প্রচ্ছদ
ত্বক বুঝে যত্ন

রিক্তা রিচি
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৪ | ০৭:২৬
গুরু গর্জনে নীল অরণ্য শিহরে,/ উতলা কলাপী কেকাকলরবে বিহরে–/ নিখিলচিত্তহরষা/ ঘনগৌরবে আসিছে মত্ত বরষা।। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রকৃতিতে ঘনগৌরবে বর্ষা আসে। জলের অবগাহনে প্রকৃতি হয় রূপবতী। মাটি, ফসল, গাছেদের জন্য বর্ষা ঋতু উপকারী হলেও, ত্বক ও চুলের জন্য খুব একটা সুবিধার নয়। বর্ষাকালে ত্বকে ব্রণ, র্যাশ ও অন্যান্য ফাঙ্গাল ইনফেকশন দেখা দেয়। নোংরা পানিতে হাঁটলে পায়ে সংক্রমণ হয়। এজন্য এ সময় মুখ, হাত ও পায়ের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। নয়তো ফাঙ্গাল ইনফেকশন ও অ্যালার্জিজনিত জটিলতায় বেশ কাঠখড় পোড়াতে হবে।
শোভন’স মেকওভারের স্বত্বাধিকারী ও কসমেটোলজিস্ট শোভন সাহা জানান, বর্ষায় ত্বকে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বেড়ে যায়। তাই এ সময় ত্বক শুষ্ক রাখতে হবে। বিশেষ করে কনুইয়ের ভাঁজে, বগলের নিচে, গলায় যেন ঘাম জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ জায়গাগুলোয়
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়ে থাকে। তাই এ জায়গাগুলো পরিষ্কার করে শুষ্ক রাখতে হবে।
তিনি জানান, সপ্তাহে তিন থেকে চারবার লুফাতে সাবান বা বডিওয়াশ মিশিয়ে শরীর ধুতে হবে। মাঝেমধ্যে পুরো শরীরে স্ক্রাব করতে পারেন। স্ক্রাবিংয়ের পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে যেন ত্বক বেশি শুষ্ক না হয়ে যায়। একই সঙ্গে তেল চিটচিটে না দেখায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
ব্রণ-র্যাশ থেকে বাঁচতে: রূপ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্ষায় মুখে প্রচুর ব্রণ, পিম্পল, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, র্যাশ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বর্ষাকালে অ্যালার্জি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। ধুলাবালির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। যদি খুব বেশি ধুলাবালি লেগে যায়, তাহলে একটু পরপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে পিম্পল কিংবা র্যাশ হবে না।
ব্রণ দূর করার প্যাক: বর্ষায় ব্রণ দূর করতে এক চামচ নিম পাতার পেস্টের সঙ্গে এক চামচ মুলতানি মাটি, গোলাপজলের সঙ্গে মিশিয়ে লাগাতে পারেন। এ ছাড়া নিম তেল, ল্যাভেন্ডার অয়েল কিংবা এসেনসিয়াল অয়েল এক ড্রপ করে মিশ্রণের সঙ্গে যোগ করতে পারেন।
ব্রণ ও এ জাতীয় ত্বকের সমস্যা কমাতে নিম ও হলুদের প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। নিমে থাকা ফাঙ্গাল ও ব্যাকটেরিয়াবিরোধী গুণাগুণ ত্বকের ব্রণ ও এর দাগ কমাতে সহায়তা করে। এক টেবিল চামচ নিম পাতা বেটে, এর সঙ্গে আধা চা-চামচ হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে নিন। এ পেস্ট মুখে মেখে ১০ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিম ও হলুদের প্যাক রাতের দিকে ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। দিনের বেলা হলুদের প্যাক ব্যবহারের পর রোদে গেলে ত্বক বেশি কালচে হয়ে যায়।
ব্রণ দূর করতে ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে ২ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন। লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক এসিড ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে। ডিমে থাকা প্রোটিন ত্বককে টানটান করে।
ত্বকের ধরন বুঝে প্রতিদিনের আলাদা যত্ন: বর্ষায় ত্বকের ধরন বুঝে যত্ন নিতে হবে। কেননা সব ত্বকে সব ধরনের টিপস কার্যকর হয় না। যাদের ত্বক তৈলাক্ত, তারা দিনে দু’বার লাইট ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। এর পরও তেল থাকলে টিস্যুর সাহায্যে ড্যাব করে তেল তুলুন। পোরস টাইট করার জন্য টোনার ব্যবহার করুন। এর পর লাইট ময়েশ্চারাইজার লাগান। সপ্তাহে একবার ক্লে মাস্ক লাগান। এতে গভীর থেকে তেল ও সেবাম উঠে আসবে। তৈলাক্ত ত্বকে মুলতানি মাটির প্যাকও ভালো কাজ করে।
