বিভিন্ন দলের প্রতিক্রিয়া
এই বাজেট গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা ধারণে ব্যর্থ হয়েছে

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫ | ২০:১৫
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন। তারা বলেন, বাজেটে গণঅভ্যুত্থানের গণআকাঙ্খার বৈষম্য থেকে মুক্তির কোনো প্রতিফলন নেই। এই বাজেট গতানুগতিক। ধনিক, কালো টাকার মালিক ও আমলা তোষণের ধারাবাহিকতা মাত্র। মঙ্গলবার পৃথক বিবৃতিতে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতারা এসব কথা বলেন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাজেট ঢেলে সাজানোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান নেতারা।
বাজেট সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করবে না: বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, গতানুগতিক পথে হেঁটে যে বাজেট ঘোষণা করা হলো, তা সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করবে না। এই বাজেটে বৈষম্যহীনতা ও টেকসই উন্নয়ন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হলেও বাস্তবে মুক্তবাজারের পুরনো ধারাবাহিকতার পুনরাবৃত্তি ঘটানো হয়েছে, যা বৈষম্য, বেকারত্ব, মূল্যস্ফীতি ও বিনিয়োগ সংকট কোনোটাই মোকাবিলা করতে পারবে না। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স, কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ শাহ আলম, বজলুর রশিদ ফিরোজ, ইকবাল কবির জাহিদ, মাসুদ রানা, মোশরেফা মিশু ও আব্দুল আলী।
মূল অর্থনীতি সংস্কারের দিকনির্দেশনা পরিলক্ষিত হয়নি: বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থেকে যতটা বলেছে, বাজেটে সেসব কথার প্রতিফলন নেই। সংস্কার সরকারের প্রধান এজেন্ডা থাকলেও মূল অর্থনীতি সংস্কারের দিক-নির্দেশনা বাজেটে পরিলক্ষিত হয়নি।
বাস্তবে মানুষের আকাঙ্খার প্রতিফলন নেই: বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বিবৃতিতে বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার পলায়নের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেটে মানুষ স্বাভাবিকভাবে তাদের আকাঙ্খার প্রতিফলন দেখতে চেয়েছে। কিন্তু বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, নাগরিক সুবিধা, সুশাসন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও টেকসই উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করলেও বাস্তবে মানুষের সেই আকাঙ্খার প্রতিফলন নেই।
বাজেটে জনকল্যাণের চেয়ে এনজিওগুলোর চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে: বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ ও মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের বলেন, চব্বিশের নির্বাচনী বরাদ্দ ছিল ৪৮০০ কোটি টাকা। অথচ এবারের বাজেটে নির্বাচন কমিশনের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে মাত্র ২৯৫৬ কোটি টাকা। প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে অর্ধেকের কম বরাদ্দ স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের জনদাবিকে গুরুত্ব সহকারে ভাবছে না। এই বাজেটে জনকল্যাণের চেয়ে এনজিওগুলোর চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে দৃঢ় প্রত্যয়ে অর্ন্তবর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে: বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী বিবৃতিতে বলেন, অর্ন্তবর্তী সরকার প্রচলিত রাজনৈতিক সরকারের বাজেটের ধরনকে অনুসরণ না করে নতুন উদাহরণ তৈরি করতে পারতো, যেখানে সকল প্রকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিশ্চিত হতো। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা যেত। তা করতে অর্ন্তবর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
বাজেট জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা ধারণে ব্যর্থ হয়েছে: জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বিবৃতিতে বলেন, বাজেট প্রস্তাবের আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্পর্কিত রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল। এতে জাতীয় সংসদের অনুপস্থিতিতে প্রস্তাবকৃত বাজেট আরও জনস্বার্থ সম্পর্কিত হতে পারতো। সেটা না করায় এই বাজেট জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বাজেট প্রস্তাব শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশাপরিপন্থী: সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ ও সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন বিবৃতিতে বলেন, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের আকাঙ্খা পূরণ করার অঙ্গীকার করে আসা অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট প্রস্তাব শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশাপরিপন্থী। এই কারণে এই বাজেট আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।
- বিষয় :
- বাজেট ২০২৪-২৫
- বাজেট
- প্রস্তাবিত বাজেট