ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

দেড় হাজার কিলোমিটার সড়ক সংস্কার জরুরি

দেড় হাজার কিলোমিটার সড়ক সংস্কার জরুরি

.

 আনোয়ারুল হায়দার, নোয়াখালী

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫ | ০০:০০

নোয়াখালী জেলার ৯ উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে সড়ক আছে ৯ হাজার ৭৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা সড়ক ৩ হাজার ৫০৯ কিলোমিটার, ইট বিছানো ২০৯ কিলোমিটার এবং কাঁচা মাটির সড়ক ৫ হাজার ৩১০ কিলোমিটার। পাকা সড়কের মধ্যে গত অর্থবছরে ১০৯ কোটি টাকায় ১৮০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার হয়েছে মাত্র। অন্তত আরও দেড় হাজার কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থা। এসব সড়ক সংস্কারে ৬০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।  
এলজিইডি, নোয়াখালী কার্যালায় বলছে, এসব সড়ক সংস্কারের জন্য প্রতিবছর প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। তবে চাহিদার এক তৃতীয়াংশেরও কম বরাদ্দ পাওয়া যায়। ফলে অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক মেরামত করা যায় না। 
গত বছর আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় জেলার হাতিয়া উপজেলা ছাড়া বাকি ৮ উপজেলার সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বেশির ভাগ সড়ক সংস্কার না হওয়ায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
সরেজমিন যেসব সড়কের বেহাল দশা দেখা গেছে সেগুলো হলো– কচুয়া-সাহাপুর-বটতলী সড়ক, চাটখিল-মনোহরপুর ভায়া পাল্লা বাজার সড়ক, খিলপাড়া-দেলিয়াই সড়ক, দশঘরিয়া- সাহাপুর সড়ক, খিলপাড়া-আবিরপাড়া সড়ক, কাচারী বাজার-বারইপাড়া সড়ক, বেগমগঞ্জ উপজেলার বাংলা বাজার-পদিপাড়া সড়ক, আমিশা পাড়া-পদিপাড়া সড়ক, রাজগঞ্জ-বাংলা বাজার সড়ক, সদর উপজেলার বাহাদুরপুর-গোপিনাথপুর সড়ক, কৃষ্ণরামপুর বোর্ড অফিস সড়ক, সেনবাগ উপজেলার ছাতার পাইয়া ইউনিয়নের  ছাতার পাইয়া-ডুমুরিয়া সড়ক। এসব সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, পিচ উঠে গিয়ে  বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তে পড়ে প্রায় যানবাহন উল্টে যায়। সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের কৃষ্ণরাপুর-ভোট অফিস সড়কটি জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সড়কটি চলাচলের অনপোযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কে কিছু গর্ত ছোট ডোবার মতো হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে সড়ক কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। নালা না থাকায় সড়কে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। 
ইসলামীয়া সড়কের বাসিন্দা ও নোয়াখালী সিটি কলেজের শিক্ষার্থী প্রান্ত চন্দ্র সূত্রধর, সুমাইয়া তাবাসুম, রাত্রি, মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘দুর্ভোগের আরেক নাম কৃষ্ণরামপুর-ভোট অফিস সড়ক। প্রতিদিন এই পথে চলতে গিয়ে কষ্ট পাচ্ছি। সড়কে রিকশাও যেতে চায় না। গেলেও ২০-৩০ টাকার ভাড়া ৬০-৭০ টাকা নেন। সেনবাগের ছাতারপাইয়া এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী এনামুল হক, ব্যবসায়ী আমির হোসেন, শিক্ষিকা হাসিনা খানম, 

মাহবুবা আক্তার বলেন, ‘ছাতারপাইয়া-ডুমুরিয়া সড়কের ওপর দিয়ে চলাচলের সময় সর্বদা আতঙ্কে থাকি কখন গাড়ি উল্টে যায়।’ শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, ‘রাস্তা খারাপের অজুহাত দেখিয়ে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা ২-৩ গুণ বেশি ভাড়া নেন।’
কাদির হানিফ ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহিম, ছাতারপাইয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহমান, বদলকোর্ট ইউপি চেয়ারম্যান সোলায়মান শেখ, রাজগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সেলিম জানান, তাদের ইউনিয়নের রাস্তাঘাট দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অনেকগুলো একযুগ ধরে সংষ্কার হয়নি। মেতামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দীর্ঘদিন ধরে আবেদন নিবেদন করা হলেও কোন কাজ হয়নি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মাহফুজুল হক হোসাইন বলেন, ‘বন্যা ও বৃষ্টির পানি কারণে জেলার অধিকাংশ সড়ক চলাচলের অনপুযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কের পাশের খাল ও নালা ভরাট করে স্থাপনা নির্মানের কারণে বৃষ্টির পানি নিষ্কাষণ হতে পারে না। ফলে প্রতিনিয়ত রাস্তা নষ্ট হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক মেরামতের জন্য ৬০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। বরাদ্দ চেয়ে উপরে চিঠি লেখা হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে থাকা ৯টি উপজেলার কাঁচা, পাকা খারাপ সড়কগুলো আর্থিক সংকটের কারণে মেরামত করা যাচ্ছে না। আমরা সভা করে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের চাহিদাপত্র অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি।’

আরও পড়ুন

×