারের নমুনা। এসবের পরও এবার আপনি ভারতকে বিনা শুল্কে রেল সুবিধা দিয়েছেন। এর বিনিময়ে বাংলাদেশ কী পাবে?
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে অভিন্ন নদীর পানি হিস্যা, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতার বিষয়ে কোনো আলোচনা না হওয়ার কঠোর সমালোচনা করে এই বামপন্থী নেতা বলেন, এই সরকার বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করছে না, আওয়ামী লীগ এবং বর্তমান সরকার বাস্তবে এখন ভারতীয় স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করছে।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবু ইউসুফ সেলিমের সঞ্চালনায় সমাবেশে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম ও জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব বক্তব্য রাখেন।
- বিষয় :
- কোটাবিরোধী আন্দোলন
- সরকার
- গণতন্ত্র মঞ্চ