ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

হারানো আত্মবিশ্বাস ফেরানোর উপায় কী

হারানো আত্মবিশ্বাস ফেরানোর উপায় কী

ছবি: ফাইল

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২২ | ০০:১৭ | আপডেট: ২০ জুন ২০২২ | ০০:১৭

'অবদান কোটা'- ফেসবুকের উলঙ্গ দেয়ালে ইদানীং খুব লাইক পাচ্ছে ব্রাকেটবন্দি বাক্যটি। অমুক ক্রিকেটার তমুক করেছিলেন, তার অবদান অবশ্যই আমাদের স্বীকার করতে হবে- ফর্মহীন ক্রিকেটারকে দলে ভেড়াতে এসব ব্যাখ্যা দিয়ে দিনের পর দিন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। 

ইনিংসের পর ইনিংস তাঁরা মাথা নিচু করে ড্রেসিংরুমে ফিরছেন গোল খাওয়া কিপারের মতো করে! কিন্তু এভাবে আর কতদিন? বিরক্ত সাকিব অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম দিন শেষেই কড়া বার্তা দিয়ে রেখেছিলেন- পারফর্ম না করলে যে কাউকে বাদ পড়তে হবে। 

এবার কোচ রাসেল ডমিঙ্গোও অধিনায়কের সুরে জানিয়ে দিলেন, এই ব্যাটিং লাইনআপের আত্মবিশ্বাস তলানিতে এসে ঠেকেছে। বুঝিয়ে দিলেন, এই মানসিকতা নিয়ে খেলতে নামলে ব্যাট আর প্যাডের মাঝে ফাঁকটা থেকেই যাবে। 

'ওদের (ব্যাটারদের) সবার আত্মবিশ্বাস এখন তলানিতে। আমাদের কয়েকজন বড় ক্রিকেটার, মুমিনুল ও শান্ত- ওদের আত্মবিশ্বাস ভীষণভাবে নেমে গেছে। এ মুহূর্তে ব্যাটিং লাইন আপে প্রচণ্ডভাবে আত্মবিশ্বাসের অভাব চোখে পড়েছে।' 

এই দুর্বল আত্মবিশ্বাস থেকে মুক্তির উপায় কী? তা তিনি ক্যামেরার সামনে বলেননি, বলাটাও কৌশলের অংশ নয়। তবে যুগে যুগে ক্রিকেটে যেটা হয়ে আসছে সমাধান সেটাই- 'বিশ্রাম'। আর আরেকটা উপায় হলো আশায় থাকা, খেলে যাও- কোনো না কোনো ম্যাচে রান তো করবেই!

এই হবে-হবে করে মুমিনুল শেষ ৯ ইনিংসের কোনোটিতেই দশের ওপর স্কোর করতে পারেননি। অথচ চার নম্বরের মতো টেস্টের 'পিলার'-এর জায়গায় প্রতি ম্যাচে ব্যাট হাতে নামছেন। তিনে নামা নাজমুল হাসান শান্তর অবস্থাও ভীষণভাবে 'অশান্ত'। তিন বছরের বেশি সময় ধরে নিয়মিত তিনে ব্যাটিং করে যাচ্ছেন। 

'অবদান' ২০২১ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আর ওই বছর জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি করে সেঞ্চুরি। এরপর সতেরো ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি মাত্র একটি। ১১টি ইনিংসে কুড়ির নিচে আউট হয়েছেন। বিশ্বমানের পেসার কিংবা স্পিনার- কারও সামনেই দাঁড়াতে পাচ্ছেন না। শেষ সাত ইনিংসে তাঁর সর্বোচ্চ ১৭। 

'ফেসবুক কোটায়'- এই শান্ত অনেক আগেই বাদ পড়েছেন, কিন্তু 'অবদান কোটায়' এখনও রয়ে গেছেন। একই অবস্থা মুমিনুলের বেলাতেও। টেস্টে দেশের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক, তাঁকে কী করে বাদ দেওয়া যায়? তাঁকে বিশ্রাম দেওয়ার প্রশ্ন আসতেই এক ধরনের অপরাধবোধ কাজ করে অনেকের মধ্যে। কিন্তু এবার অধিনায়ক এবং কোচ ক্যামেরার সামনে তাঁদের দুর্বলতা সাহসিকতার সঙ্গে স্বীকার করেছেন। 

শান্ত ও মুমিনুলের নামটি কোচ আলাদাভাবে উচ্চারণ করলেও তাঁর ইঙ্গিত ছিল লিটন, তামিমদের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচের দিকেও। 'ব্যাটিং মোটেও ভালো হয়নি দুই ইনিংসে। খুব বেশি আলগা আউট হয়েছে। ব্যাটিংয়ে শট সিলেকশনে বাজে সিদ্ধান্ত খুব বেশি ছিল।'

এমনকি সাকিব যেভাবে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে ৬৩ রান তুলেছেন, তাতে প্রশংসাসূচক দুটি বাক্য বলে নিজের চাওয়াটাও জানিয়ে দিয়েছেন। 'সাকিবের ব্যাটিংয়ে সবসময়ই তাড়না দেখা যাবে। তবে আমরা চাই না সে স্লগ করুক, চাই সে ভালো ক্রিকেট শট খেলুক। কখনও কখনও পাল্টা আক্রমণ করতে হয়, কোনো সংশয় নেই তাতে। তবে নিশ্চিত করতে হবে নিজের শেপ ও পজিশন যেন ঠিক থাকে।'

আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকলে কেউ কেউ দ্রুত ৩০-৩৫ রান তুলে পার পেয়ে যাওয়ার চেষ্টায় থাকেন, কেউ আবার বেশি বেশি বল খেলে সেট হওয়ার চেষ্টা করেন। বাংলাদেশ দলের ব্যাটারদের মধ্যে প্রথমের ওই সহজ পথটিই বেশি আকর্ষণীয়। আর সে কারণেই তাঁরা কোচের ভাষায় ওই 'আলগা আউট' হন।

এই দলের ব্যাটাররা জানেন, ৩০ পার করতে পারলেই পরের ম্যাচের টিকিট নিশ্চিত। সে কারণেই সলিডের বদলে স্লগ শট খেলাতেই মুক্তি খুঁজে পেতে চান তাঁরা। অ্যান্টিগা টেস্টে এমন ব্যর্থতার পরও নিশ্চিত দ্বিতীয় টেস্টের একাদশে থাকবেন তাঁরা। হয়তো কোচ সাহসী হয়ে ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করতে পারবেন; কিন্তু কোনোভাবেই 'বিশ্রাম' দেওয়ার ক্ষমতা রাখবেন না। তাই অপেক্ষা শুধু এই ভেবে যে- 'পরের ম্যাচে নিশ্চয়ই রান পাবেন তাঁরা।'

আরও পড়ুন

×