ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বল প্রয়োগে বিতর্ক বছর শেষে নাজুক আইনশৃঙ্খলা

আস্থা হারানোর পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীর মনোবলে গভীর চিড়

বল প্রয়োগে বিতর্ক বছর শেষে নাজুক আইনশৃঙ্খলা

কোলাজ

 সাহাদাত হোসেন পরশ 

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:২১

ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে বিদায় নিচ্ছে আরেকটি বছর। ২০২৪ সালের শুরু, মাঝামাঝি ও শেষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বাস্তবতায় দেখা গেছে তিনটি পৃথক দৃশ্যপট। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচার অস্ত্র ব্যবহার করে গুলি, প্রাণহানির ঘটনায় ফের নতুনভাবে সমালোচনার খাতা খোলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মানুষের আস্থা হারানোর পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীর মনোবলে ধরে গভীর চিড়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। নাজুক পরিস্থিতিতে বছরের একের পর এক খুনাখুনি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই ঘটতে থাকে। ঘটে ‘মব জাস্টিসে’র নামে মানুষ পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও। ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ঘটনায় প্রাণ গেছে দু’জনের। জুলাই-আগস্টে হতাহতের ঘটনা কেন্দ্র করে পুরোনো ধাঁচেই নামে-বেনামে ‘গায়েবি মামলার’ হিড়িক পড়তে থাকে। তবে বছরের শুরুতে তৎকালীন সরকারের ছকমতো নির্বাচনে মাঠে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জনদ্রোহ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেচ্ছ অস্ত্র ব্যবহার করেছে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থানা-পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ, হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। লুট হয় অস্ত্রাগার। সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবির সহযোগিতায় থানার কার্যক্রম শুরু হয় ধীরে ধীরে। কারাগার থেকে বেরিয়ে যায় শত শত আসামি। একসময়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ছাড়া পেতে থাকে। অনেক থানা থেকে পালিয়ে যায় পুলিশ। দেশব্যাপী ভেঙে পড়ে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা। অন্তর্বর্তী সরকার এসে পুলিশকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়। পুলিশ সংস্কারে গঠন করা হয় কমিটি। এরই মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে একগুচ্ছ প্রস্তাবনা এসেছে। ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। হাজার হাজার সদস্যকে রদবদল করা হয়েছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায় এখনও জনমনে শঙ্কা কাজ করছে।

বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড 
২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ব্যস্ত এলাকা বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ যায় ৪৬ জনের। গ্রিন কোজি ভবনে ওই আগুনের ঘটনা রাজধানীর বহুতল ভবন নিয়ে নানা অব্যবস্থাপনার বিষয়টি সামনে আসে। সাপ্তাহিক ছুটির আগের রাতে ভিড় বেশিই ছিল বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে। কাচ্চি ভাইসহ অন্য দোকানগুলো ছিল জমজমাট। কিন্তু ভয়াবহ এক আগুনে ভবনটি রূপ নেয় মৃত্যুপুরীতে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এভাবে বারবার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হয় সাধারণ মানুষকে।

বাংলাদেশের এমপি কলকাতায় খুন 
১২ মে ভারতের কলকাতায় গিয়ে পরদিন সেখানকার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। এ ঘটনা বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশে চাঞ্চল্য তৈরি করে। এমপি আজীমকে শুধু খুনই করা হয়নি; লাশ টুকরো টুকরো করে গুম করেছে দুর্বৃত্তরা। তবে সেই টুকরো লাশের খোঁজ পরে মিলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, এমপি আজীম হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী তাঁরই বাল্যবন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার আখতারুজ্জামান শাহীন। হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে শাহীনের নিখুঁত ছকে। ৫ কোটি টাকার চুক্তিতে হত্যা মিশনে অংশ নেয় ভাড়াটে কিলাররা।

চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা
২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে বাধা দেন তার অনুসারীরা। প্রিজন ভ্যান আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। পরে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা করে ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে চিন্ময়ের অনুসারীদের সংঘাত চলাকালে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। 

জাহাজে সাত খুন 
চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীতে ২৩ ডিসেম্বর এমভি আল-বাখেরা জাহাজে সাতজনকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ওই জাহাজেরই কর্মী আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান। তাকে বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর এই তথ্য বেরিয়ে আসে। দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়া ও দুর্ব্যবহারের কারণে ক্ষুব্ধ ছিল ইরফান। সেই ক্ষোভ থেকেই জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়াসহ সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কুপিয়ে হত্যা করে সে। 

 

আরও পড়ুন

×