ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

শেরপা ছাড়াই হিমালয়ের তিন পর্বত জয়...

শেরপা ছাড়াই হিমালয়ের তিন পর্বত জয়...

৬ হাজার ১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক চূড়ায় লাল-সবুজের পতাকা হাতে আহসানুজ্জামান তৌকির

শামীম হাসান মিলন    

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:৫৪

আহসানুজ্জামান তৌকির।  ৩০ অক্টোবর সকালে হিমালয়ের মেরা পিক জয়ের মাধ্যমে ছয় হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার তিন পর্বতচূড়া জয় করেন। মাত্র ২৭ দিনে কোনো ধরনের শেরপার সাহায্য ছাড়াই চূড়াগুলো জয় করেন এ সাহসী তরুণ। ‘থ্রি পিক ইন এ রো’ শিরোনামে এ অভিযানের গল্প তুলে এনেছেন শামীম হাসান মিলন    

কোনো ধরনের শেরপার সাহায্য ছাড়াই মাত্র ২৭ দিনে নেপালের ছয় হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার তিন পর্বতচূড়া জয় করেছেন আহসানুজ্জামান তৌকির। ‘থ্রি পিক ইন এ রো’ শিরোনামে এ অভিযান শেষ হয় ৩০ অক্টোবর সকালে মেরা পিক জয়ের মাধ্যমে। অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে আহসানুজ্জামান তৌকির বলেন, ‘হিমালয়ের যে কোনো পর্বত অভিযানই কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল। তবে প্রচণ্ড ঠান্ডা ও ঝুঁকিপূর্ণ ক্লাইম্বিং শেষে যখন নিজ দেশের পতাকা উড়িয়েছি, তখন সব কষ্ট নিমেষে আনন্দে রূপান্তর হয়েছে। আমি এ অভিযানের জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই রোপ ফোর আউটডোর এডুকেশনকে, যাদের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ অভিযান সফল হতো না।’

জন্ম ও বেড়ে ওঠা
আহসানুজ্জামান তৌকিরের জন্ম ও বেড়ে ওঠা চলনবিলের কোলঘেঁষা পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লায়। বাবা আকরাম হোসেন সাবু ও মা সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে ছোট তৌকির। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল ই-তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন। পেশায় একজন প্রকৌশলী হলেও তাঁর ধ্যান-জ্ঞানজুড়েই কেবল পর্বতারোহণ। এই অভিযানের আগে গত তিন বছরে হিমালয়ের পাঁচটি ছয় হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার পর্বত জয় করেছেন তরুণ এ পর্বতারোহী।  

অভিযান ‘থ্রি পিক ইন এ রো’
গত ৪ অক্টোবর দেশ থেকে নেপালের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন তৌকির। কাঠমান্ডুতে দু’দিনের অভিযান প্রস্তুতি শেষে চলে যান এভারেস্ট অঞ্চলের খুমবু ভ্যালিতে। সেখানে টানা পাঁচ দিন ট্র্যাকিং শেষে ১১ অক্টোবর পৌঁছান ডিংবোচে গ্রামে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে তাঁর ৬ হাজার ১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক অভিযানের কথা থাকলেও টিম লিডার মহিউদ্দিন মাহির তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ১২ অক্টোবর লবুচে পিক অভিযানে যান তৌকির। সিদ্ধান্ত নেন, কোনো শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই একা উঠবেন ৬ হাজার ১১৯ মিটারের লবুচে পিকে। ১২ অক্টোবর সকালে চলে যান ডিংবোচে থেকে ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার দূরের চোখুং গ্রামে। সেখান থেকে শুরু করেন ১৩ কিলোমিটার দূরের লবুচে হাই ক্যাম্পের উদ্দেশে যাত্রা। বিকেলে লবুচে হাই ক্যাম্পে পৌঁছে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে স্থানীয় সময় রাত ২টা ২০ মিনিটে চূড়া জয়ের জন্য যাত্রা শুরু করেন এবং সকাল ৭টা ৩৬ মিনিটে পা রাখেন লবুচে ইস্ট পর্বতচূড়ায়; তুলে ধরেন বাংলাদেশের পতাকা। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে কোনো শেরপার সাহায্য ছাড়াই এই পর্বত অভিযান শেষ করেন তৌকির।

আইল্যান্ড পিক অভিযান
এরপর চলে যান এভারেস্ট বেস ক্যাম্প, সেখান থেকে আবার ফিরে আসেন আইল্যান্ড পিক ভিলেজ ক্যাম্পখ্যাত চোখুংতে। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে ১৭ অক্টোবর যাত্রা শুরু করেন আইল্যান্ড পিক বেস ক্যাম্পের উদ্দেশে। দুপুরে সেখানে পৌঁছান। এরপর রাত ১টা ৪ মিনিটে চূড়ার উদ্দেশে রওনা দেন। ঝোড়ো হাওয়া, একটু পরপর তুষারপাতের বাধা পেরিয়ে ১৮ অক্টোবর সকাল ৯টা ৫৪ মিনিটে ৬ হাজার ১৬৫ মিটারের আইল্যান্ড পিক চূড়া জয় করেন।  

মেরা পিক অভিযান
ফেরার সময় নামচে বাজার হয়ে নেমে আসেন লুকলা গ্রামে। সেখান থেকে শুরু হয় তাঁর তৃতীয় অভিযানের প্রস্তুতি। খুমবু ভ্যালি ছেড়ে এবার যাত্রা শুরু করেন হিংকু উপত্যকার দিকে। টানা ৭ দিন মাকালু-বারুনসে ফরেস্ট ট্র্যাকিং শেষে ২৭ অক্টোবর হিংকু নদীর উৎপত্তিস্থল পেরিয়ে শেষ গ্রাম খারেতে পৌঁছান। ২৯ অক্টোবর মেরা পিক হাই ক্যাম্পের উদ্দেশে রওনা হয়ে বিকেলে পৌঁছান সেখানে। কিছুটা বিশ্রাম শেষে রাত ২টা ৮ মিনিটে রওনা দেন চূড়ার উদ্দেশে। ৩০ অক্টোবর সকাল ৭টা ৩৬ মিনিটে তৌকিরসহ তাঁর দল ৬ হাজার ৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক জয় করেন।

আগামীর স্বপ্ন
২০২৩ সালের অক্টোবরে খুমবু রিজিওনের ৫ হাজার ৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন ও ৬ হাজার ১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করেন তৌকির। ১৬ নভেম্বর দেশে ফিরে এর পরের ভাবনা কেবলই এভারেস্টকে ঘিরে! u 

আরও পড়ুন

×