বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে, ছাত্রলীগকে প্রধানমন্ত্রী

সোমবার ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২১ | ০৯:৪৪
সংগঠনের ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ত্যাগের আদর্শে নিজেদের গড়ে তোলার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, 'সততা, আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে কাজ করলে যে কোনো রাজনীতিবিদের ক্ষেত্রেই সাফল্য পাওয়া সম্ভব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সেটাই প্রমাণ করে গেছেন। কাজেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মাথায় রেখে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে হবে।'
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার অঙ্গিকার পুনর্ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ''মুজিববর্ষ' ও 'স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী'তে দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে আমরা আলো জ্বালাব। এটাই আমাদের লক্ষ্য। এদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে চলবে। বিজয়ী জাতি হিসেবে বাঙালি জাতি বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলবে। দেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইনশাল্লাহ আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো।''
সোমবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ছাত্রলীগ আয়োজিত এ আলোচনা সভায় নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
আলোচনা সভার শুরুতে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্য রাখতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, 'ছাত্রলীগের একটি ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। সেই ঐতিহ্যকে ধারণ করে প্রতিটি নেতাকর্মীকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিজেদের জীবন গড়ে তুলতে হবে। রাজনীতিবিদদের আদর্শ থাকা দরকার। সৎ পথে থাকলে সবকিছু অর্জন করা যায়। সততা, নিষ্ঠা ও লক্ষ্য স্থির রেখে যারা আদর্শবান হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারবেন- তারাই সফল হবেন। দেশকে কিছু দিতে পারবেন। আর যারা ধন-সম্পদ ও টাকা-পয়সার দিকে তাকিয়ে থাকবে- তারা হয়তো সেই সম্পদ ভোগ করতে পারবে, কিন্তু দেশ ও জনগণকে কিছু দিতে পারবে না। নিজেরাও বড় হতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে সেভাবেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চলতে হবে। জাতির পিতার লেখা বইগুলো পড়ে সেভাবেই নিজেদের জীবন গড়ে তুলতে হবে।'
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা যাতে নিজেদের আধুনিক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলে- সেই আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'শিক্ষা এমন একটি সম্পদ, যেটা কেউ কোনোদিন কেড়ে নিতে পারবে না। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। তাই ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে উন্নত শিক্ষায় নিজেদের জীবন উদ্ভাসিত করতে হবে। গ্রামে গেলে নিজ নিজ এলাকার নিরক্ষর ও অশিক্ষিতদের শিক্ষার দায়িত্বও নিতে হবে।'
এ প্রসঙ্গে শিক্ষার উন্নয়নে টানা তিন মেয়াদে নেওয়া তার সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আমি ছাত্রলীগের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম। আর খালেদা জিয়া ছাত্রদলের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে বলেছিলেন আমাদের ঠেকাতে ছাত্রদলই যথেষ্ঠ। এটা জিয়াউর রহমানেরও নীতি ছিল। আর আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি।'
বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস এবং বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে এই সংগঠনের অবিস্মরণীয় ভূমিকার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস, বাঙালির ইতিহাস ছাত্রলীগের ইতিহাস। এটাই জাতির পিতা বলেছিলেন। আজ যে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, ভাষার অধিকার পেয়েছি- এর প্রতিটি সংগ্রাম শুরুই হয়েছিল ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। ছাত্রলীগ সংগঠনটা আমাদের প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্বাধীনতা ও ভাষার অধিকার অর্জন, গণতন্ত্র এবং ভোট-ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার যে কোনো লড়াই-সংগ্রামে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাই সবচেয়ে বেশি জীবন দিয়েছেন। অন্য সংগঠনের নেতাকর্মীরাও প্রাণ দিয়েছেন। তবে শহীদের তালিকা করলে সেখানে ছাত্রলীগের নামই সব থেকে বেশি পাওয়া যাবে।'
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে এজন্য তাদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, 'করোনাকালে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে থেকেছে। করোনাভাইরাসে কেউ মারা গেলে যখন তার স্বজনরাও মৃতদেহ ফেলে চলে গেছেন- তখন এই ছাত্রলীগই মৃতদেহ সৎকারে এগিয়ে এসেছিল। মানুষের হাতে অর্থ ছিল না, কারো কাছে হাত পাততেও পারছিল না- তখনও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের সহযোগিতা করেছে। আর কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়ে তারা প্রমাণ করেছে কোনো কাজই অবহেলার নয়, ছোট নয়।' মুজিববর্ষে সরকার ঘোষিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণের জন্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে নিজের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, 'ছাত্রলীগ সব সময় অগ্রগামী দল। এই সংগঠন বয়সে আওয়ামী লীগের থেকেও বড়। কাজেই ছাত্রলীগকে অগ্রগামী হয়েই থাকতে হবে। আর যখন গ্রামে যাবে, কোনো কাজকে ছোট করে দেখবে না। অবহেলার চোখেও দেখবে না। উপরের দিকে তাকিয়ে হাঁটলে হোঁচট থেকে হবে। সেজন্য মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হবে। এটা আমাদেরও পরিবার থেকে পাওয়া শিক্ষা, বাবা-মা এভাবেই আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন।'
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সমালোচনা প্রসঙ্গে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'জানি, কোথাও একটু কিছু ত্রুটি পেলেই সেটাকেই অনেক বড় করে দেখা হয়। আমাদের পত্রিকাগুলোও যাই পায়- সেটাকেই বড় করে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে লেখে। এটা তাদের মানসিক দৈন্যতা। কিন্তু তোমরা যে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছো- সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাজ।'
সংগঠনকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'কোনো কিছু অর্জন করতে হলে এবং যে কোনো আন্দোলন সফল করতে হলে শক্তিশালী সংগঠন দরকার। আর এ কারণেই ১৯৬৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ গ্রহণ করে সংগঠনকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। আমিও সব সময় সংগঠনকে শক্তিশালী করার কাজে বেশি মনোযোগ দিয়েছি। কাজেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরও সংগঠনকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। নিজেদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের উপযোগী করে তুলতে হবে।'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ আজ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। করোনার কারণে হয়ত আমরা একটু থমকে গেছি। কিন্তু করোনার মধ্যেও আমরা দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। করোনার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। আমাদের দেশে যেন দুর্ভিক্ষের ছায়া না পড়তে পারে, সেজন্য কৃষি উৎপাদনের চাকাকে সচল রাখতে হবে। দেশের এক ইঞ্চি মাটিও যেন অনাবাদী না থাকে- সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে।'
অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের ৭৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস এবং সাফল্য-অর্জনের ওপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি ছাত্রলীগের রক্তদান কর্মসূচিরও উদ্বোধন করেন। ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।