যতক্ষণ মাঠে আছি গোল খাবে না বাংলাদেশ: আমিনুল হক

ছবি: সমকাল
এস এম সাব্বির খান
প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২০:১৮ | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২১:৩৭
‘খেলার মাঠে যেভাবে প্রতিপক্ষের গোল রুখে দিতে নিজের সবটা দিয়ে লড়াই করেছি, রাজনীতির মাঠেও সেইভাবেই লড়াই করব। বাংলাদেশকে গোল খেতে দেওয়া হবে না। কোনো ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত করে বাংলাদেশকে, দেশের মানুষকে গোল দেওয়া যাবে না। আমরা গোল খেয়ে হেরে যাওয়ার জন্য রক্তাক্ত বিপ্লবে ফ্যাসিবাদের অবসান ঘটাইনি। ছাত্র-জনতারর রক্তের ঋণ এই বিপ্লবের চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত করেই শোধ করা হবে।’
রোববার রাজধানীর তুরাগ থানা এলাকায় আয়োজিত দলীয় কর্মশালায় এসব কথা বলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক। এই কর্মশালায় রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ৩১ দফা প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়।
কর্মশালার একপর্যায়ে সমকালকে দেওয়া সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে বিএনপি নেতা আমিনুল হক কথা বলেন নির্বাচন, রাষ্ট্র সংস্কার এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে। নির্বাচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বিএনপি গণতান্ত্রিকভাবে জনগণের জবাবদিহিতার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটা করতে চায়। নির্বাচন ব্যবস্থাকে নষ্ট করে জাতীয় সংসদ এবং সংবিধানকে কুক্ষিগত করে রাষ্ট্রকে শোষণের যন্ত্রে পরিণত করেছিল শেখ হাসিনার সরকার। তাই সেই জাতীয় সংসদে বসেই জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সংবিধানের বিকৃত ও বিতর্কিত দিকগুলো সংশোধন করতে হবে। রাষ্ট্রবিধান শুদ্ধ না হলে রাষ্ট্রব্যবস্থা শুদ্ধ করার সুযোগ নেই। সংস্কারের নামে নির্বাচন বিলম্বিত করার কোনো সুযোগ নেই।’
দ্রুত নির্বাচন আয়োজনে এ মুহূর্তে শীর্ষ দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মতৈক্যের ব্যপারে আমনুল হক বলেন, ‘জামায়েত কিছুক্ষেত্রে নিজেদের যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে তা আপত্তিকর। ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালানো আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের ক্ষমা করে দেওয়ার বার্তা দিয়ে জামায়াত বিপ্লবের স্পিরিট এবং দেশের মানুষের আস্থা নষ্ট করেছে। নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সুরে কথা বলছে। আওয়ামী সরকারের পতন ঘটলেও প্রতিটি ক্ষেত্রে ফ্যাসিস্ট এলিমেন্ট এখনও বিরাজমান। তারা প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সে অবস্থায় জামায়াতের এই ক্ষমার বাণী আর নির্বাচন নিয়ে কৌশলী অবস্থান ইতিবাচক নয়।’
৩১ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সমমনাদের কর্মসূচি বিএনপির প্রতি কাউন্টার কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে আমিনুল বলেন, ‘বিপ্লব একদিনে হয় না। বিগত সরকারের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে দেশের মানুষ এই বিপ্লব ঘটিয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এই বিপ্লব এবং ফ্যাসিস্ট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার কৃতিত্ব এককভাবে নিজেদের করে নিতে চাইছে। সরাসরি না হলেও এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপিকে বার্তা দিতে চাচ্ছে তারা। নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে বিএনপির মতপার্থক্যের কারণেই সেটি হতে পারে। তবে রাষ্ট্রস্বার্থে বিএনপি তার অবস্থানে অটল থাকবে। এমন কোনো শক্তিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসতে দেওয়া হবে না যাদের হাত ধরে এদেশে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে পারে।’
রাষ্ট্র মেরামতের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংস্কারে বিএনপি কাজ করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আমিনুল হক বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক দল বা জোট সরকার গঠন করে। এটাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য। তবে ক্ষমতায় বসে দেশকে উপেক্ষা করে দলের সরকার হয়ে ওঠা এবং সবক্ষেত্রে দলীয়করণের মাধ্যমে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অপসংস্কৃতির চর্চা বন্ধ করা হবে। সরকার হবে জনতার। যে দলই রাষ্ট্রের নেতৃত্বে থাকবে তারা রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্র তাদের। সেখানে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে গিয়ে কাজ করবে বিএনপি। দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে কাউকে সুবিধা দেওয়া, বঞ্চিত করা, প্রশ্রয় দেওয়া, বিনা বিচারে শাস্তি দেওয়া বা শাসন করার প্রবণতা থেকে সরে আসতে হবে আমাদের। সবার ওপরে বাংলাদেশ। আমরা সত্যিকার অর্থেই দেশকে একটি আধুনিক, সুন্দর, সভ্য ও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমাদের কাছে সংস্কার মানে হচ্ছে সেই সব কাজ যা এদেশের মানুষের ভাগ্যেএ পরিবর্তন ঘটাবে। আর সেজন্যই একটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান মহান জাতীয় সংসদকে কার্যকর করতে চাই। সেখানে থেকেই বদলে যাওয়া বাংলাদেশের সত্যিকারের পথচলার শুভ সূচনা হবে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে আর কোনো আবু সাঈদ আর মুগ্ধকে রাজপথে গুলি খেয়ে মরতে হবে না।’