ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

মায়েরা শেখেন যে পাঠশালায়

তৃণমূলে ছয় উদ্যোগ

মায়েরা শেখেন যে পাঠশালায়

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের এমন আনন্দে পাঠ দান করেন শারমিন রহমান সুইট

আশিক মুস্তাফা

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ২৩:১০ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৪ | ১২:১৩

যারা স্বপ্ন দেখেন দুনিয়া জয়ের এবং প্রতিনিয়ত মন থেকে অনুপ্রাণিত হন নতুন কিছু করার জন্য; তারা জানেন, থেমে নেই তারুণ্যের জয়গান। তরুণরা প্রতিনিয়ত নানা উদ্যোগ নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং দাঁড়াচ্ছেন। তৃণমূল থেকে এমন অসংখ্য উদ্যোগ আর সাফল্যের কথা আমাদের জানাচ্ছেন তরুণরা। প্রিয় পাঠক, আপনাদের পাঠানো অসংখ্য উদ্যোগ থেকে ছয়টি আলোজ্বলা উদ্যোগ নিয়ে আজকের বিশেষ আয়োজন। গ্রন্থনা করেছেন আশিক মুস্তাফা ও রুবেল মিয়া নাহিদ

শারমিন রহমান সুইট। ২০১৩ সালে ফরিদপুরের ঘারুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এখনও কর্মরত সেখানেই। বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এরিয়ার প্রায় প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে তাঁর সখ্য। প্রায় সব শিক্ষার্থীর পরিবারের গল্পই তাঁর জানা। বিদ্যালয়ে পাঠদানের পাশাপাশি মা সমাবেশ, উঠান বৈঠক, হোম ভিজিট, অভিভাবক সমাবেশ করেন তিনি। গ্রামের শিশুদের লেখাপড়ার অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পরিবারের দারিদ্র্য এবং মায়েদের লেখাপড়া না জানা বা অসচেতনতা। এ সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যেই ‘মায়ের পাঠশালা’ নামে অনন্য এক স্কুল গড়ার উদ্যোগ নেন শারমিন। যেখানে মায়েদের লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করা হয়।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান করে কী করে এই মায়েদের পাঠশালা সামলান– এমন প্রশ্নের উত্তরে শারমিন বলেন, ‘আমার বাড়ি এবং বিদ্যালয় পাশাপাশি দুটো গ্রামে। কুমার নদ গ্রাম দুটোকে আলাদা করেছে। পাশাপাশি গ্রাম হওয়ায় আমি ছুটির দিনে মানে শুক্র ও শনিবার ‘মায়ের পাঠশালা’-তে সময় দিই। মায়েদের পড়তে ও লিখতে সাহায্য করি। এ ছাড়া অন্যান্য ছুটির দিনেও ‘মায়ের পাঠশালা’-তে পড়াই। এতে আমার একটু কাজের চাপ বাড়লেও বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে কোনো সমস্যা হচ্ছে না, বরং বিদ্যালয়ের শিশুদের প্রতি আমাদের যে প্রত্যাশা, তা বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বলে আমি মনে করি।’

শারমিন আরও বলেন, ‘২০২৩ সালে মায়ের পাঠশালার যাত্রা শুরু। কাজটা সহজ ছিল না। এখনও বহু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে মায়েরা অনেক খুশি। তাদের আন্তরিকতায় সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার শক্তি রয়েছে আমার। মা-সন্তান একই সঙ্গে বোর্ডে লিখছে। সন্তানের কাছ থেকে মা লেখা শিখে নিচ্ছেন সুযোগ পেলেই। যে দু-একজন মা লেখাপড়া জানেন কিছুটা, তারাও সুযোগ পেলে অন্য মাকে পড়তে ও লিখতে সাহায্য করছেন। এখানে লেখাপড়ার পাশাপাশি মায়েরা যেসব কাজে দক্ষ, সেগুলোও করছেন। যেমন– নকশিকাঁথা, উলের কাজ, পাট ও বেতের কাজসহ বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ করছেন।’  

২০২১ ও ২০২২ সালে শারমিন উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। ২০২১ সালে পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ জয়িতার তকমাও। 
আগামীর পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে শারমিন রহমান সুইট বলেন, ‘দীপ নারায়ণ নামে পশ্চিম বাংলার এক তরুণের রাস্তার মাস্টারের ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ২০২৩ সালে মায়ের পাঠশালার যাত্রা শুরু। মায়েদের শিক্ষিত ও সচেতন করার লক্ষ্যে মায়ের পাঠশালার কার্যক্রম সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। এ ছাড়াও তরুণদের উৎসাহ দিয়ে যেতে চাই, যাতে তারা নিজেদের পাশাপাশি সমাজের ভালোর চেষ্টা করেন। আসলে একা কখনও ভালো থাকা যায় না। আমরা যেখানে আছি তার চারপাশের মানুষের ভালো না করতে পারলে নিজের ভালো থাকার সুযোগ নেই। মোবাইল গেমস, টিকটক এসবে সময় নষ্ট না করে পড়ালেখার পাশাপাশি অবসর সময়ে নিজের এলাকা, দেশকে সুন্দর করার কাজে তরুণরা এগিয়ে এলে বাংলাদেশ আরও সমৃদ্ধ হবে।’ 

আরও পড়ুন

×