ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

সাক্ষাৎকারে আমিনুল ইসলাম বুলবুল

তিন শতক পূরণের লক্ষ্য নিয়ে এসেছি

তিন শতক পূরণের লক্ষ্য নিয়ে এসেছি

আমিনুল ইসলাম বুলবুল

আমিনুল ইসলাম বুলবুলের পরিকল্পনার কথা শুনেছেন সেকান্দার আলী

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫ | ০১:২১ | আপডেট: ০২ জুন ২০২৫ | ১২:২৪

ফারুক আহমেদকে সরিয়ে বিসিবির নতুন সভাপতি করা হয়েছে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে। স্বল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব নিলেও বুলবুল বিসিবিকে গতিশীল করতে চান দ্রুততার সঙ্গে। এ জন্য তিনটি শতক অর্জনের লক্ষ্য তাঁর। দেশের ক্রিকেটকে বিকেন্দ্রীকরণ, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চান তিনি। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের পরিকল্পনার কথা শুনেছেন সেকান্দার আলী

সমকাল: এসিসি ও আইসিসির অভিজ্ঞতা কীভাবে কাজে লাগাতে চান?

বুলবুল: অস্ট্রেলিয়ায় কোচিং কোর্স লেভেল ওয়ান, লেভেল টু ও লেভেল থ্রি করার পর ভিক্টোরিয়ার ইনস্টিটিউট অব স্পোর্টস থেকে সম্পন্ন করি বেসিক প্রিন্সিপাল অব কোচিং। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলে সাড়ে আট বছর ছিলাম ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে। আমার রোল ছিল একটি ক্রিকেট বোর্ড কীভাবে পরিচালিত হয়, সেই প্রোগ্রাম কার্যকর করা। আইসিসির রোল ছিল গবেষণাভিত্তিক। আইসিসির কৌশল কেমন হওয়া উচিত, কীভাবে সেটি বাস্তবায়ন করব সহযোগী দেশগুলোতে। আফগানিস্তানের উত্তরণ যেমন আমার হাত দিয়ে হয়েছে। সহযোগী দেশ থেকে পূর্ণ সদস্য হয়েছে তারা। নেপাল, ওমান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াকে নিয়ে ২০টি দেশের সঙ্গে কাজ করার ফলে একটি অভিজ্ঞতা হয়েছে। এ অভিজ্ঞতার একটি প্যাকেজ বাংলাদেশকে উপহার দিতে চাই। 

সমকাল: প্যাকেজটি কী ধরনের হতে পারে?

বুলবুল: গতকাল (শনিবার) সাড়ে চার ঘণ্টা জরুরি সভা করেছি। আমি নিজেই প্রেজেন্টেশন দিয়েছি। যেটির নাম ট্রিপল সেঞ্চুরি (তিন শতক)। ট্রিপল সেঞ্চুরিটা হচ্ছে– শতভাগ সততা, শতভাগ পারফরম্যান্স ও শতভাগ লক্ষ্য পূরণ। এই তিনটি জিনিস কার্যকর করার জন্য চারটি প্রোগ্রাম চালু করব। এর মাধ্যমে সুযোগ-সুবিধা থেকে শুরু করে ইন্টিগ্রেটি, হাইপারফরম্যান্স, বোর্ডের কার্যক্রম একটা তালিকায় থাকবে। আমরা কাজটি শুরু করে দিয়েছি। 

সমকাল: ক্রিকেট কি ঢাকায় থাকবে, না বিকেন্দ্রীকরণের পরিকল্পনা আছে?

বুলবুল: আমাদের অগ্রাধিকার হলো জাতীয় দলের পারফরম্যান্স উন্নতি করা। ডেভেলপমেন্টে এক নম্বর অগ্রাধিকার– ক্রিকেটকে বিকেন্দ্রীকরণ করা। শিগগিরই পাইলট প্রকল্প হিসেবে রাজশাহী ও চট্টগ্রামে দুটি সেন্টার করা হবে। আমরা আপাতত বড় বিভাগে নিয়ে যাচ্ছি ক্রিকেটকে। যেখানে একটি মিনি বিসিবি থাকবে। আমরা ২৫ বছর পিছিয়ে আছি। কারণ, টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার সময় আইসিসিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম ক্রিকেটকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। আঞ্চলিক সংগঠক ঠিক করার জন্য আজ উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি। শিগগিরই ক্রিকেট বিভাগে পৌঁছে যাবে।

সমকাল: বাংলাদেশে ক্রিকেট অবকাঠামো অপ্রতুল। এ ক্ষেত্রে আপনার পরিকল্পনা কী?

