সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি

গাড়ি
শাহেরীন আরাফাত
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:১২ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৪ | ১২:১৬
যাদের অঢেল অর্থবিত্ত, তাদের জন্য নতুন বিলাসবহুল গাড়ি অনেকটা পোশাক কেনার মতোই। বিভিন্ন উৎসবে নতুন মডেলের গাড়ি। তবে মধ্যবিত্তের জন্য গাড়ি বিলাসী পণ্য নয়, অনেকাংশেই অত্যাবশ্যক। আজকের বাজারদরে অবশ্য মধ্যবিত্তের বিলাসবহুল গাড়ি কেনা অনেকটা স্বপ্নের মতোই ব্যাপার। সেই স্বপ্ন পূরণ হতে পারে ‘সেকেন্ড হ্যান্ড’ গাড়ির মাধ্যমে। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান ‘স্বাধীন অটো মিউজিয়াম’। এটি মূলত সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির শোরুম; যারা স্বপ্নের রিকন্ডিশনড বা ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি কিনতে পারেন না বেশি অর্থের কারণে, তাদের জন্য প্রায় একই কন্ডিশনের ৫ বা ১০ হাজার মাইল চলা গাড়িটি তারা দিতে পারছে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা কমে।
প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী স্বাধীন সরকার বলেন, ‘আমরা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির খোঁজ পাই কিছু মানুষের মাধ্যমে। তাদের আমরা ‘মিডিয়া’ বলে ডাকি। অনেকেই আছেন যারা একটি গাড়ি কিছুদিন চালানোর পর তা বিক্রি করে দেন। হয়তো গাড়িটি ৫, ১০ বা ১৫ হাজার মাইল চলেছে। এতে গাড়ির কন্ডিশনে কোনো হেরফের ঘটে না। আর ছোটখাটো যেসব কাজ থাকে, তা করতে আমাদের দুয়েক দিন সময় লাগে। এসব কাজ আমাদের নিজস্ব গ্যারেজেই করা হয়। যেসব গাড়িতে বড় কোনো সমস্যা থাকে, তা আমরা কিনি না। অনেকে মাইলেজ লুকাতে টেম্পারিং করতে পারেন। আমাদের অভিজ্ঞ মেকানিক দল তা বুঝে নিতে সক্ষম। আবার রিকন্ডিশনড গাড়ির ক্ষেত্রেও অনলাইন থেকে ১০ ডলার খরচ করে নিলামের কাগজপত্র নামিয়ে তথ্য বুঝে নেওয়া সম্ভব। আমাদের নিজস্ব মেকানিক টিম রয়েছে, গ্যারেজ রয়েছে। আমরা আমাদের অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দিয়ে গাড়ি যাচাই-বাছাই করে ফ্রেশ কন্ডিশনের গাড়িগুলো সংগ্রহ করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগে একটি মধ্যবিত্ত পরিবার পুরোনো মডেলের কিছু সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কেনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত। আর সেকেন্ড হ্যান্ড বলতে মানুষ বুঝত রং উঠে যাওয়া, জীর্ণ একটি গাড়ি। আদতে আমরা যেসব গাড়ি বিক্রি করি, তা একদমই আলাদা। সেকেন্ড হ্যান্ড কিন্তু পুরোনো নয়। এগুলো প্রায় রিকন্ডিশনড গাড়ির মতোই।’
স্বাধীন অটো মিউজিয়ামের শুরুটাও খুব সহজ-সরল ছিল না। একসময় ফুটবল খেলতেন স্বাধীন সরকার। বয়সভিত্তিক, ক্লাব ও জাতীয় পর্যায়ে খেলেছেন। ফুটবলের সঙ্গে তাঁর আরেক শখ হলো গাড়ি। কিছুদিন পরপর একটা গাড়ি বিক্রি করে আরেকটা কিনতেন। এভাবে গাড়ির ভেতর-বাহির ছিল তাঁর নখদর্পণে। ২০১৭ সালে অনেকটা শখের বসেই পারিবারিক ফিশারিজ ব্যবসায় না গিয়ে গাড়ির শোরুম খুলে বসেন স্বাধীন সরকার। প্রথমে তিনটি গাড়ি তোলেন শোরুমে। ছয় মাসেও একটি বিক্রি করতে পারেননি। পরিবারের চাপ থাকলেও তিনি ব্যবসা বন্ধ করতে রাজি হননি। পরের বছর এক আঘাতে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়। পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। এর ফলে সেখানেই ফুটবল খেলায় ইস্তফা দিতে হয়। তিনি তখন পুরোপুরি মনোযোগ দেন গাড়ি ব্যবসায়। ২০১৯ সালের জুন থেকে সেই ব্যবসার গাড়ি ছুটতে শুরু করে। