ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

মাইক্রোম্যানেজিং

কাজে কড়া নজরদারি

কাজে কড়া নজরদারি

.

নুরুল্লাহ আলম নুর

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:১৩

যে কোনো কর্মস্থলে সাফল্যের জন্য একটি সুস্থ ও ইতিবাচক পরিবেশ অপরিহার্য।  প্রতিষ্ঠানের সফলতা নির্ভর করে কতটা কার্যকরভাবে তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হচ্ছে এবং কর্মীরা কেমনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে তার ওপর। তবে কখনও কখনও কর্মীদের কাজের স্বাধীনতা ও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়, যা মূলত মাইক্রোম্যানেজিংয়ের মাধ্যমে ঘটে থাকে। এই মাইক্রোম্যানেজিং কর্মক্ষেত্রে বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা প্রতিষ্ঠান ও কর্মী উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।
মাইক্রোম্যানেজিং মূলত কী? 
মাইক্রোম্যানেজিং হলো এমন একটি ব্যবস্থাপনা কৌশল, যেখানে ব্যবস্থাপক বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের অধীন কর্মীদের প্রতিটি কাজের ক্ষুদ্রতম বিবরণে নজর রাখেন এবং সবকিছুতে অত্যধিক হস্তক্ষেপ করেন। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কর্মীদের কাজে স্বাধীনতার পরিসর একেবারেই কমিয়ে দেওয়া হয় এবং প্রতিটি ছোটখাটো বিষয়ও ব্যবস্থাপক নিজেই নিয়ন্ত্রণ করেন। এই প্রক্রিয়ায় কর্মীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ সীমিত থাকে এবং প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতনের অনুমতি নিতে হয়। ব্যবস্থাপকরা মনে করেন, মাইক্রোম্যানেজিংয়ের মাধ্যমে তারা কর্মীদের ভুল কমাতে এবং কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করতে পারবেন। 
মাইক্রোম্যানেজিংয়ের কারণ ও এর উৎস
মাইক্রোম্যানেজিংয়ের মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আত্মবিশ্বাসের অভাব। অনেক ব্যবস্থাপকই তাদের অধীনদের কাজের দক্ষতা বা স্বতন্ত্রভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান থাকেন। এ ছাড়া কিছু ব্যবস্থাপক তাদের প্রতিষ্ঠানের কাজের মান নিয়ে অতিরিক্ত সতর্ক থাকেন এবং মনে করেন, তাদের কঠোর নিয়ন্ত্রণই সেরা ফলাফল বয়ে আনবে। আবার কিছু ব্যবস্থাপক তাদের ক্ষমতার প্রদর্শন করার জন্য কর্মীদের ওপর অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে কর্তৃত্ব ফলান। মাইক্রোম্যানেজিংয়ের পেছনে এই ধরনের ব্যক্তিগত ও মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলো ক্রমেই দৃঢ় হয়ে ওঠে।
মাইক্রোম্যানেজিংয়ের নেতিবাচক প্রভাব
মাইক্রোম্যানেজিং কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের মনোবল ও দক্ষতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। প্রথমত, এটি কর্মীদের স্বনির্ভরতা ও আত্মবিশ্বাসে চির ধরিয়ে দেয়। প্রতিটি ছোট্ট কাজের জন্য যদি কর্মীদের তাদের ঊর্ধ্বতনের অনুমতি নিতে হয়, তবে তারা নিজেদের সৃজনশীলভাবে কাজ করতে বাধাগ্রস্ত হয় এবং ধীরে ধীরে কাজের প্রতি তাদের আগ্রহ কমে যায়। এ ছাড়া মাইক্রোম্যানেজিংয়ের ফলে কর্মীরা নতুন ধারণা ও উদ্ভাবনের পথে হাঁটতে ভয় পান। কারণ তারা ভাবতে থাকেন, তাদের সব কাজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যালোচিত হবে এবং তারা নিজেরাও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
দ্বিতীয়ত, মাইক্রোম্যানেজিংয়ের ফলে কর্মক্ষেত্রের সৃজনশীলতা কমে যায়। একটি সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন বা ভিন্ন কোনো পদ্ধতির প্রয়োগের ক্ষেত্রে কর্মীরা নিজেদের অবহেলিত মনে করেন। তারা নির্দিষ্ট কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে চিন্তাধারার প্রসারণ করতে পারে না, যার ফলে প্রতিষ্ঠান নতুন ধারণা ও সমাধানের সুযোগ হারায়।
তৃতীয়ত, মাইক্রোম্যানেজিংয়ের ফলে কর্মদক্ষতা ও কাজের গতি কমে যায়। যখন কর্মীরা মনে করেন, তাদের কাজের প্রতিটি ক্ষুদ্রাংশ নিয়েই প্রশ্ন তোলা হবে, তখন তাদের মনোযোগ ও উৎসাহে ভাটা পড়ে যায়। এটি তাদের দৈনন্দিন কাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং উৎপাদনশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
মাইক্রোম্যানেজিংয়ের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় প্রথমত কর্মীদের প্রতি আস্থা রাখা খুবই জরুরি। যখন ব্যবস্থাপকরা কর্মীদের ওপর ভরসা রাখেন এবং তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেন, তখন কর্মীরা নিজেদের কাজের প্রতি আরও দায়িত্বশীল হয়ে ওঠেন। এর ফলে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। ব্যবস্থাপকরা যদি কর্মীদের দিকনির্দেশনা দিয়ে তাদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেন, তবে কর্মীরা নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দেখাতে সক্ষম হন।
দ্বিতীয়ত, কর্মীদের সঙ্গে সুস্পষ্ট ও খোলামেলা যোগাযোগ বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কর্মক্ষেত্রে সুস্থ যোগাযোগ নিশ্চিত হলে কর্মীরা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত থাকেন এবং কাজের প্রতি উৎসাহিত হন। এ ছাড়া যদি তাদের কাজে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা থাকে, তবে ব্যবস্থাপকরা সহায়কের ভূমিকা পালন করতে পারেন, যা কর্মীদের তাদের কাজে মনোযোগ বাড়ায়।
তৃতীয়ত, প্রশিক্ষণ ও ব্যক্তিগত দক্ষতার উন্নয়নকে উৎসাহিত করা মাইক্রোম্যানেজিং প্রতিরোধে সহায়ক। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীরা নতুন দক্ষতা অর্জন করতে পারেন এবং নিজের কাজে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। প্রশিক্ষণ কর্মীদের মাইক্রোম্যানেজমেন্টের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে শেখায়। এ ছাড়া কর্মীদের মধ্যে নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করে দক্ষতা বাড়ানো গেলে ব্যবস্থাপকরা তদারকি করতে হবে না, যা কর্মীদের ওপর চাপ কমায়। 

আরও পড়ুন

×