ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

প্রেরণা

পৃথিবী দেখবে আপনার রাজত্ব

পৃথিবী দেখবে  আপনার রাজত্ব

কার্লি লয়েড ছবি : অনলাইন

মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৪ | ০৫:১৭ | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৪ | ১১:১৯

আমি প্রথম যখন জাতীয় দলে জায়গা পাই তখন দলে মিয়া হ্যাম, শ্যানন ম্যাকমিলান ও টিফেনি মিলবার্টের মতো খ্যাতিমান ফুটবলাররা খেলতেন। তাদের সঙ্গে খেলার সৌভাগ্য হয় আমার। আমার কাছে এটা কল্পনার মতো ছিল। নিজের ঘরের দেয়ালে সেঁটে রাখা এই তারকাদের ছবির সঙ্গেই বড় হয়ে উঠেছি; ফলে তাদের পাশে খেলতে পারাটা ছিল ভীষণ রোমাঞ্চের। তাদের খেলার গতি ছিল তেজি ঘোড়ার মতো। তারা আমার কাছ থেকেও একই গতি ও দক্ষতা আশা করতেন। মনে পড়ে, একবার ছোট্ট পরিসরের এক ম্যাচ চলছিল। ব্রায়ানা স্কারি ছিলেন গোল পোস্টে। তিনি চিৎকার করে আমাকে বললেন, তুমি যদি বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে গতিতে পেছনে ফেলে দিতে না পার, তবে সে তোমাকে বল নিয়ে এগোতে দেবে না। তরুণ খেলোয়াড়দের আমিও স্রেফ এ কথাটিই বলতে চাই। কেবল খেলোয়াড় কেন জীবন চলার পথে সবাই এই দৌড়ে এগিয়ে যেতে না পারলেই অন্য আরেকজন এগিয়ে যাবে!

পাঁচ বছর বয়স থেকে শুরু

যদিও আমার ফুটবল খেলা শুরু পাঁচ বছর বয়স থেকে। তবে ২০০৮ সালের অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ই ক্যারিয়ারের প্রকৃত শুরু বলা যেতে পারে। জীবনে অনেক ভালো ম্যাচ এবং পাশাপাশি বাজে ম্যাচ খেলেছি। তবে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, একটা বাজে ম্যাচ খেলার পর তা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী ম্যাচে ভালো করার নিশ্চয়তা খোঁজা। প্রতি ম্যাচে ভালো খেলা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, ভালো না খেললে ভেঙে না পড়ে বরং সফল হওয়ার বিকল্প কোনো কৌশল আবিষ্কার করা। 

সাইড বেঞ্চ ও সহজাত প্রবণতা

মনে পড়ে, ২০১২ সালের অলিম্পিকের আগ পর্যন্ত ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় সাইড বেঞ্চেই কাটাতে হয়েছে আমাকে। কখন যে মাঠে নামার সুযোগ পাব তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। ধরুন, এক ম্যাচে এক অর্ধ বা ৪৫ মিনিট খারাপ খেললাম, তো পরের ম্যাচে শুরু থেকে নামার সম্ভাবনা বলতে গেলে চলেই গেল। আমি মনে করি, এই পরিস্থিতিকে সামলানোর পথ আছে দুটি। হয় আপনি ক্ষেপে গিয়ে কোচের ওপর বিরক্ত হয়ে উঠবেন এবং অসন্তোষ নিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকবেন অথবা কোচের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা দেখিয়ে মেনে নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে যোগ্য ও অনিবার্য করে তুলবেন। এর মধ্যে দ্বিতীয় পথটিকেই আমি বেছে নিয়েছি। সাইড বেঞ্চে বসে থাকার যাতনা আমাকে পোড়ায়নি, আমার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়েনি অশ্রু, আমি বিরক্ত হইনি কিংবা ক্ষেপে উঠিনি– তাহলে মিথ্যে বলা হবে। কেননা, এটি তো মানুষের সহজাত প্রবণতা। আমার ক্যারিয়ারে বহুবার আবেগের এমন বিচ্ছুরণ ঠিকই ঘটেছে; তবে দিনে দিনে বয়স ও অভিজ্ঞতা যত বেড়েছে, আমিও শিখে নিয়েছি এমন পরিস্থিতিগুলো সামলানোর কৌশল। তবে ঠিকই জানতাম, ২০১২-এর অলিম্পিকে যাওয়ার আগেই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে।

মহানায়ক ম্যারাডোনা ও ১০ নম্বর জার্সি

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ১০ নম্বর জার্সিধারী খেলোয়াড়দের খুব মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতাম আমি। আমারই জন্মশহর ডেলরানে বেড়ে ওঠা পিটার ভার্মসও ১০ নম্বর জার্সি পরতেন। পরতেন মিশেল অ্যাকার্স, পেলে, ম্যারাডোনা। বাচ্চা বয়সে এরা আমার কাছে ছিলেন একেকজন মহানায়ক। সেন্টার-মিড পজিশনে খেলতাম আমি; ছিলাম অ্যাটাকিং প্লেয়ার। ক্লাবে ১০ নম্বর জার্সি পরেই খেলতাম আমি। তারপর জাতীয় দলে যখন জায়গা পেলাম, ১০ নম্বর জার্সিটির মালিকানা তখন অ্যালি ওয়াগনারের। তিনি অবসরে যাওয়ার পরই জার্সিটি কাঁধে চাপানোর দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত সুযোগ পেয়ে যাই আমি। এটি আমার প্রিয় একটি নম্বর; আর এটি পরে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করতে পারাটা আমার জন্য সম্মানের ব্যাপার। তবে দিনের শেষে, এটি স্রেফ একটি সংখ্যার চেয়ে বেশি কিছু নয়! কখনোই ‘নোংরা’ ফুটবল খেলার চেষ্টা থাকে না আমার। বরং দলে নিজের জায়গাটির মর্যাদা রাখার চেষ্টা করে যাই। বলবো, জীবনে সফল হতে হলেও নিজের জায়গাটির মর্যাদা রাখার চেষ্টা করলেই চলে। এতেই আপনার অবস্থানে থাকবে কেবল আপনারই রাজত্ব! 

আরও পড়ুন

×