হালকা শীতের পোশাক

ফাইল ছবি
রিক্তা রিচি
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:৩৭
হালকা শীতে ওড়নার চেয়ে ভারী শাল, কটি, শ্রাগ, ডেনিমের টপস, ফুলহাতা জামা, টেনসিল কুর্তি, টেনসিল টপস, ক্রপ জ্যাকেট, ফরমাল ও ক্যাজুয়াল ব্লেজার ইত্যাদি বেছে নিতে পারেন। পুরুষেরা ফ্লানেল, টুইল, সুইচ, ডেনিমের শার্ট, স্যুট সেট, প্যাডেড ও নন প্যাডেড ভেস্ট ইত্যাদি পরতে পারেন। এবারের শীতের পোশাকে মূলত ডিজাইনাররা দেশীয় পোশাকে বিদেশি নকশা, কাট, প্যাটার্নের সমন্বয় ঘটিয়েছেন। পোশাকে বিভিন্ন শেডের ব্লু, ব্ল্যাক, ধূসর, সাদা ইত্যাদি রংগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে। লিখেছেন রিক্তা রিচি
বাতাসে শুষ্কতা শীতের আগমনীর জানান দিচ্ছে। ঢাকার ভেতরে খুব একটা ঠান্ডা হাওয়ার পরশ না মিললেও, ঢাকার আশপাশ এবং ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয় ঠান্ডা হাওয়া অনুভূত হচ্ছে। উত্তরের দিকে রাত-ভোরে শিশির ঝরে বলেও জানা গেছে। শীতের আগের সময়টায় পোশাক-আশাকের ব্যাপারে একটু যত্নশীল থাকতে হয়। পোশাক নির্বাচনেও কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়। গরমে যেমন খুব পাতলা পোশাক পরে আরাম পাওয়া যায়, এ সময়টায় একই রকম পোশাকে আরাম মেলে না। আবার গাঢ় শীতের ভারী পোশাকও পরা যায় না। এ সময় পরতে হয় মাঝামাঝি ধরনের পোশাক। বিশেষ করে পলিয়েস্টার, ডেনিমের হালকা পোশাক এ সময়ের জন্য মানানসই। আবার সুতি, ভিসকস, লিনেনের ফুল হাতা পোশাকও এ সময় বেশ চলে।
হরীতকীর কো-ফাউন্ডার অনিক কুণ্ডু জানান, হালকা শীতে সর্বদাই এমন পোশাকের চাহিদা থাকে, যেগুলো উষ্ণতাও দেবে, আবার যদি গরম লাগে তাহলে পোর্টেবলও হবে। এ ক্ষেত্রে সবার আগে এগিয়ে থাকে ওড়নার চেয়ে ভারী শাল ও কটি। এ সময় থ্রি কোয়ার্টার বা হাফহাতার বদলে ফুল স্লিভের জামা পরা শুরু হয়ে যায়।
তিনি জানান, কটি বা শ্রাগ বর্তমানে খুব চাহিদাসম্পন্ন পোশাক। বোথ সাইড কটির ডিমান্ড এখন অনেক। এক পোশাকে দুই ফ্যাশন অনেকেরই চাহিদা।
হালকা শীতে ধীরে ধীরে সবাই সুতি থেকে উল বা পলিয়েস্টারের পোশাকের দিকে ঝুঁকে। শুরু হয় জিন্স ও গ্যাবার্ডিনের চাহিদা। অনেকেই শীতবস্ত্রের কেনাকাটাও শুরু করে। রঙের ক্ষেত্রে একটু উজ্জ্বল রং ব্যবহার বেশি হয় বলেও জানান অনিক কুণ্ডু।
