সরকারের সহায়ক নীতি চান উদ্যোক্তারা

ফাইল ছবি
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫ | ০০:১৪
সরকারের নীতি-সহায়তা ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টায় এক সম্ভাবনাময় খাত হয়ে উঠছে হোম অ্যাপ্লায়েন্স শিল্প। গত কয়েক বছরে এ খাতে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এতে অন্তত এক লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। শতভাগ আমদানি-নির্ভরতা কাটিয়ে এখন রপ্তানি বাজারেও প্রসার ঘটছে। ফলে এক যুগের ব্যবধানে পাল্টে গেছে এ খাতের পুরো চিত্র।
এ খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১০ সালে বাংলাদেশের হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যবাজারের ৮০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার ছিল বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর দখলে। স্থানীয় উৎপাদনকারীদের প্রচেষ্টায় ২০২৩ সালে এসে এ চিত্র পুরোপুরি উল্টো। এখন মাত্র ২০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর দখলে। বাকি ৮০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার স্থানীয় দেশি ব্র্যান্ডগুলোর। ক্রেতার নাগালে দাম, গুণগত মান বজায় রাখা, কিস্তিতে কেনার সুযোগসহ নানা সুবিধার কারণে এর বাজার বড় হচ্ছে। এতে শহরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিন দিন মফস্বলেও এসব পণ্যের শোরুমের সংখ্যা বাড়ছে।
সরকার বিভিন্ন সময়ে দেশি উৎপাদন বাড়াতে শুল্ককর অব্যাহতি দিয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও লেনদেনে ভারসাম্য আনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়, রপ্তানি বাজার সৃষ্টি, দেশজ পণ্য ব্যবহারে দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ ও বিদেশে দেশকে ব্র্যান্ডিং করাসহ অনেক উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর ধারাবাহিকতায় রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার, কম্পিউটার, মোটরসাইকেল, গাড়ি, মোবাইল ফোন ইত্যাদি খাত বিকশিত করে আত্মনির্ভরশীল ও রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার এসব খাতের কাঁচামাল আমদানি ও স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে বছর বা মেয়াদভিত্তিক বিশেষ শুল্ক ও কর রেয়াত সুবিধা দিয়ে আসছে। সরকারের নীতি-সহায়তায় উৎসাহিত হয়ে স্থানীয় উদ্যোক্তারা আমদানি করে বেচাকেনা থেকে উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা স্থাপনে মনোযোগী হয়েছেন। সরকার এসব নীতি-সহায়তা দেওয়ায় কয়েক বছরে এসব খাতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ হয়েছে। পাশাপাশি দেশে এসেছে নানা ধরনের উন্নত প্রযুক্তি। শিল্পের প্রসার বাড়ার কারণে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক মানুষের।
অর্থনৈতিক উন্নতি ও চাহিদা পরিবর্তনের
পরিপ্রেক্ষিতে বৈদ্যুতিক এসব গৃহস্থালি পণ্য এখন সবার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে জায়গা
করে নিয়েছে। তা ছাড়া দেশব্যাপী বিদ্যুতায়ন এবং মানুষের জীবনযাপনে পরিবর্তনের ফলেও কদর বেড়েছে প্রযুক্তিপণ্যের। এতে গত এক দশকে ইলেকট্রনিকস হোম অ্যাপ্লায়েন্স শিল্প খাতে বড় ধরনের অগ্রগতি দেখা গেছে।
এলডিসি-পরবর্তী প্রতিযোগিতা মোকাবিলায় অনেক খাতে ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে হবে। বিশ্ব রপ্তানি বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা বাতিল হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্থানীয় শিল্পকে আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের দেওয়া নীতি-সহায়তা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ এখন রেফ্রিজারেটর উৎপাদন শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশ্বের সর্বাধুনিক রেফ্রিজারেটর এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী পণ্য এখন দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রেফ্রিজারেটর রপ্তানি হচ্ছে অনেক দেশে। ফলে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে রেফ্রিজারেটর আমদানির তেমন প্রয়োজন হচ্ছে না। রেফ্রিজারেটর খাতে রপ্তানির সুফল পেতে দীর্ঘ সময়ের জন্য নীতি-সহায়তা প্রয়োজন।
ইলেক্ট্রো মার্টের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) নুরুল আফসার জানান, বর্তমানে সরকারের নীতি ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট অনুকূল। তবে এ শিল্পের জন্য সরকারের নীতির ধারাবাহিকতা ও দীর্ঘস্থায়িত্ব থাকা দরকার। সে জন্য কর ও অন্যান্য সুবিধা ১০ বছর পর্যন্ত রাখা দরকার। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন। স্থানীয় শিল্পও টেকসই হবে।
তারা আরও বলেন, চীন একসময় অনেক বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছিল। বিভিন্ন কারণে বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা চীন থেকে সরে আসছেন। এখন বাংলাদেশের ব্যাপারে তারা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। যথাযথ নীতি ধারাবাহিকতা থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসবেন। কারণ, শ্রমিক সংকটের কারণে চীনসহ ইউরোপের দেশগুলো এসব শিল্পে সুবিধা করতে পারছে না। ফলে এ সুবিধা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের সামনে।
হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যের বাজার নিয়ে তেমন গবেষণা দেখা যায় না। বেসরকারিভাবে পরিচালিত বিভিন্ন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে টেলিভিশন, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিনসহ বিভিন্ন হোম অ্যাপ্লায়েন্সের বাজার এক লাখ কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে।
- বিষয় :
- ফ্রিজ