বুলবুল: আমাদের যে মাঠ বা ভেন্যু রয়েছে, সেগুলো কীভাবে পুনর্ব্যবহার ও নিয়মিত খেলা আয়োজন করা যায়, সে চেষ্টা করা হবে। স্টেডিয়ামগুলো ব্যবহার উপযোগী করে তোলা গেলে ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। 

সমকাল: জাতীয় দল ভালো করছে না। এখান থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটাবেন?

বুলবুল: পাকিস্তানে সিরিজ শেষে তারা দেশে ফেরার পর পারফরম্যান্স মূল্যায়ন ও ফিডব্যাক দেওয়ার চেষ্টা করব। আমরা যেহেতু তিনটি সংস্করণে নিয়মিত খেলি, এই জায়গাগুলোতে কীভাবে আরও ভালো করা যায়, সে চেষ্টা থাকবে। এর আগে দেখব কোন কোন জায়গায় উন্নতি করতে হবে। একটি দলের পারফরম্যান্স গ্রাফ কখনও ওপরে ওঠে, কখনও নিচে নামে। আমরা যদি জানতে পারি কী কারণে নিচে নেমেছে, তাহলে উন্নতি করা সহজ হবে। ওরা দেশে ফিরলে আমরা অবশ্যই দেখব কোন কোন জায়গায় ফাঁক আছে। 

সমকাল: ভারতে ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ভালো যায়নি। ২০২৬ সালে টি২০ বিশ্বকাপ ভারত-শ্রীলঙ্কায়। সেখানে কী ধরনের প্রত্যাশা থাকবে?

বুলবুল: আমরা চেষ্টা করব দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে। এর আগে আমাদের দলটা গোছাতে হবে। আপনারা দেখেছেন, আমরা আরব আমিরাতের কাছে হেরেছি, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরেছি তাদের মাটিতে। পাকিস্তানের কাছে হেরেছি। পারফরম্যান্স অতটা ভালো না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এ মুহূর্তে যেটি করতে হবে সমালোচনার পরিবর্তে উজ্জীবিত করে পারফরম্যান্স বাড়াতে হবে। এর আগে পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করে বের করতে হবে কোথায় প্রকৃত গ্যাপ। সেটা টার্গেট করে কাজ করা হবে। আমি একটা জিনিস বলে রাখতে চাই, সভাপতির রোলে থেকে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। ক্রিকেট অপারেশন্সের প্রধান সহসভাপতি নাজমুল আবেদীন ফাহিম ভাই আছেন। তাঁর মাধ্যমেই কাজটি করতে চাই।

সমকাল: বিসিবিতে এ মুহূর্তে বড় সমস্যা বিশৃঙ্খলা। শৃঙ্খলা ফেরানোকে চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন?

বুলবুল: এটি চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আমরা এইচআর পলিসি হাতে নিচ্ছি। ওটাও তালিকায় আছে। কোথায় এবং কেন বিশৃঙ্খলা হচ্ছে, জানতে হবে। আমাদের অগ্রাধিকার হলো দুর্নীতি দমন বিভাগকে এডুকেশন দেওয়া। ক্রিকেট স্পিরিট কার্যকর করা। এগুলোর কার্যক্রম শুরু করব ৩০ জুনের মধ্যে।

সমকাল: বিসিবিতে আপনার জার্নি সংক্ষিপ্ত, না দীর্ঘ?

বুলবুল: আপাতত সংক্ষিপ্ত। জানি না, পরে কী হবে। আজকের দিনটা আমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ২০১৫ সালে এই দিনে আমি আইসিসিতে যোগ দিয়েছিলাম, ১০ বছর পূর্তির দিনে চাকরি ছাড়লাম। আপাতত আমি ফ্রি। যদিও আমি লম্বা সময়ের জন্য আসিনি। আবারও বলছি, টি২০ খেলতে এসেছি। এই মেয়াদে প্রতিটি মিনিট হিসাব করে কাজ করছি।

সমকাল: বিসিবির বিদায়ী সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে কথা হয়েছে? 

