বিশ্ব ডুয়াথলনে লাল-সবুজের নারীর জয়যাত্রা

কানিজ ফাতেমা ছন্দা
কানিজ ফাতেমা ছন্দা
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:৩৪
বিশ্ব ডুয়াথলনের সবচেয়ে বড় আসর পাওয়ারম্যান মালয়েশিয়া। ২০২৪ সালে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম বাংলাদেশি নারী অ্যাথলেট হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে শেষ করতে পেরেছি আমি। যদিও বাংলাদেশে, বিশেষ করে নারীদের কাছে এ খেলা একেবারেই অপ্রচলিত। তাই এ গেমসে বাংলাদেশ থেকে তেমন কোনো নারী অংশ না নিলেও বিশ্বের প্রায় ২ হাজার ১৮৩ জন এ আসরে অংশ নেন। এ প্রতিযোগীদের মধ্যে নারী প্রতিযোগীর সংখ্যা ৩৩১ জন। তবে এ বছর বাংলাদেশ থেকে আমি ছাড়াও আরও চারজন প্রতিযোগী আসরটিতে অংশ নিয়েছিলাম।
পাওয়ারম্যান মালয়েশিয়ার সংক্ষিপ্ত ক্যাটেগরিতে প্রথমে পাঁচ কিলোমিটার দৌড়। এরপর ৩০ কিলোমিটার সাইক্লিং এবং শেষে আবার পাঁচ কিলোমিটার দৌড়ে অংশ নিতে হয়। এ তিনটি কাজই যথাযথভাবে করেছি। ২০২২ সালে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে বয়সভিত্তিক ক্যাটেগরিতে চ্যাম্পিয়ন হন বাংলাদেশে সাইক্লিংয়ে জাতীয় প্রতিযোগিতায় স্বর্ণজয়ী রাকিবুল ইসলাম।
আমার জন্ম ঢাকায়। বেড়ে ওঠাও এ শহরের আলো-হাওয়া গায়ে মেখেই। প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বেইলি রোড ক্যাম্পাসে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞানে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করি একই বিষয়ে। বাবা মুজিবুর রহমান খান ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মা পারভিন খানম সামলান পরিবার। একমাত্র ছোট ভাই মুশফিকুর রহমান আশিক কাজ করছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে।
নারীর স্বাস্থ্য সচেতনতাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘ডিয়ার ডায়েট’-এর প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছি। সেই সঙ্গে সাইক্লিং আর ঘোরাঘুরি তো আছেই! ‘ডিয়ার ডায়েট’-এর আগে কাজ করেছি আইসিডিডিআর,বি, ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং এরিস্টোফার্মা লিমিটেডে। ২০১৯ সালে পিকেএসএফের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। ২০১৮ সালে সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে সম্মাননা পাই কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ ফাউন্ডেশন থেকে।
সাইক্লিংয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক সেই শৈশব থেকে। তাইতো ‘স্কুল অব সাইক্লিং’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক হিসেবে ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ঢাকার লালমাটিয়াসহ সারাদেশে প্রায় দুই হাজার নারীকে সাইক্লিংয়ের প্রশিক্ষণ দিয়েছি।
আসলে সাইক্লিং, রানিং বা অ্যাথলেটিকসের বিশ্ব আসরে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়া নারী প্রতিযোগীর সংখ্যা একেবারেই কম। কারণ, এখানে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই বললেই চলে। তবে এর পরিবর্তন দ্রুতই আসবে বলে আমার বিশ্বাস।
এই যে আমি এমন একটি প্রতিযোগিতায় গেলাম, এর সম্পূর্ণ খরচ আমি নিজেই জোগাড় করেছি। মানে পুরো খরচটাই আমার একান্ত ব্যক্তিগত। সেই অর্থের পরিমাণ প্রায় দুই লাখ টাকা। আমি মনে করি, এ ধরনের প্রতিযোগিতায় সরকারি বা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে বাংলাদেশের নারীরা বিশ্ব আসরে আরও বেশি অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বয়ে আনতে পারবেন দেশের জন্য সুনাম।
বিশ্বের কঠিনতম এ আসরে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা আছে, এমন অসংখ্য সাইক্লিস্ট আছেন দেশে। আমি নিজেও একজন সাইক্লিস্ট। তবে আগে সেভাবে রানিং করিনি। তিন মাস আগে প্রথমে বন্ধুরা আমার নাম রেজিস্ট্রেশন করে দেয়। পরে তাদের অনুপ্রেরণায় এবং স্বর্ণজয়ী সাইক্লিস্ট রাকিবুল ইসলামের কাছে তিন মাস প্রশিক্ষণ নিই। প্রশিক্ষণকালীন কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ি। এরপর প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। অনেকের মনে হতে পারে, তিন মাসের প্রস্তুতিতে এত বড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি। আসলে বিষয়টি এমন নয়, প্রস্তুতি দীর্ঘদিনের। এই তিন মাস নিজেকে যথাযথ প্রস্তুত করেছি। সে যাক, একটা বিষয় বুঝতে পেরেছি, এমন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য সুস্থতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্যই নারীর সুস্থ জীবনযাপন নিয়ে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে চাই আগামীতে। কারণ, আমাদের দেশের নারীকে স্বাস্থ্যগতভাবে সচেতন করে তুলতে পারলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে আগামীতে আরও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে চাই। বিশ্ব আসরে উড়াতে চাই লাল-সবুজের পতাকা।
নারী অ্যাথলেট
ও উদ্যোক্তা
- বিষয় :
- নারী