যাদের ত্বক শুষ্ক, তারা ভালো করে মুখ পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন। সব সময় হাইড্রেট থাকতে হবে। ভুলেও গরম পানিতে গোসল করা যাবে না। মেকআপ না তুলে ঘুমাতে যাওয়া যাবে না। ত্বক ভালো রাখতে সপ্তাহে একবার হাইড্রেটিং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
যাদের ত্বকে র্যাশ-ঘামাচি আছে এবং যাদের ত্বক চুলকায়, তারা ঘ্রাণযুক্ত কোনো পণ্য ব্যবহার করবেন না। সোপ-ফ্রি ক্লিনজার ব্যবহার করুন। সানস্ক্রিন ছাড়া বাইরে যাবেন না। বৃষ্টিতে ভিজে গেলে বাসায় ফিরে দ্রুত গোসল করে ফেলুন। বর্ষাকালে যতটা সম্ভব মেকআপ এড়িয়ে চলুন। চুলকানি থেকে বাঁচতে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল পাউডার ব্যবহার করতে হবে। বেশি সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সানস্ক্রিন ব্যবহারে ভুল নয়: আকাশে কালো মেঘ দেখে সানস্ক্রিন ব্যবহার না করে বেরিয়ে যাবেন না। তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা ওয়াটারবেজড সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। চেষ্টা করুন এসপিএফ ৩০+ সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে। রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বকের জন্য উপযোগী হলো ময়েশ্চারাইজারসমৃদ্ধ সানস্ক্রিন। নরমাল ত্বকের জন্য ৩০-৫০ মাত্রার সানস্ক্রিন উপযোগী।
পায়ের যত্ন: আকাঙ্ক্ষাস গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের অ্যারোমা থেরাপিস্ট জুলিয়া আজাদ জানান, বর্ষাকালে পায়ের যত্ন বিশেষভাবে নিতে হবে। কেননা, এ সময় বৃষ্টির কারণে জমে থাকা নোংরা পানিতে হাঁটতে হয়। নোংরা পানিতে হাঁটলে পায়ে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। বাইরে থেকে ফিরে পা ধুয়ে মুছে নিতে হবে। এর পর ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার কিংবা ফুট ক্রিম লাগাতে হবে। আলতো করে ম্যাসাজ করতে পারেন। প্রয়োজনে অলিভ অয়েলের সঙ্গে ল্যাভেন্ডার অয়েল মিশিয়ে পায়ে ম্যাসাজ করতে পারেন।
সপ্তাহে এক দিন কিংবা ১৫ দিনে এক দিন ফুট বাথ নিতে হবে। এর জন্য সহনীয় গরম পানিতে এক চামচ লবণ, এক চামচ কফি পাউডার, এক চামচ শ্যাম্পু মিশিয়ে নিতে হবে। ওই পানিতে ২০ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এর পর পা স্ক্রাব করে, ম্যাসাজ করে নিন। পা ধুয়ে মুছে ফুট ক্রিম লাগান। ঘরে যদি করতে না পারেন তাহলে পার্লারে গিয়ে মাসে দু’বার পেডিকিউর করতে পারেন। এতে পা সংক্রমণমুক্ত থাকবে। যত্ন নিলে পায়ের গোড়ালি ফাটবে না, নখ সুন্দর থাকবে। পায়ের সঙ্গে পুরো শরীরের নার্ভের সংযোগ আছে। এজন্য রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালো মানের ফুট ক্রিম দিয়ে ম্যাসাজ করলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
শুধু পায়ের যত্ন নিলেই হবে না। জুতাও পরিষ্কার রাখতে হবে। ময়লা হলে জুতা ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। জুতা যেন খোলামেলা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অপরিচ্ছন্ন ও ময়লা লেগে আছে এমন জুতা পরা যাবে না।
স্ক্যাল্পে খুশকি হলে: শোভন সাহা জানান, বর্ষায় স্ক্যাল্পে খুশকি অনেক বেড়ে যায়। এজন্য অয়েল ম্যাসাজ করে খুব ভালো করে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। চুল যেন আঠালো না হয়ে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যাদের মাথার ত্বকে তেল জমে, যাদের ঘাম বেশি হয়, তাদের প্রতিদিনই শ্যাম্পু করতে হবে। শ্যাম্পু করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, স্ক্যাল্পের শ্যাম্পু আর পুরো চুলের লেন্থের শ্যাম্পু যেন এক না হয়।
স্ক্যাল্পে সমস্যা থাকলে শ্যাম্পু স্ক্যাল্পেই করতে হবে। হেয়ার স্মুথ করার শ্যাম্পু স্ক্যাল্পে ব্যবহার করলে স্ক্যাল্প তেলতেলে হয়ে যাবে। খুশকি বেড়ে যাবে। স্ক্যাল্প ও চুলের লেন্থে কোন ধরনের শ্যাম্পু
ব্যবহার করবেন, তা হেয়ার এক্সপার্টকে দেখিয়ে নির্বাচন করার পরামর্শ
দিয়েছেন শোভন সাহা।
- বিষয় :
- ত্বক