ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

প্রেরণা

যেভাবে ধরা দেয় সাফল্য

যেভাবে ধরা  দেয় সাফল্য

মনিকা বেলুুচি ছবি : অনলাইন

মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৪ | ০৬:০২ | আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৪ | ১৫:২০

অনেকের ধারণা, অভিনয় দিয়েই আমার ক্যারিয়ার শুরু। তা মোটেই না! আমি অভিনয়ে এসেছি মূলত ফ্যাশন জগৎ থেকে। অভিনয়শিল্পীর ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে ফ্যাশন আর সৌন্দর্য সবচেয়ে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে। কেননা সবাই ধরে নেয়, আমি যেহেতু সুন্দরী, অতএব নির্বোধও! তবে শারীরিক সৌন্দর্য এক ধরনের মুখোশ। সেই মুখোশটা আপনাকে ছিঁড়ে ফেলে দেখাতে হবে, এর পেছনের আসল সৌন্দর্য। আপনি কী– তা আপনাকেই দেখাতে হবে, যেন অন্যরাও আবিষ্কার করতে পারে।

কৌতূহলের উদ্রেক 
এটা ধরেই নিতে পারেন যে, সৌন্দর্য নিশ্চিতভাবেই কৌতূহলের উদ্রেক ঘটায়! তবে আইরিশ নাট্যকার অস্কার ওয়াইল্ডের কথাটাও মনে করতে পারেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনার মধ্যে যদি অন্য কিছু করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে শুধু সৌন্দর্য দিয়ে মাত্র পাঁচ মিনিটই সেই কৌতূহল টিকিয়ে রাখতে পারবেন।’ তাই ধরেই নিতে পারি যে আমি কী বোঝাতে চেয়েছি। কেবল সুন্দরী বলেই ক্যারিয়ারে এত কাজ করতে পেরেছি– এমনটা মনে করি না আমি। ফিল্মমেকাররা একজন অভিনয়শিল্পীকে তার সৌন্দর্যের বিচারে কাজে নেন না, বরং নেন মেধার বিচারে। 
 

নিজেকে প্রমাণ
অন্তত আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে বলতে পারি, অন্যদের কাছে না পারলেও নিজের কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছি আমি। কেউ যখন আমার কাছে নতুন কোনো আইডিয়া কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কাজের প্রস্তাব নিয়ে আসে, সেটির প্রতি যথাযথ আগ্রহ জন্মালে কাজটাতে নেমে পড়ি আমি। যে সিনেমা নানামুখী আলোচনার জন্ম দিতে সক্ষম, সেই সিনেমার প্রতিই আগ্রহ আমার। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সিনেমায় এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিকে ফুটিয়ে তুলি। উদাহরণস্বরূপ ‘ইররিভার্সিবল’, ‘দ্য প্যাশন অব দ্য ক্রাইস্ট’ ও ‘মালেনা’ সিনেমার নাম নেওয়া যেতে পারে। মনুষ্যত্বের অন্ধকারাচ্ছন্ন দিকটিকে ফুটিয়ে তুলতে আমার ভালো লাগে। এ কারণেই আমি অভিনেত্রী।

যথাযথ উপলব্ধি ও সময়ের ব্যবধান
সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ সময়ের ব্যবধানটাও। এটা এ জন্য বলছি যে, নিজের অভিনীত কোনো সিনেমাই সাধারণত একবারের বেশি দেখি না আমি। যদিও দেখি, সে ক্ষেত্রে মাঝখানে অনেক বছর বিরতি দিয়ে। যেমন– বহুদিন পর আবারও ‘মালেনা’ সিনেমাটি দেখে আমার বেশ মজাই লেগেছে! এই যে কোনো একটা সিনেমা দ্বিতীয়বার দেখার আগে মাঝখানে এতটা সময় নেওয়া এর কারণ, সিনেমাটিকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করার জন্য সময়ের এই ব্যবধান প্রয়োজন পড়ে আমার। কেননা, নিজেকে নিজে দেখতে একদমই ভালো লাগে না!

দু’জনই আলাদা
আমি আর আমার স্বামী ভিনসেন্ট দু’জনে দুই পৃথিবীর মানুষ। ওর বন্ধুদের যেমন আমি চিনি না, সেও চেনে না আমার বন্ধুদের। আমাদের ওঠাবসাও আলাদা আলাদা সার্কেলের মানুষের সঙ্গে। আমাদের জীবন এক রকম নয়। আমি যখন ‘আমার’ পৃথিবী থেকে সরে আসি, আর সেও যখন ‘তার’ পৃথিবী থেকে আসে সরে, তখনই শুধু দেখা হয় দু’জনের! কিন্তু আমরা একেবারেই দুটি আলাদা প্রাণী! আমি ভীষণ স্বাধীনচেতা, সেও স্বাধীনচেতা খুব। আমি মনে করি, শুধু এটিই আমাদের একসঙ্গে বেঁধে রেখেছে। ব্যক্তিগত জীবন এ জন্য শেয়ার করছি যে, এই একসঙ্গে থাকাটাও জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ! 

সহিংস চাকরিটাই আমাদের!
একজন অভিনয়শিল্পীকে সবচেয়ে সহিংস চাকরিটিই করতে হয়। আপনি যদি পিয়ানিস্ট হন, তবে আপনার একটা পিয়ানো থাকবে; গিটারিস্ট হলে থাকবে গিটার। কিন্তু আপনি নৃত্যশিল্পী কিংবা অভিনয়শিল্পী হলে, সে ক্ষেত্রে নিজের শরীরই আপনার ইনস্ট্রুমেন্ট। আমি নিশ্চিত, একজন নৃত্যশিল্পী যখন গ্রিনরুমে ফিরে যান, তখন তার পায়ের পাতা রক্তাক্ত হয়ে থাকে। কিন্তু নাচার সময় তারা সেই রক্তপাতকে অনুভব করতে পারেন না। এটি শারীরিক বেদনার চেয়েও বেশি কিছু। আমার ধারণা, অভিনয়শিল্পীরাও নিজের শরীরকে নিয়ে এ কাজটিই করেন। তারা ভুলে যান ‘আমার আমি’-কে। তারা এমন সব চরিত্রে এমন সব অভিনয়ে মগ্ন হয়ে যান, সেগুলো হয়তো বাস্তব জীবনে তাদের বিব্রত কিংবা লজ্জিত করতে পারত। তবু আমরা ঝুঁকি নিই– এই ঝুঁকি এবং ভালো একটি আইডিয়াই বদলে দিতে পারে জীবন!

আরও পড়ুন

×