জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত পারভীন এখন অনেকের কাছে আদর্শ

মোসা. পারভীন বেগম
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৭:৪৯
বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় জেলা বরগুনায় প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় লেগেই থাকে। জোয়ারের লবণাক্ত পানিতে ঘরবাড়ি ও ফসলের খেত ভেসে যায়। বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়। খাদ্যসংকটে পড়েন সেই এলাকার মানুষ। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে সাড়ে ১১ ফুট উচ্চতার তীব্র জোয়ারের পানিতে ভেসে যায় পারভীন বেগমের ঘরবাড়ি ও হাঁস–মুরগি। দিনমজুর স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে পড়েন বিপাকে। এক বেলা খেয়ে, আরেক বেলা না খেয়ে দিন কাটত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বারবার ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যতবার ঘুরে দাঁড়ান ততবারই আবার ভেসে যায় বাড়িঘর। জমানো টাকা চলে যায় নতুন বাড়ি তৈরিতে। যখন আবার কিছুটা গতি আসতে শুরু করে জীবনে, তা তছনছ হয়ে যায় ঘূর্ণিঝড়ে। বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের মোসা. পারভীন বেগমের জীবন এভাবেই আবর্তিত হতে থাকে।
পারভীন বেগম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সবকিছু হারিয়ে যখন নিঃস্ব হয়েছিলাম, তখন এলাকার একজন আত্মীয়ের কাছে প্রথম জানতে পারি লজিক প্রকল্পের কথা। সেখানে যোগাযোগ করে ২০২০ সালে লজিক প্রকল্পের একজন উপকারভোগী হিসেবে নির্বাচিত হই। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হয়। কিন্তু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কী জানতাম না। লজিক প্রকল্পের আপাদের সহযোগিতায় আমি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলি এবং সেখান থেকে ১৭ হাজার টাকা দিয়ে কয়েকটি হাঁস ও মুরগি কিনে বাণিজ্যিকভাবে পরিচর্যা শুরু করি। কয়েক মাস পর সেগুলো বাজারে বিক্রি করি। সেই টাকা দিয়ে ঘর মেরামত করি এবং সংসারের খরচ চালাই। আর কিছু টাকা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করি।’
পারভীন বেগম বলেন, ‘প্রশিক্ষণ নেওয়ার আগে জানতাম না যে পরিকল্পিতভাবে ফার্ম আকারে মুরগি পালন করা যায়। বর্তমানে একটি পোল্ট্রি ফার্ম, উন্নত জাতের খাকি ক্যামবেল হাঁস ও গরু পালন করি। এগুলো থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা আয় হয়। সেই টাকা দিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাই।’
শুধু গৃহপালিত পশু নয়, ২০২৩ সালে সূর্যমুখী ও মুগডাল চাষেরও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন পারভীন বেগম। এ সময় লজিকের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষিবিষয়ক কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও তাদের কাছে নেওয়া প্রশিক্ষণ কাজে লাগে। সেই প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ১০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী ও মুগডাল চাষ করেন পারভীন। খরচ বাদ দিয়ে লাভ করেন ১৬ হাজার টাকা। বর্তমানে সন্তানদের নিয়ে গ্রামে বেশ ভালো ও সচ্ছলতা নিয়েই দিন কাটছে পারভীনের। পারভীন বলেন, ‘এখন গ্রামের অনেকে আমার মতো হতে চায়। আমাকে আদর্শ মেনে আমার মতো উদ্যোক্তা হয়ে নিজের দিনবদলের গল্প নতুন করে লিখতে চায়।’
পারভীন নিজের জমানো টাকা দিয়ে একটা জমিও কিনেছেন। সেই জমিতে সবজি চাষ করেন। বাড়ির সঙ্গে লাগানো সবজিবাগানে রয়েছে ঢ্যাঁড়স, শিমসহ কয়েক ধরনের সবজি। সারা বছর নিজের বাগান থেকে সবজি পান, ফলে বাজার থেকে কিছু কিনতে হয় না। নিজের বাগানের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই নিজের দিনবদলের কথা বলছিলেন পারভীন। স্বপ্ন দেখেন ছেলে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা নিয়ে কাজ করবেন।
লজিক প্রকল্পটি সুইডেন এবং ডেনমার্ক সরকারের আর্থিক সহায়তায়, ইউ এন ডিপি এবং ইউ এন সি ডি এফ বাংলাদেশের কারিগরি সহযোগিতায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে কমিউনিটি ভিত্তিক জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে স্থানীয় পর্যায়ের অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকল্পনা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অর্থায়নের জন্য ২০১৭ সাল থেকে কাজ করছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
- বিষয় :
- জলবায়ু পরিবর্তন
- বরগুনা