উজ্জ্বল রং, পোশাকের আরাম ও বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো নিয়ে এসেছে মানানসই পোশাক। সারা লাইফস্টাইলের হেড অব ডিজাইনার শামীম রহমান জানান, হালকা শীতের পোশাক হিসেবে আমাদের এখানে আছে ছেলেদের টেনসিল শার্ট, লাইট ওয়েট ডেনিম শার্ট, ডেনিম জ্যাকেট, স্যুট সেট, কটি, ইউনিসেক্স শাল, প্যাডেড ও নন প্যাডেড ভেস্ট ইত্যাদি। মেয়েদের জন্য রয়েছে টেনসিল কুর্তি, টেনসিল টপস, ডেনিম জ্যাকেট, ডেনিম কুর্তি, ক্রপ জ্যাকেট, ফরমাল ও ক্যাজুয়াল ব্লেজার।
ওয়াশের বিভিন্ন কৌশল মেনে ডেনিমের মধ্যে ডিজাইন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বলে জানান তিনি। মেয়েদের পোশাকে বিভিন্ন ধরনের প্রিন্ট ও এমব্রয়ডারি প্রাধান্য পেয়েছে। পোশাকে বিভিন্ন শেডের ব্লু, ব্ল্যাক, ধূসর, সাদা ইত্যাদি রংগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে।
হালকা শীতের জন্য ঢিলেঢালা প্যাটার্ন, ওভারসাইজড ও বক্সি প্যাটার্নের পোশাক বেছে নেওয়া হয়েছে। এগুলোই খুব চলে। মেয়েরা ক্রপ প্যাটার্নের পোশাক পছন্দ করে। আর ইউনিসেক্স কালেকশনগুলো
সবসময় ট্রেন্ডি।
আর্ট লাইফস্টাইলের ডিজাইনার হোসাইন ইমন জানান, হালকা শীতে মোটা শার্ট যেমন ফ্লানেল, টুইল, সুইচ ও ডেনিমের শার্ট আরামদায়ক। এ কাপড়গুলো ২৬০-২৮০ জিএইচএমের হয়। এখন নতুন ট্রেন্ড শোল্ডার ড্রপের। এ ধরনের পোশাকের হাতা বড় হয়, কাঁধের দিকটা ঢোলা থাকে। কাপড় মোটা থাকে বলে সকালের দিকে এ পোশাক পরে আরাম পাওয়া যায়। রাতে ঠান্ডা বাড়তে থাকলে বিভিন্ন ধরনের জ্যাকেট বেছে নেওয়া ভালো। শুষ্ক ও ধুলাবালি বেশি থাকে বলে এ সময় স্যান্ডেলের পরিবর্তে শু, কনভার্স বেছে নেওয়া ভালো।
নকশা ও প্যাটার্ন
শীতের পোশাক বেশ স্টাইলিশ হয়। পুরুষের শীতের পোশাকে স্টিকার, প্রিন্ট ইত্যাদি থাকে। লেদারের সিম্পল পোশাকেও আভিজাত্যের ছোঁয়া থাকে। তাই শীত ও ঠান্ডা আবহাওয়া ফ্যাশনসচেতন মানুষের প্রিয় ঋতু। হোসাইন ইমন জানান, প্যাটার্ন এখন ব্যক্তির পছন্দকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। অনেকে ঢিলেঢালা পোশাক বেছে নিচ্ছেন। ঢোলা প্যান্ট, শার্ট, কামিজ, টপস এসব ট্রেন্ডেও আছে। আবার অনেকে ফিটিং পোশাকও বেছে নিচ্ছে। বয়স ও রুচিভেদে মানুষ একেকটা জিনিস গ্রহণ করছে।
ফিউশন
শীতের ফ্যাশনে ছেলেমেয়েরা পোশাকে ফিউশনই বেশি পছন্দ করে বলে মনে করেন ডিজাইনাররা। এ জন্য শীতের পোশাকের সব প্যাটার্ন, কাটিং ইত্যাদি আন্তর্জাতিক বাজারকে কেন্দ্র করেই করা হয়। কেননা, অনেক দেশে সারাবছরই শীত থাকে। সে ক্ষেত্রে তারা শীতের জামা-কাপড়ের ফ্যাশন নিয়ে সবসময় সচেতন। বেশ ট্রেন্ডি ডিজাইনও তাদের নখদর্পণে থাকে। মূলত ডিজাইনাররা দেশীয় পোশাকে বিদেশি নকশা, কাট, প্যাটার্নের সমন্বয় ঘটিয়ে থাকেন। এখন শীত পোশাকের সঙ্গে বিভিন্ন অ্যাক্সেসরিজ ব্যবহার করে অনেকে নিজেকে ফ্যাশনেবল ও স্টাইলিশভাবে উপস্থাপন করেন। ডিজাইনার ইমন জানান, শীতে প্যান্টের ক্ষেত্রে খুব বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। শীতে ছেলেদের জগারস, মোবাইল প্যান্ট, পকেট প্যান্ট ভালো চলে। প্যাঁচওয়ার্কের ব্লেজার, প্যান্ট, শাল ইত্যাদি যেমন চলে আবার রিকশাচিত্রের পোশাকও মানিয়ে যায়।
