ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

'এমপি লীগে' কোণঠাসা আওয়ামী লীগ

'এমপি লীগে' কোণঠাসা আওয়ামী লীগ

তৌফিকুল ইসলাম বাবর, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ১৩:৩২

পটিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল খালেক। ২০১২ সালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির অর্থ সম্পাদক ছিলেন তিনি। সে সময় থেকে ২০১৬ পর্যন্ত দলটির পটিয়া পৌরসভা কমিটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। কিন্তু এখন পুরোদস্তুর আওয়ামী লীগ নেতাই নয়, দলটির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে কাউন্সিলর হয়েছেন। সম্প্রতি ঘোষিত পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য মনোনীত হয়েছেন আবদুল খালেক।

পটিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মাহমুদুল হক। পটিয়ার সাবেক সাংসদ ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান জুয়েলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত মাহমুদুলও এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য। জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন পটিয়া থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সংসদের বর্তমান হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। অভিযোগ রয়েছে, তার হাত ধরেই আওয়ামী লীগে আসেন কাউন্সিলর আবদুল খালেক ও মাহমুদুল। শুধু তারাই নন, এক সময় জাতীয় পার্টি ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন- এমন অনেক নেতাই সুযোগ বুঝে সাংসদ সামশুল হকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে 'অনুপ্রবেশ' করেছেন। এই তালিকা বেশ দীর্ঘ। দলে বিভিন্ন পদ দিয়ে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিতও করেছেন তাদের। দলের অনেকের অভিযোগ- এভাবে এলাকায় আওয়ামী লীগের পরিবর্তে 'এমপি লীগ' প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।

জানতে চাইলে কাউন্সিলর আবদুল খালেক বলেন, 'উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে রাখা হলেও এখন আমি রাজনীতিতে সক্রিয় নেই। জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। এখন যা কিছু করছি সব পরকালের উদ্দেশ্যে।'

পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন সমকালকে বলেন, 'পটিয়ায় প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জায়গা নেই। সামশুল হক তিন দফায় পটিয়া থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথমবার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করলেও পরবর্তী সময়ে আগের জাতীয় পার্টি ও বিএনপি থেকে সুবিধাবাদী লোকজনকে এনে আওয়ামী লীগে ভিড়িয়েছেন। পটিয়ায় রীতিমতো এমপি লীগ প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। এই অনুপ্রবেশকারী এমপি লীগের দাপটে দলের প্রকৃত নেতাকর্মীরা অসহায়, কোণঠাসা।'

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, 'ক্লাব আর রাজনীতি- দুটি জায়গাতেই বিশৃঙ্খলা করছেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। দলের গঠনতন্ত্র মানছেন না। এলাকায় ইচ্ছেমতো দলের বিভিন্ন কমিটি করছেন। এসব কমিটিতে রেখে দলে অনুপ্রবেশকারীদের পুনর্বাসন করছেন। তাই তার সুপারিশ করা কমিটিগুলো আমরা অনুমোদন দিচ্ছি না।'

দলের আরও অনেক নেতার দেওয়া তথ্যমতে, পটিয়া উপজেলার আওতাধীন একটি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের একটি অংশ জাতীয় পার্টি ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে তারা জানিয়েছেন, পটিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা আবু সৈয়দ একই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এই ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিতও হয়েছেন তিনি। একইভাবে পৌরসভা বিএনপির সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খোরশেদ গনি এখন পৌর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিউল আলম ১৯৯৬-০৭ সাল পর্যন্ত জাপার ছাত্র সংগঠন দক্ষিণ জেলা ছাত্র সমাজের সহসভাপতি ছিলেন। সম্প্রতি পৌর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাতে সদস্য হিসেবে নাম রয়েছে তার। ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল মান্নান ২০১৬ সালে পটিয়া পৌর জাপার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এখন পৌর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির সদস্য তিনি। পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রূপক কুমার সেনও এখন আওয়ামী লীগ করলেও এক সময় জাপার রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। বরলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন ইউনুস তালুকদার। এর আগে তিনি যুবদলের পৌর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এভাবে আরও অনেক নাম এসেছে যারা এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও বিভিন্ন সময় তারা বিএনপি ও জাপার রাজনীতি করতেন।

পটিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, খোরশেদ গনি ও আবু সৈয়দ বিএনপির যেসব কমিটিতে ছিলেন সেই কমিটি এখনও বহাল রয়েছে। তাদের দল থেকে বহিস্কার করা হয়নি। তারা দলের রাজনীতি থেকে লিখিতভাবে ইস্তফা নেননি। তারপরও কীভাবে তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত হলেন এবং বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করছেন তা বোধগম্য নয়।

এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে সামশুল হক চৌধুরী সমকালকে বলেন, 'আমাকে অনেকেই বিএনপি ও জাপা নেতা বানিয়েছেন। যেকোনো সময় হয়তো তারা আমাকে জামায়াত নেতাও বানাবেন। একটি পক্ষ আমাকে অপদস্থ করতে বিভিন্ন ধরনের মনগড়া, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলছে। আমি কারও বিরুদ্ধে বলব না। আমি শুধু আল্লাহর কাছে বিচার দিচ্ছি। আর প্রধানমন্ত্রীর কাছেও বিচার চাইব।'

দেশে চলমান মাদক ও জুয়াবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে আবাহনী ক্লাবে অভিযান চালায় র‌্যাব। এ ক্লাবটি ছাড়াও আরও অন্তত এক ডজন ক্লাবে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব ও পুলিশ। প্রায় সব ক্লাবেই জুয়ার আলামত পাওয়া যায়। আবাহনী ক্লাবের মহাসচিব হচ্ছেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। ক্লাবে চালানো এই অভিযান নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করলে তীব্র সমালোচনা মুখে পড়েন তিনি।

আরও পড়ুন

×