অভিমত: আনোয়ার ফারুক তালুকদার
এসএমই খাতের বিকাশই অর্থনীতির বিকাশ

আনোয়ার ফারুক তালুকদার , অর্থনীতি বিশ্লেষক
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫ | ০০:৫০ | আপডেট: ২৭ জুন ২০২৫ | ১৬:৪২
সেই দেশ তত দ্রুত উন্নতির দিকে ধাবিত হয়েছে, যে দেশ এই খাতকে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে। আজকের ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পেরই অবদান। আজ যে উদ্যোগ ক্ষুদ্র হিসেবে বিবেচ্য তাই আগামীর বৃহৎ শিল্প
কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প (সিএমএসএমই) যে কোনো দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য কমানো এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই দেশ তত দ্রুত উন্নতির দিকে ধাবিত হয়েছে, যে দেশ এই খাতকে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে। আজকের ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পেরই অবদান। আজ যে উদ্যোগটি ক্ষুদ্র হিসেবে বিবেচ্য তাই আগামীর বৃহৎ শিল্প।
তাই ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্পের প্রতি আমাদের দেশও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে এসএমইএসপিডি নামে আলাদা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় প্রতিটি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান এসএমই নামে আলাদা বিভাগ খুলে এসএমই উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন এসএমই ফাউন্ডেশন নামে আলাদা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে।
এ খাতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব তুলে ধরতে প্রতি বছর ২৭ জুন বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয় আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প দিবস। জাতিসংঘ ২০১৭ সালে দিবসটি ঘোষণা করে। বাংলাদেশে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন এসএমই ফাউন্ডেশন ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিবস উদযাপন করছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, বিশ্বের ৯০ শতাংশের বেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্পের আওতায় পড়ে, যা বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭০ শতাংশ কর্মসংস্থানের জোগান দেয় এবং বিশ্ব জিডিপিতে এই খাতের অবদান ৫০ শতাংশের মতো।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৭৯ লাখ কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ রয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ৯৬ শতাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান এই খাতে পড়ে এবং জাতীয় জিডিপিতে ২৮ ভাগের মতো অবদান রাখছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প শুধু অর্থনীতির গতি বাড়ায় না, এটি নারীর ক্ষমতায়ন, গ্রামীণ উন্নয়ন এবং টেকসই কর্মসংস্থানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘উদ্ভাবন, স্থিতিস্থাপকতা এবং বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্পের ক্ষমতায়ন’। এই প্রতিপাদ্য এসএমই খাতকে প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও সবুজ শিল্পায়নের মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানায়। বাংলাদেশ ব্যাংক এই বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২৫ সালে এসএমই ঋণ মোট ঋণের ২৫ শতাংশ এবং ২০২৯ সালের মধ্যে ২৯ ভাগে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়ে এই বছর এসএমই খাতের জন্য একটি যুগোপযোগী মাস্টার সার্কুলার দিয়েছে, যা এসএমই খাতকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে যথাযত ভূমিকা রাখবে বলে খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
বর্তমানে খেলাপি ঋণ এসএমইসহ সব ঋণের জন্য একটি বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে। ফি বছর এসএমই শিল্প খাতের ঋণ বিতরণের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ এই খাতের দ্রুত বিকাশকে চিহ্নিত করে। দেশের চলমান মন্দা এবং বিনিয়োগ খরা কাটাতে এসএমই শিল্পে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এই শিল্পে বিনিয়োগের আগে নজরদারি তথা মনিটরিং বিভাগে সমান জোর দিতে হবে। এই খাতের উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ, বাজারসুবিধা এবং ডিজিটাল সহায়তা নিশ্চিত করলেই দেশ আরও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। সবাই মিলে এই খাতকে শক্তিশালী করতে সচেষ্ট হলে একটি টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব।
- বিষয় :
- মতামত