ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

প্রান্তিক মানুষের পাশে

প্রান্তিক মানুষের পাশে

অসহায় মানুষের ডাকে পাশে দাঁড়ানোই যেন আব্দুল জব্বারের কাজ

রুবেল মিয়া নাহিদ

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪ | ২৩:২১

আব্দুল জব্বার। দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলা ইছামতী নদীর তীরে বেড়ে ওঠা। তাঁর মানবিক কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে জব্বার বলেন, ‘২০১৮ সালের কথা। চৈত্রের তপ্ত দুপুর। কাজ শেষে বাড়িতে ফিরছিলাম। সরু পাকা রাস্তা পার হয়ে বালুময় কাঁচা রাস্তায় উঠলাম। আর কিছুক্ষণ চললেই বাড়িতে পৌঁছাব। নদীর পাড়েই বালুময় আঁকাবাঁকা রাস্তা। বিশাল বটগাছের নিচ দিয়ে রাস্তার মোড় ঘুরতেই চোখে পড়ল মানুষের দীর্ঘ লাইন। যেখানে নারীর সংখ্যাই বেশি। কোনো দুর্ঘটনা নয়তো? আমি মোটরসাইকেল থামালাম। ঘটনা কী সেটা বোঝার জন্য। অতি বয়স্ক মায়েরা হাতে কলস, জগ, বালতি ইত্যাদি নিয়ে অন্যের বাড়ি থেকে পানি আনার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের শারীরিক অবস্থা প্রচণ্ড রকম দুর্বল দেখাচ্ছিল। শুকনো মুখ অসহনীয় কষ্টে যে তারা দিনযাপন করছেন, তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না মোটেই। সিদ্ধান্ত নিলাম, সেই স্থানের মানুষের পানির সমস্যা দূর করার। কিছুদিন পর আমি সেই এলাকায় নিজ উদ্যোগে কয়েকটি টিউবওয়েল স্থাপন করে দিই। বিশেষ করে যারা বৃদ্ধ, বিধবা, প্রতিবন্ধী এবং অসহায় তাদের বাড়িতে। এই পথচলা শুরু। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে আবির্ভাব ঘটে ভয়াবহ মহামারি ভাইরাস কভিড-১৯-এর। শুরু হয় লকডাউন। মানুষ হয়ে পড়ে অসহায়, অসহায় দরিদ্র মানুষের জীবনযাপন হয়ে পড়ে আরও দুর্বিষহ। নানা ভয়, শঙ্কা দূর করে তাদের জন্য কাজ করা শুরু করি। এ সময় আমার সঙ্গে পরিচয় হয় কিছু দানশীল ব্যক্তির সঙ্গে। যারা অসহায় মানুষের জন্য সহায়তা করতে চান। আমি আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং তাদের দানকৃত সহায়তার মাধ্যমে দরিদ্র এবং অসহায় মানুষের মধ্যে পুরো কভিড মহামারির সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী, মাস্ক, স্যানিটাইজার, সাবান ইত্যাদি বিতরণ করি। এরপর স্বেচ্ছাসেবী কাজের প্রতি আমার আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে আমার কাজের পরিধি। প্রতিবন্ধীদের মধ্যে হুইলচেয়ার দেওয়া, দৃষ্টিহীনদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ঈদের সময় অসহায় মানুষের মধ্যে সেমাই, চিনি, চাল, ডাল, তেল, মসলা, গরু ও খাসির মাংস, সেলাই মেশিন বিতরণ, মুদি দোকান স্থাপন, পরিবেশবান্ধব গাছের চারা বিতরণ, নদী ও জলাশয় পরিষ্কার ইত্যাদি কাজ শুরু করি। ইতোমধ্যে অনেক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান আমার স্বেচ্ছাসেবী কাজের বিষয়ে জানতে পেরে 
সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে বিভিন্নভাবে আমি সরাসরি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সেবা দিতে পেরেছি।’
আগামীর পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আব্দুল জব্বার বলেন, ‘আরও তরুণদের যুক্ত করতে চাই এ কাজে। তরুণরা এগিয়ে এলে দেশের যে কোনো সমস্যা সমাধান করা যায়; এটা বিশ্বাস করি মনেপ্রাণে।’ u

আরও পড়ুন

×