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরিচয়ের মধ্য দিয়ে তিনি ‘মিডিয়া’র দেখা পান। যাদের মাধ্যমে তিনি ওই শৌখিন গাড়ির মালিকদের খোঁজ পান। খোঁজ দেওয়ার মাধ্যমে ওই মিডিয়া একটা কমিশন নেয়। তিনি অভিজ্ঞ মেকানিকদের নিয়ে গাড়ি পরীক্ষা করে কিনে আনেন। এসব গাড়ি চার-পাঁচ বছর নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যাবে। সেই সঙ্গে বিক্রয়োত্তর সেবা দেওয়া হয় দুই বছর পর্যন্ত। এ সময় কোনো পার্টস লাগলে তা কিনে দিতে হয় কাস্টমারকে। ফ্রি সার্ভিস দেওয়া হয়।
স্বাধীন সরকার বলেন, ‘একটা গাড়ির বাজারমূল্য হয়তো ৫০ থেকে ৫২ লাখ টাকা। গাড়িটা ৫ থেকে ৭ হাজার মাইল চলার পর কেউ বিক্রি করে দিল। এত কম চলার পর দামি গাড়িগুলোয় তেমন কোনো আঁচ লাগে না। আমরা ওই গাড়িগুলো সংগ্রহ করে কাস্টমারের প্রায় ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা কমে দিতে পারি। এতে করে অনেকেই তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারছেন এবং পছন্দের গাড়ি নিতে পারছেন।’
বর্তমান সময়ে গাড়ি কোনো বিলাসিতার পণ্য নয়, এটা মানুষের প্রয়োজনীয় সামগ্রী হয়ে উঠেছে। তিক্ত জ্যামে মানুষ স্বস্তির জন্য একটা গাড়ি নিতে চান তার আজীবনের সঞ্চয় দিয়ে, একটু ভালোভাবে চলাফেরা করার জন্য। তারা সেই জমানো টাকা দিয়ে স্বপ্নের গাড়িগুলো নিতে পারছেন। এতে করে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষ উপকৃত হচ্ছে।
সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কেনার আগে যা দেখে নিতে হবে–
* গাড়ির বাইরে কোনো দাগ আছে কিনা, গাড়ির ভেতরের সিট, স্টিয়ারিং, ড্যাশবোর্ড ইত্যাদি জিনিসগুলোর জায়গা ভালো করে দেখে নিন। অর্থাৎ গাড়ির সামগ্রিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন। নিজে পরীক্ষা করতে না জানলে অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে দেখিয়ে নিন।
* বিক্রেতার কথায় সম্পূর্ণ বিশ্বাস না করে গাড়ি কেনার আগে কোনো মেকানিক ডেকে ভালোভাবে ইঞ্জিনটি পরখ করে নিন।
* কাগজপত্র দেখার সময় গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ভালোভাবে দেখে নিন।
* কোনো কোম্পানির নির্দিষ্ট মডেলের গাড়ি কম বিক্রি হলে কোম্পানি সেই গাড়ি বাজার থেকে তুলে নেয়। পরে খুব কম দামে তা বিক্রি করে। এ ধরনের গাড়িকে ‘স্ক্র্যাপ’ গাড়ি বলা হয়। সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি এমন গাড়ি কিনা দেখে নিন। এমন গাড়ি না কেনাই ভালো।
* গাড়ি কেনার আগেই একটি টেস্ট ড্রাইভ নিয়ে ভালো করে দেখে নিন। জ্যামের রাস্তা থেকে লং ড্রাইভ– সব জায়গায় চালিয়ে দেখে নিন। তাহলে কোনো সমস্যা আছে কিনা বুঝতে সুবিধা হবে।
* গাড়িটির পুরোনো রেকর্ড দেখে নিন। যেমন– গাড়িটির কোনো অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে কিনা, মাইলেজ কেমন দেয়, ইন্স্যুরেন্স আছে কিনা, ট্যাক্স কত দিনের দেওয়া আছে ইত্যাদি।