বুলবুল: ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে এখনও কথা হয়নি। তাঁকে ফোন করতে চাই, জানি না করা উচিত হবে কিনা। তবে খেলোয়াড় হিসেবে ফারুক ভাই, নান্নু ভাই, লিপু ভাই, বাদশা ভাই, আশরাফুল ভাই সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাই। আমাদের ক্রিকেট কমিউনিটির ছন্দটা হঠাৎ কেমন থমকে গেছে। আমরা চেষ্টা করব ক্রিকেটের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কটা ফেরাতে। 

সমকাল: গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন দেওয়াই কি আপনার মূল কাজ?

বুলবুল: আমাদের পরিকল্পনায় আছে গঠনতন্ত্র নিয়ে কাজ করব। গঠনতন্ত্রের মালিক আমরা না, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। এনএসসি যদি কিছু পরিবর্তন করতে চায়, সেখানে আমাদের কিছু ইনপুট থাকবে, যেটি গঠনতন্ত্রের উন্নয়নে সহায়তা করবে। 

সমকাল: বোর্ডের সবার সঙ্গে কথা হয়েছে? 

বুলবুল: শুক্রবার পরিচালকদের ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। আমরা দুটি মিটিং করতে পেরেছি। আজ উপদেষ্টার ওখানে মধ্যাহ্নভোজ ছিল। সেখানে গিয়ে একটা মিটিং করেছি। আমরা এখন ১০ জন পরিচালক আছি। এই ১০ জনের চিন্তা, স্বপ্ন এক করার চেষ্টা করছি। আমাদের প্রধান নির্বাহী ও তাঁর নিচে ম্যানেজার যারা কাজ করছেন, আমরা চেষ্টা করব তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী কাজের স্বাধীনতা দিতে। আমরা সহযোগী হিসেবে পাশে থাকব। এই পলিসি নিয়ে এগোতে চাই। 

সমকাল: বিসিবিতে প্রেজেন্টেশন নিয়ম চালু করতে চাচ্ছেন। আপনার আইডিয়া সবাই গ্রহণ করেছে?

বুলবুল: আইডিয়া লেভেলে একটা জিনিস থাকে, সেটি লিখে রেখে উপস্থাপন করাটা খুবই সহজ। যে কোনো কিছু কার্যকর তখনই হবে, যখন সঠিক পরিকল্পনা হবে। আমাদের কাছে লোকবল আছে। বিসিবির টাকা আছে। সৎ উদ্যোগ এবং স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতা পেলে সবকিছু করা সম্ভব। 

সমকাল: বিসিবির কাজ শেষে আপনার পরবর্তী গন্তব্য কোথায়?

বুলবুল: আমার পরিবার অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। আইসিসিতে আমার চাকরি প্রথমে পার্মানেন্ট ছিল, পরে কনসালট্যান্সি হিসেবে নিয়েছিলাম। এতে কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। ছয় মাস মেলবোর্ন থেকে কাজ করতাম অনলাইনে। বাকি ছয় মাস দুবাইয়ে থাকতাম। বোর্ডের সভাপতিকে রোজ অফিসে আসার প্রয়োজন নেই। তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে অনলাইনেও বোর্ড মিটিং করতে পারব। একটা সময় হয়তো আমি অস্ট্রেলিয়ায় কাটাব, লম্বা সময় বাংলাদেশে থাকব। আমাকে আইসিসি থেকে বলা হয়েছে, যে কোনো সময় তাদের ওখানে যোগ দিতে পারব। কারণ, আমার পারফরম্যান্স খুব ভালো ছিল। তবে এটি মৌখিকভাবে বলা, তাই আইসিসিতে ফেরার ব্যাপারটা জোর দিয়ে বলতে পারব না। 

সমকাল: বাংলাদেশে মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার চাপ খুব বেশি। এই চাপ নিতে কতটা প্রস্তুত? 

বুলবুল: আমরা সবাই একই বর্ণমালা শিখি। কিন্তু আমাদের হাতের লেখা এক না। আমাদের ডেলিভারিটা একেকজনের একেক রকম। একটা কমন ডেলিভারি থাকলে তাতে কিছুটা সমালোচনা থাকবে, বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা থাকবে, উন্নতির জায়গাগুলো দেখিয়ে দেবে। এগুলোকে স্পোর্টিংলি নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন

×