ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

অনলাইনে কফি অর্ডার

দেশে কর্মস্থলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কফি সংস্কৃতি

দেশে কর্মস্থলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কফি সংস্কৃতি

.

মো. মাজহারুল আলম

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:১১

দেশজুড়ে ট্রেন্ডি ক্যাফে গড়ে ওঠায় এবং অনলাইনে নিজের পছন্দের কফি অর্ডার দেওয়ার স্বাচ্ছন্দ্যের কারণে দেশে কফি সংস্কৃতির দ্রুত বিকাশ ঘটেছে। কফি এখন আর কেবল সাধারণ কোনো পানীয় নই, বরং আমাদের আধুনিক জীবনযাপনের অংশ হয়ে উঠেছে। এই পরিবর্তনে ক্যাফে ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।       
ক্যাফে সংস্কৃতির বিকাশ    
বাংলাদেশে চা বরাবরই জনপ্রিয় পানীয় ছিল। এর চাহিদা গত দশকের প্রতিবছরে ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে কফির জনপ্রিয়তাও তুমুলহারে বেড়েছে। গত বছর কফির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির হার ৫৬ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এই হার থেকেই বোঝা যাচ্ছে, আমাদের সামাজিক ক্ষেত্র ও কর্মস্থলের সঙ্গে কফি কীভাবে জড়িয়ে আছে। কীভাবে কফি হয়ে উঠেছে আমাদের অবসর, সৃজনশীলতা ও সামাজিকতার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। 
গ্লোরিয়া জিনস, তাবাক, নর্থএন্ড ও এওয়েইকের মতো ক্যাফেগুলো ঢাকায় জনপ্রিয় আড্ডাস্থল ও কফিপ্রেমীদের সামাজিক মিলনমেলার জায়গা হিসেবে গড়ে উঠেছে। সামাজিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠা এ জায়গাগুলোয় মানুষ নিজের ইচ্ছামতো অবসর কাটাতে পারছেন; কাজ করা বা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন। নগরের কফি সংস্কৃতির বিকাশে ভূমিকা রাখছে এ জায়গাগুলো। 
কফির জনপ্রিয়তা
সাধারণভাবে চাপ্রেমী বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিগত বছরগুলোয় কফি একটি হট বা কোল্ড ড্রিংকস হিসেবে পরিচিত ছিল; ব্যক্তিগত পছন্দের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছিল এখানে। 
এ বিষয়ে তাবাক কফি শপের প্রতিষ্ঠাতা মোবারক শামীম বলেন, ‘পছন্দের কফি নিয়ে মানুষ অনেক বেশি নিরীক্ষামূলক হয়ে উঠেছেন। দেখা যাচ্ছে, তারা হেজেলনাট ল্যাটের মতো তাদের পছন্দের স্বাদ বা রুচির সঙ্গে যাচ্ছে এমন কোনো অনন্য স্বাদের কফির প্রতি ঝুঁকছেন।’ আবার দেখা যাচ্ছে, ব্যস্ত শিডিউল থাকার কারণে অনেকেই বাইরে বসে কফি খেতে চাচ্ছেন না; স্বাভাবিকভাবে তাই অনলাইনে কফির অর্ডারের পরিমাণও বেড়েছে। 
ফুডপান্ডার হিসাব অনুযায়ী, গরম আবহাওয়া থাকার কারণে কোল্ড কফি অর্ডারের প্রতি মানুষের ঝোঁক উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। 
অনলাইন কফি অর্ডার
বিশেষ করে অফিসে ব্যস্ত সময় কাটানোর সময় স্মার্টফোনে মাত্র একটি ট্যাপ করে অনলাইনে নিজের পছন্দের কফিটি অর্ডার করে দেওয়া এখন অনেকের কাছেই স্বাচ্ছন্দ্যময় মনে হতে পারে। 
ফুডপান্ডার হেড অব পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখতে পাচ্ছি, অফিস লোকেশন থেকে কফি অর্ডার করার প্রবণতা বাড়ছে। গ্রাহকরা বিভিন্ন ক্যাফে থেকে নানা ধরনের কফি বেছে নিচ্ছেন। ফলে এটা বোঝা যাচ্ছে, কাজের ফাঁকে অনলাইনে কফি অর্ডার করা ধীরে ধীরে আমাদের কর্মব্যস্ত জীবনেরও অংশ হয়ে যাচ্ছে।’ 
কফি ও আধুনিক কর্মস্থল
ক্যাফেতে গিয়ে ভিড় করার চেয়ে বরং আগে অফিসে পৌঁছে গিয়ে তার পর নিজের পছন্দের কফি অর্ডার দেওয়ার প্রতি ঝুঁকছেন বেশির ভাগ মানুষ। 
ডিএক্স গ্রুপের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা তারেক ইসলাম শুভ বলেন, ‘সত্যি বলতে কী, আমার পছন্দের আমেরিকানো দিয়েই দিন শুরু হয়। আগে আমি কাজে যাওয়ার পথে নর্থএন্ড কফি রোস্টারে থামতাম। তবে এখন আমি ডেস্কে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই ফুডপান্ডায় কফি অর্ডার করে দিই, এমনকি ল্যাপটপ খোলার আগেই।’     
অনেক সময় মিটিং ও জরুরি ব্যবসায়িক আলাপ শুরু করার আগে কফি অর্ডার দেওয়া হচ্ছে; আর এভাবেই কফি হয়ে উঠেছে পেশাগত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। 
আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সিনিয়র ব্র্যান্ড ম্যানেজার তারিফ শেহরান বলেন, ‘আমরা টিমের সবার জন্য একসঙ্গে কফি অর্ডার করে থাকি। আমাদের বস প্রেরণা দেওয়ার অংশ হিসেবে কখন কফি অর্ডার করবেন, সেজন্য অপেক্ষায় থাকি আমরা। এটি এখন আমাদের প্রতিদিনকার জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। আবার যদি কেউ দেরি করে আসে, তাঁকে অবশ্যই সবার জন্য কফি নিয়ে আসতে হবে।’
বাংলাদেশে কফি সংস্কৃতি বিকশিত হচ্ছে; আর ক্যাফে ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো এ প্রবৃদ্ধির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এ প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে আমাদের সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে; দেশে আমরা এখন কীভাবে বাস করছি ও কাজ করছি তা-ই প্রতিফলিত হচ্ছে। v

আরও পড়ুন

×