ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

শহীদের তালিকা অসম্পূর্ণ, অনিশ্চিত জীবনে আহতরা

শহীদের তালিকা অসম্পূর্ণ, অনিশ্চিত জীবনে আহতরা

.

 তবিবুর রহমান

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০১:৪৩ | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২:৪০

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রায় পাঁচ মাস হতে চলল। এখনও সরকার শহীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দিতে পারেনি। দাফন করা বেওয়ারিশ ৮১ জনের পরিচয় শনাক্তেও নেই উদ্যোগ। বিভিন্ন হাসপাতালে তিন শতাধিক আন্দোলনকারী চিকিৎসাধীন। তারা চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।

সরকারের ভাষ্য, আন্তরিকতা সত্ত্বেও নানা জটিলতার কারণে তারা গণঅভ্যুত্থানের শহীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা, আহতের চিকিৎসা ও সঠিক পুনর্বাসন কার্যক্রম চালাতে পারছে না। দেশে আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিছু পরিবারকে পুনর্বাসনে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের বিষয়ে সঠিক তালিকা চূড়ান্ত করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদের চূড়ান্ত তালিকা করতে গত নভেম্বর মাসে সরকার ‘গণঅভ্যুত্থান-সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ করে। ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে আন্দোলনে নিহত বা নিখোঁজ, বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু কিংবা আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে কোনোভাবে মারা গেছেন– এমন বাদ পড়াদের নাম তালিকাভুক্ত করার কথা ছিল বিশেষ সেলের। গত ২১ ডিসেম্বর এ সেল ৮৬২ শহীদ ও ১১ হাজার ৫৫১ আহতের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শহীদদের মধ্যে শিক্ষার্থী ১৯৯ জন। তবে ১৩৪ জনের কোনো পেশা উল্লেখ নেই।
বিশেষ সেলের উপসচিব নওশীন শিকদার সমকালকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা খসড়া তালিকা করেছি। কাজ চলছে। চূড়ান্ত তালিকার বিষয়ে এখনই দিন তারিখ দেওয়া সম্ভব নয়। বেওয়ারিশ লাশের পরিচয় শনাক্তে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানিয়েছে, তাদের ফরেনসিক  ল্যাবরেটরিতে গণঅভ্যুত্থানে নিহত ছয়জনের ডিএনএ প্রোফাইল করার আবেদন জমা পড়েছে। দু’জন শনাক্ত হয়েছেন; বাকিদের দাবিদার পাওয়া যায়নি।

সহায়তা পেতে ভোগান্তি
আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে সহায়তা, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে গত ১০ সেপ্টেম্বর সরকার সাত সদস্যের ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করে। এখন পর্যন্ত শহীদ ও আহত ২ হাজার ৫০ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে তারা। 
সরেজমিন রাজধানীর শাহবাগ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল সংলগ্ন ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে ভিড় দেখা যায়। প্রকাশিত তালিকায় নাম না পেয়ে স্বজন ও আহতরা কার্যালয়ে এসেছেন। কাগজপত্রে ত্রুটির কারণে অনেকে একাধিকবার এসেছেন বলে জানান। এখনও গড়ে দিনে ১৫০ জন কাগজপত্র জমা দিচ্ছেন। অনেকের কাগজপত্র ভুয়া বলে জানিয়েছেন ফাউন্ডেশনের তথ্য যাচাই-বাছাই ইউনিটের প্রধান সাফায়েত ইসলাম সাগর। তিনি বলেন, আর্থিক সহায়তা দ্রুত দিতে ফাউন্ডেশন অ্যাপস করেছে। এর মাধ্যমে স্বল্প সময়ে তথ্য যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হবে। তবে জনবল সংকটসহ নানা জটিলতায় সহায়তা দিতে দেরি হচ্ছে জানিয়ে সাফায়েত বলেন, আড়াই হাজার আবেদন জমা রয়েছে। তাদের কাগজপত্রে নানা ত্রুটি রয়েছে। ভুয়া অন্তত ১৫০ ব্যক্তি আর্থিক সুবিধা পেতে আবেদন করেন। আগেও জালিয়াতি করে টাকা তুলেছে। পরে যাচাই-বাছাই করে টাকা ফেরত আনা হয়েছে। আবার কিছু আবেদন পেয়েছি, যারা অন্য দুর্ঘটনায় আহত হলেও টাকার জন্য আবেদন করেছেন।

অনিশ্চয়তায় কাটে দিন
খসড়া তালিকায় আহত ১১ হাজার ৫৫১ জন। তাদের মধ্যে দৃষ্টিজনিত সমস্যা রয়েছে ১ হাজার ৩৪ জনের। চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন ২১ জন। তালিকার বাইরেও অনেকে আহত। তাদের মধ্যে তিন শতাধিক ব্যক্তি রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহতদের মধ্যে একাংশের বিদেশে চিকিৎসা জরুরি। আহতদের মধ্যে অনেকে একমাত্র উপার্জনক্ষম হওয়ায় অনটনে পড়েছে পরিবার।
রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে আহতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তারা। সুস্থ না হলে ভবিষ্যতে কী করবেন, সংসারের বোঝা হয়ে পড়বেন কিনা, তা-ই বেশি ভাবাচ্ছে।
স্বাস্থ্য সচিব সাইদুর রহমান বলেন, ‘গুরুতর আহত অন্তত ১০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের মানসম্মত খাবার দিতে বলা হয়েছে। চিকিৎসার যাবতীয় খরচ সরকার নিশ্চিত করছে।’

 

আরও পড়ুন

×