কাস্টমাইজ নকশার আধিপত্য
ফ্যাশনসচেতন নারী-পুরুষ এখন কাস্টমাইজ নকশার পোশাক পছন্দ করেন। কোনো ব্র্যান্ডের শাড়ির ডিজাইন পছন্দ হলে তা শাল কিংবা অন্য পোশাকেও কাস্টমাইজ করে বানিয়ে দিতে বলেন। ফুল, লতা-পাতা, প্রজাপতি, গিটার, কিশোরী, জ্যামিতিক প্যাটার্ন ইত্যাদি স্থান পাচ্ছে শালে। মোগল চিত্রকলা, প্রাচীন গ্রামবাংলার দৃশ্য, আদিবাসীদের নাচ, হাতি ও পেঁচা, পুতুল, নকশিকাঁথার ফর্ম ইত্যাদি ব্র্যান্ডের হালকা শীতের পোশাকে জায়গা করে নিচ্ছে। এখনকার শালে প্রিয় লেখক ও কবির লেখা কিংবা কবিতার চরণও স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তোলা হয়। মনীষীদের ছবি, উক্তি, গানের লাইন কোনো কিছুই বাদ পড়ে না।
কটি-শ্রাগ-পঞ্চে আগ্রহ
হাফহাতা কিংবা স্লিভলেস কামিজের সঙ্গে ফুল হাতার কটি বা শ্রাগ বেশ মানিয়ে যায়। হালকা শীতে এ ধরনের পোশাক বেশ আরামদায়ক। জিন্সের সঙ্গে ফিটেট টপস বা ক্রপটপ পরে তার সঙ্গে লং কটি গলিয়ে নিলেও স্টাইলিশ লাগে। সুতি, লিনেন, খাদি, জর্জেটসহ বিভিন্ন ফেব্রিকের কটি ও শ্রাগ বিভিন্ন ব্র্যান্ডে পাওয়া যায়। সুতি কামিজ, ক্রপটপ, টি-শার্ট কিংবা টপসের সঙ্গে নয়, শাড়ির সঙ্গেও কটি জড়িয়ে নেওয়া যায়। এতে বেশ ফ্যাশনেবল লাগে। একটা সময় কেবল শীতে পঞ্চের ব্যবহার বেশি ছিল। কেননা তখন উল দিয়ে পঞ্চ তৈরি করা হতো। এখন শীত ছাড়াও অন্যান্য সময় পঞ্চের ব্যবহার চলে। কেননা
উল ছাড়াও সুতি, খাদি ও জর্জেট কাপড় দিয়ে পঞ্চ তৈরি করছে অনেক ব্র্যান্ড। হালকা শীতে অনায়াসে সুতি, খাদি, মিক্সড কটন-পলিয়েস্টারের পঞ্চ বেছে নিতে পারেন।
উজ্জ্বল রঙে
হেমন্ত ও শীত ঋতুতে উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরার বিকল্প নেই। কেননা গরমে হালকা রঙের পোশাক আরাম দিলেও, শীতে উজ্জ্বল রংগুলো বেশ ভালো মানায়। গাঢ় গোলাপি, কমলা, বেগুনি, লাল, খয়েরি, মেরুন, চকলেট, গাঢ় সবুজ, লেমন, কালো ইত্যাদি নজরকাড়া রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নিতে পারেন। উজ্জ্বল ও গাঢ় রঙের পোশাক শীতের রিক্ততাকে ঢেকে দেবে।
কোথায় পাবেন
আড়ং, কে ক্র্যাফট, অঞ্জন্স, ইয়েলো, রঙ বাংলাদেশ, সারা লাইফস্টাইল, টুয়েলভ ক্লদিং, আর্ট লাইফস্টাইল, হরীতকীসহ বিভিন্ন অফলাইন ও অনলাইন ব্র্যান্ড থেকে হালকা শীতের পোশাক কেনা যাবে। নন ব্র্যান্ডের পোশাক কিনতে ঢুঁ মারতে হবে নিউমার্কেট, গাউছিয়া, মৌচাক মার্কেটসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের মার্কেটে।
দরদাম
ব্র্যান্ডভেদে পোশাকের দামের পার্থক্য দেখা যায়। যে কোনো ব্র্যান্ড থেকে হালকা শীতের পোশাক কিনতে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হবে। সারা লাইফস্টাইল থেকে হালকা শীতের পোশাক কেনা যাবে ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। হরীতকী থেকে শাল-কটি ও অন্যান্য পোশাক কেনা যাবে ১ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। আর্ট লাইফস্টাইল থেকে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে শীত পোশাক কেনা যাবে। আরও কমে কিনতে হলে বিভিন্ন মার্কেটে ঢুঁ মারতে পারেন।
পোশাক কেনার আগে
যেকোনো পোশাক কেনার আগে এর ফেব্রিক, মান, অন্যান্য ব্র্যান্ডের সঙ্গে আপনার পছন্দের ব্র্যান্ডের পোশাকের দামের পার্থক্য ইত্যাদি জেনে নিন। হালকা শীতের পোশাক কেনার সময় সুতি, ডেনিম, ফ্লানেলের পোশাকই কিনুন। বেশি শীতের জন্য মোটা ও ভারী কাপড়ের পোশাক কিনুন। এ ধরনের পোশাক বারবার কেনা হয় না। দেখা যায় একটি পোশাক পরবর্তী দুই-তিন বছরও পরা হয়। তাই মান দেখে পোশাক কিনুন। নাম না জানা ব্র্যান্ডের পোশাক কম দামে কেনার চেয়ে ভালো ব্র্যান্ডের পোশাক একটু বেশি দামে কিনুন। নয়তো পোশাকের কাপড়ের মান ভালো হবে না। শীতের পোশাক কেনার সময় অবশ্যই সাইজ মেপে কিনবেন। এ ধরনের পোশাকে ব্যবহৃত উল, সুতা, পশম এমনকি কাপড়গুলোও সংকুচিত বা প্রসারিত হয়ে যেতে পারে। কেনার আগে এ বিষয়টি মাথায় রাখুন। এখন বিভিন্ন অনলাইন পেজে বাহারি ধরনের প্যান্ট, কটি, সোয়েটার, কার্ডিগান, ডেনিমের পোশাক পাওয়া যায়। কোনো অনলাইন পেজ থেকে পোশাক কেনার আগে সে পেজ সম্পর্কে ভালো করে রিসার্চ করে নিন। পেজে কাস্টমারের রিভিউ দেখে নিন। পণ্যের স্টাইল, ফেব্রিক ও দাম আগেই জেনে নিন। পণ্য হাতে না পেয়ে বিকাশের মাধ্যমে আগেই পেমেন্ট করবেন না। অনেক ব্র্যান্ডের অনলাইন ও অফলাইন, বিভিন্ন পেজে বছর শেষের ছাড়, শীতকালীন ছাড় ও অন্যান্য অফার থাকে। সেসব অফার গ্রহণ করুন। কোনো কোনো পেজ ও ওয়েবসাইট থেকে দুটি পণ্য কিনলে ডেলিভারি ফ্রির অফার থাকে। সেগুলো লুফে নিতে পারেন।
মডেল: ইপশিতা শবনম; মেকওভার: রেড বিউটি স্যালুন
পোশাক: সারা লাইফস্টাইল; ছবি: ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য
- বিষয় :
- শীতের পোশাক